দেশের পুঁজিবাজারে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে ডিভিডেন্ড পলিসি। আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার লক্ষ করলে দেখা যায়, কোম্পানিগুলো নিজেদের সম্প্রসারণ করতে চাইলে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য যে পরিমাণ বোনাস ইস্যু করে, তার বিপরীতে ক্যাপিটাল রূপান্তর করে দেয়। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারে বিপরীত চিত্র দেখা যায়। এখানে বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস শেয়ার দেওয়া হয়। কোম্পানির স্পনসররাও নামে-বেনামে শেয়ার উপহার দেয়। যেহেতু এটির কোনো হিসাব দিতে হবে না, তাই স্পনসররা অন্য অ্যাকাউন্টে শেয়ার স্থানান্তর করে। পরে ধীরে ধীরে সেগুলো বিক্রি করে দেয়। স্পনসরদের কাজ হচ্ছে, ব্যবসা বৃদ্ধি করে কীভাবে কোম্পানিকে লাভজনক করা যায়, তার চেষ্টা করা। এছাড়া কীভাবে ব্যবসার জন্য ফান্ড সংগ্রহ করা যায়, সেটি দেখা। কিন্তু সেটি না করে স্পনসররা শেয়ার ব্যবসায় মনোযোগী হয়ে পড়ে। এটি মোটেই কাম্য নয়। বিষয়গুলো বিএসইসিকে কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
মোশতাক সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও মোহাম্মদ আলী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল।
মোহাম্মদ হেলাল বলেন, যিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন, তিনি সরকারের গত মেয়াদে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। এবার দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের। আবার তিনি একজন চার্টার্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টও। ফাইন্যান্সিয়াল ক্যারিয়ারে প্রতিষ্ঠিত এবং পুঁজিবাজার সম্পর্কে তার ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। কথা হচ্ছে, পুঁজিবাজার গতিশীল করতে হলে কোম্পানিগুলোকে কিছু সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এজন্য কিছু কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। প্রথমত, প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতিগত পরিবর্তন আনা, বিশেষ করে ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে। দ্বিতীয়ত, ফাইন্যান্সিয়াল যে নিয়ম-নীতিগুলো রয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা। তৃতীয়ত, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজার এবং আরও বিভিন্ন খাতের যেসব নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানি রয়েছে, সেগুলোর সুশাসন নিশ্চিত করা। এসব বিষয়ে সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর সম্প্রসারণ হবে এবং সেসব কোম্পানির আয় ও ডিভিডেন্ড ইল্ড বৃদ্ধি পাবে। এতে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হয়ে পুঁজিবাজারে আসবেন। মূল বিষয় হচ্ছে, পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীর আস্থা। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থা ফিরে না এলে বাজার স্থিতিশীল অবস্থানে যাবে না।
তিনি বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে ডিভিডেন্ড পলিসি। আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার লক্ষ করলে দেখা যায়, ওইসব পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলো যদি নিজেদের সম্প্রসারণ করতে চায়, তাহলে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য যে পরিমাণ বোনাস ইস্যু করে, তার বিপরীতে ক্যাপিটাল রূপান্তর করে দেয়। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজারে বিপরীত চিত্র দেখা যায়। দেশের পুঁজিবাজারে বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস শেয়ার প্রদান করা হয়। শেয়ারহোল্ডাররাও নামে-বেনামে শেয়ার উপহার দেন। যেহেতু এটির কোনো হিসাব হবে না, তাই স্পন্সররা অন্য অ্যাকাউন্টে শেয়ার স্থানান্তর করে। পরে ধীরে ধীরে শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেয়। স্পন্সরদের কাজ হচ্ছে ব্যবসা করা, কীভাবে ব্যবসার জন্য ফান্ড সংগ্রহ করা যায় এবং ওই প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ নেওয়া যায়। কিন্তু সেটি না করে স্পনসররা শেয়ার ব্যবসায় মনোযোগী হয়ে পড়ে। এটি মোটেই কাম্য নয়। বিষয়গুলো বিএসইসিকে কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে এবং যারা এ কাজগুলো করে, তাদের অবশ্যই বড় ধরনের শাস্তি প্রদান করতে হবে।
ড. মোহাম্মদ হেলাল বলেন, গত দুই যুগ ধরে যদি অর্থনীতির সূচকগুলো দেখি, তাহলে দেখা যাবে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সামনে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার আট শতাংশে যাওয়া। আবার ২০৩০ সালে দেশের অর্থনীতি বিশ্বের ২৩তম হবে। কথা হচ্ছে, স্বপ্ন দেখা ভালো। যদি সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হয়, সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সব খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিবাজারে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পুঁজিবাজার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এসবের উন্নয়ন করা না গেলে ২০৩০ সালে ২৩তম দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে।
আবার কয়েক বছর ধরে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কীভাবে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। কারণ, বেসরকারি বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিনি আরও বলেন, দেশে অনেক সরকারি, বেসরকারি ও বহুজাতিক ভালো মানের কোম্পানি রয়েছে। কিন্তু ওইসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসছে না। কারণ, পুঁজিবাজারে আসার মতো তেমন সুযোগ-সুবিধা তারা পাচ্ছে না।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ