৯ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব অর্থনীতি সমিতির

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী অর্থবছরে জাতীয় বাজেট প্রকাশের আগে একটি ‘ছায়া বাজেট প্রস্তাব’ দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। ৯ লাখ ১৪ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকার এ বাজেটটি গত বছরের জাতীয় বাজেটের প্রায় তিনগুণ। দেশীয় উৎস থেকে অর্থায়ন ও বৈষম্যহীন মানবিক উন্নয়নের নীতির ভিত্তিতে গতকাল রোববার এ বাজেট ঘোষণা করা হয়।
অর্থনীতি সমিতির সম্মেলন কক্ষে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৭-১৮’ শীর্ষক বাজেট ঘোষণা করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ও ড. জামালউদ্দিন আহমেদ। এ সময় অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, আগে অর্থনীতি সমিতির পক্ষ থেকে বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে সরকারকে পরামর্শ ও প্রস্তাব দেওয়া হতো। কিন্তু তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হতো না। এ জন্য গত কয়েক বছর ধরে বিকল্প বাজেট দিচ্ছি। তিনি বলেন, প্রতি বছর বাজেটে সরকার যে খসড়া দেয় তার ওপর মাসব্যাপী আলোচনা করে সেটি সংক্ষিপ্ত বিল আকারে পাস হয়। কিন্তু খসড়া থেকে কী কী পরিবর্তন হয়েছে, তা কোথাও উল্লেখ করা হয় না।
ছায়া বাজেট প্রস্তাবের সময় উপস্থিত অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগের দুই বছর অর্থনীতি সমিতির পক্ষ থেকে বিকল্প বাজেট দেওয়া হচ্ছে। এবার তৃতীয়বারের মতো বিকল্প বাজেটের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিকে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশ সংবিধানে জনগণকে প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা এখনও বহাল আছে। কিন্তু এখন যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চলছে তা বৈষম্যপূর্ণ। বর্তমানে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যে বা যারাই থাকেন না কেন চালকের আসনে শক্তভাবে বসে আছে তারা, যারা নিজেরা কোনো সম্পদ সৃষ্টি করে না। যারা অন্যের সম্পদ হরণ, লুণ্ঠন, দখল, বেদখল, জরবদখল, আত্মসাৎকরণের মাধ্যমে অনুপার্জিত আয়কারী লুটেরা শ্রেণি বা ‘রেন্ট সিকার’ হিসেবে সরকার ও রাজনীতি ব্যবস্থাকে অধীনস্থ করে ফেলেছে।
দেশে বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে বাজেটে বলা হয়, সরকারি পরিসংখ্যানিক হিসাবে যদিও বলা হচ্ছে দারিদ্র্য ৯ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব অর্থনীতি সমিতির ২২ শতাংশ, কিন্তু বাস্তবে দারিদ্র্যে বহুমুখী মানদণ্ডে দেশের দরিদ্র লোকের সংখ্যা ১০ কোটি ৫০ লাখ। সে হিসাবে দেশের ৬৬ শতাংশ লোক দরিদ্র। এছাড়া দরিদ্রের কাছাকাছি অবস্থায় রয়েছে আরও ১৮ শতাংশ লোক। সব মিলিয়ে দারিদ্র্যের সংখ্যা ৮৪ শতাংশ। এছাড়া নগরায়ণের নামে ‘বস্তিয়ায়ন’ হচ্ছে। নগরায়ণের পাশাপাশি শিল্পায়নও হয়নি; যা হয়েছে তা হলো অনানুষ্ঠানিক খাতের বিস্তৃতি এবং দুর্দশা-বঞ্চনা-বিচ্ছিন্নতা। এসব ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দেশের একটি দুর্বৃত্তায়িত ‘সুপার ধনী’ শ্রেণি গড়ে ওঠেছে। দেশে ধনীর আনুপাতিক সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে, যা নির্দেশ করে তীব্র বৈষম্যের।
এছাড়া বিশ্বায়নের নামে যে মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চলছে, তা মূলত একটি অন্যায্য ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরে বিকল্প বাজেটে বলা হয়, বাজেটে বেশ কিছু মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন আনা জরুরি। নয় লাখ ১৪ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে রাজস্ব আয় থেকে আসবে সাত লাখ ২৫ হাজার টাকা, যা মোট বাজেটের ৭৯ শতাংশ। এছাড়া বাজেটের বাকি ২১ শতাংশ অর্থায়ন ঘটবে সম্মিলিতভাবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব, বিদেশে বসবাসকারী দেশীয় নাগরিকদের বন্ড, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ এবং দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ। বৃহদায়তন এই ঘাটতি বাজেটে বিদেশি কোনো সংস্থা থেকে অর্থায়ন না নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবে জিডিপির পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন, নারী ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন মানব উন্নয়নমুখী খাতে বরাদ্দে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত ছায়া বাজেটের নয় লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে চার লাখ ১১ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকার রাজস্ব আয় এবং পাঁচ কোটি দুই হাজার ৯১৬ কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ করা হয়েছে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০