নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারচ্ছে না। ফলে গত এক বছর ধরেই আমানতকারী হারাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। চলিত বছরের প্রথম নয় মাস (জানুয়ারি- সেপ্টেম্বর) সময়ে ৭৯ হাজার জনের বেশি আমানতকারী হারিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
তথ্যমতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে মানুষের কাছে আস্থা আগেই হারিয়ে ফেলেছে। এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এতে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে, কমছে প্রকৃত আয়। এসব কারণে আমানত ও ব্যক্তি আমানতকারীর হিসাব কমেছে। এছাড়া আমানত ও ঋণের ক্ষেত্রে সুদের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়ার কারণেও কমতে পারে বলে তারা জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪২ হাজার ২৭৯ জন। অর্থাৎ চলতি বছরের নয় মাসে আমানতকারীর সংখ্যা কমেছে ৭৯ হাজার ২৮০ জন।
আর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের কার্যরত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার ১৯৬ জন। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে এসব প্রতিষ্ঠান আমানতকারী হারিয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৯১৭ জন। শুধু তা-ই নয়, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান আমানতকারী হারিয়েছে ২৫ হাজার ৭৮২ জন। গত জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতকারীর পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৬১ জন।
তবে আশার দিক হচ্ছে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত কিছুটা বাড়ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এসব প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত বেড়েছে ৩ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। আর তিন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত বেড়েছে মাত্র ৩৭ কোটি টাকা। গত জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত ছিল ৪৪ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। তিন মাসে আমানত বেড়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গত তিন মাসে কোটিপতি আমানতের পরিমাণও কমেছে। তবে একই সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে। তথ্য বলছে, গত জুনে দেশের কোটি টাকার হিসাব ছিল ৯ হাজার ১০৪টি। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৬৫টিতে। অর্থাৎ তিন মাসে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ১৬১টি। তবে এই সময়ে কোটি টাকার হিসেবে অর্থ কমেছে ১২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। গত জুনে কোটি টাকার হিসেবে আমানত ছিল ৩৭ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা।