Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 7:58 pm

স্পন্সরদের শেয়ার কিনতে বাধ্য করতে হবে

পুঁজিবাজার থেকে কোনো কোম্পানিকে চূড়ান্তভাবে তালিকাচ্যুত করার ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারী যারা বাজার থেকে এসব শেয়ার কিনেছেন, তালিকাচ্যুত হওয়ার পর তাদের শেয়ারগুলো সম্পূর্ণভাবে মূল্যহীন হয়ে পড়ে। ফলে তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হন। এ অবস্থায় তাদের সুরক্ষা দিতে হলে তালিকাচ্যুত কোম্পানির যে শেয়ারগুলো তাদের কাছে আছে, সেগুলো স্পন্সরদের কিনে নিতে বাধ্য করতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এবং আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হোসেন, এফসিএ। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজার থেকে কোনো কোম্পানিকে চূড়ান্তভাবে তালিকাচ্যুত করার ক্ষেত্রে একটি সমস্যা রয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারী যারা বাজার থেকে এসব শেয়ার কিনেছেন তালিকাচ্যুত হওয়ার পর তাদের ওই শেয়ারগুলো সম্পূর্ণভাবে মূল্যহীন হয়ে পড়ে। ফলে তারা বড় মাত্রায় ক্ষতির সম্মুখীন হন। এখন কথা হচ্ছে এ অবস্থায় তাদের সুরক্ষা কীভাবে দেওয়া যায়? এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে তালিকাচ্যুত কোম্পানির যে শেয়ারগুলো আছে, সেগুলো স্পন্সরদের কিনে নিতে বাধ্য করতে হবে। আর এটি আমার সময় একটি কোম্পানির ক্ষেত্রে করেছিলাম। ওই কোম্পানির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর নিচে ছিল। কিন্তু আমি সেটি স্পন্সরদের ফেসভ্যালুতে কিনে নিতে বলেছিলাম, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বর্তমানে যে ১৫টি কোম্পানির পুনর্বিবেচনার তালিকা করা হয়েছে এবং তাদের যদি তালিকাচ্যুত করা হয় সে ক্ষেত্রে ওই কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর যদি ফেসভ্যালুর ওপরে থাকে, তাহলে ছয় মাসের দর বিবেচনা করা যেতে পারে। অথবা নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইনে কোনো বিধান আছে কি না স্পন্সরদের শেয়ার কিনে নিতে বাধ্য করার, সেই বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে।
মাহমুদ হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ডিএসই তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, ১৫টি কোম্পানিকে পুনর্বিবেচনার তালিকায় ফেলেছেন। এই পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায়ে ডিএসই কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে, কী কারণে তারা ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না। তালিকাভুক্ত প্রবিধানের ৫১(এ) ধারাতে বলা আছে কোনো কোম্পানি পাঁচ বছর লভ্যাংশ না দিলে সেটিকে তালিকাচ্যুত করা যেতে পারে। এখন কথা হচ্ছে, এই ১৫টি কোম্পানিকে যদি তালিকাচ্যুত করা হয়, তাহলে যাদের কাছে এসব কোম্পানির শেয়ার আছে তাদের কী অবস্থা হবে? তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে? কর্মক্ষমতাহীন কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করার প্রক্রিয়া অবশ্যই একটি ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ আমরা সবাই চাই বাজারে ভালো কর্মক্ষমতাসম্পন্ন কোম্পানিগুলো থাকুক। তাছাড়া পৃথিবীর সব জায়গাতেই এমন তালিকাচ্যুত করার বিধান রয়েছে। তবে যে প্রক্রিয়ায় এটি করা হচ্ছে, তা যথাযথভাবে করা হচ্ছে কি না, সেটিই আসলে দেখার বিষয়। আর একটি বিষয় হচ্ছে, এই যে তালিকাচ্যুত করার চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার আগে ডিএসই কী রকম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম রেখেছে এবং বিএসইসি কোম্পানির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে কী রকমভাবে কথা বলছে, সেটিও চিন্তার বিষয়। যদিও দেশের অর্থনীতির সঠিক প্রতিফলন পুঁজিবাজারে হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বোচ্চ পর্যায় ও রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে আমরা সবাই জনগণকে পুঁজিবাজারে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাই। কাজেই বিনিয়োগকারীরা যখন বাজারে এসে জানলেন আগে দুটি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে এবং বর্তমানে আরও ১৫টি কোম্পানিকে পুনর্বিবেচনার তালিকায় রাখা হয়েছে এবং তালিকাচ্যুত করার সম্ভাবনাও আছে, তখন ওইসব বিনিয়োগকারীর নিরাপত্তা কোথায়? এখানে শুধু তাদের নিরাপত্তা নয়, সামগ্রিক বাজারের ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ যখন একজন বিনিয়োগকারী জানতে পারছে ১০-২০ টাকায় একটি শেয়ার কিনে পরে সেটি আর বিক্রি করতে পারছে না, তখন বাজারের প্রতি ব্যাপক আস্থাহীনতার সৃষ্টি হবে।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম