মূলধন স্বল্পতায় মার্চেন্ট ব্যাংক

পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনেক সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংকের মূলধন ২৫ কোটি টাকার নিচে। অর্থাৎ মূলধন স্বল্পতার কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারছে না তারা। ১০ থেকে ১২টি ব্যতীত অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংকই পুঁজিবাজারে সক্রিয় নেই। তাই মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মূলধন আরও বাড়াতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এনবিইআরের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ এবং পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহজাহান মিনা।
আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, দেশের অর্থনীতির অনেক উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা রয়ে গেছে। বিশেষ করে পুঁজিবাজার, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা বেশি দেখা যাচ্ছে। গুটিকয়েক ব্যক্তি পুঁজিবাজার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করে ম্যানুপুলেট করছে। ফলে সাধারণ জনগণ বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নেই এবং বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আস্থা নেই। বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থা ফিরে পেতে হলে ইনসাইডার ট্রেডিং, কারসাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।
এম শাহজাহান মিনা বলেন, কয়েক বছরে দেশের অর্থনীতির সূচক বেশ ইতিবাচক ছিল। সরকার বিভিন্ন ধরনের মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে উন্নয়নের একটি ভালো দিক এবং এর ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে, সেক্ষেত্রে দেশে বিশাল উন্নয়ন হবে। তবে দেশে বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতে। ব্যাংক খাতে এ বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কারণ ব্যাংক থেকে যে উদ্দেশ্যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান টাকা নিচ্ছে, তার সঠিক ব্যবহার না করে বিভিন্নভাবে টাকা বিদেশে পাচার করছে এবং সঠিক সময়ে সে অর্থ পরিশোধ করছে না। আবার এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে টাকা নিচ্ছে। ফলে এক ব্যাংকের টাকা অন্য ব্যাংকে চলে যাচ্ছে। এখানে আসলে সুশাসনের অনেক অভাব রয়েছে। ফলে ব্যাংক খাতে প্রতিনিয়ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার যদি এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতো, তাহলে ব্যাংকিং ও উন্নয়নের জন্য যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে, সেটি আরও আগে বাস্তবায়ন হতো।
চলতি বছরের শেষদিকে দেশে জাতীয় নির্বাচন। অর্থাৎ এ নির্বাচনে যে সরকারই আসুক, তাকে সর্বপ্রথম সুশাসনের প্রতি নজর দেওয়া উচিত। সরকার ২০১০ সালে ধসের পর পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে; কিন্তু সেভাবে বাজারের উন্নয়ন হয়নি। দুঃখজনকভাবে বলতে হয়, পুঁজিবাজারে যে নতুন নতুন নিয়ম-কানুন প্রবর্তন করা হয়েছে, তার সুফল বিনিয়োগকারীরা এখন পর্যন্ত পাচ্ছেন না। বর্তমানে পুঁজিবাজারের যে অবস্থা, এটিকে স্বাভাবিক বলা যায় না। তাই ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আস্থা ফিরে পাচ্ছেন না। কারণ বাজারের কোনো ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে না। গত বছর পুঁজিবাজার বেশ ইতিবাচক অবস্থানে ছিল; কিন্তু চলতি বছর তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে লেনদেন ঘুরপাক খাচ্ছে। এটি আসলে দেশের অর্থনীতির তুলনায় অতি নগণ্য। দেশের অর্থনীতির আকার অনুযায়ী পুঁজিবাজারের লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা হওয়া উচিত। আবার ২০১০ সালের পর প্রায় ১০০ কোম্পানি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে; সে অনুপাতে ট্রেডিং ভলিউম বাড়েনি। অর্থাৎ পুঁজিবাজার যেভাবে সম্প্রসারিত হওয়ার কথা, সেভাবে হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনেক সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর। অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংকের মূলধন ২৫ কোটি টাকার নিচে। অর্থাৎ মূলধন স্বল্পতার কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারছেন না তারা। আবার ১০ থেকে ১২টি ব্যতীত অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংকই পুঁজিবাজারে সক্রিয় নেই। তাই মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আরও মূলধন বাড়াতে হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০