সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: ১৬২ কোটি টাকা ঋণের দায়ে লিজেন্ড হোল্ডিংস লিমিটেডের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তোলে ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা। গত ৩১ জানুয়ারি এ নিলামের দিন ধার্য ছিল। তবে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির সম্পত্তি কিনতে কোনো ক্রেতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেনি।
ব্যাংক সূত্র জানায়, জাহাজ ভাঙা ব্যবসার প্রয়োজনে লিজেন্ড হোল্ডিংস লিমিটেড ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করে। কিন্তু ব্যবসায় সফল না হওয়ায় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও ব্যর্থ হওয়ায় মামলা করে ব্যাংক। এতে সাতজনকে বিবাদী করা হয়। তারা হলেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবদুল হাই, নিলুফার আকতার হাই, ডা. রওশন আক্তার, সৈয়দা ফাতেমা নার্গিস, সৈয়দা হাসনা আক্তার, সৈয়দা খাদিজা আক্তার ও সৈয়দা
শাহেদা আক্তার। ওই মামলায় বিবাদীদের বন্ধককৃত মোট ১৮ একর ৫৬ ডেসিমল জমি
গত ৩১ জানুয়ারি নিলামে বিক্রির দিন নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে শুধু ৬৫ ডেসিমল জমি শহরের পতেঙ্গা মৌজায় আর বাকিগুলো হাটহাজারী উপজেলার জঙ্গল উদালিয়ায় অবস্থিত। বারবার তাগাদার পরও ঋণের ১৬২ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির বন্ধকি সম্পদ নিলামে তোলা হয়।
ন্যাশনাল ব্যাংকের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার
সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক নিজাম আহমদ এ বিষয়ে শেয়ার বিজকে বলেন, ঋণ সুবিধা গ্রহণ করলেও প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন
ধরে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করছে না।
বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও ঋণ
পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তুলেছিলাম। কিন্তু কোনো আগ্রহী ক্রেতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ না করায় এ সম্পত্তি বিক্রি হয়নি। তবে এ সম্পদ ব্যাংকের হেফাজতে আছে। পাশাপাশি মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো সাড়া নেই তাদের। তিনি আরও বলেন, এটি একটি বিচারধীন মামালার বিষয়, এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারছি না। পাশাপাশি গ্রাহকের
নিরাপত্তার স্বার্থও আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে কয়েক মাস ধরে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বন্ধ রেখেছে লিজেন্ড হোল্ডিংস লিমিটেড। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় সরিয়ে নেওয়া হয়। শিপইয়ার্ড ব্যবসার পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানের চট্টগ্রামের হালিশহরের কয়েকটি পোশাক কারখানা ও সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ড ছিল। এ শিপইয়ার্ড লোকসানের দায়ে বন্ধ হলে অন্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে লেনদেন থাকা ব্যাংক, পাওনাদার, গ্রাহক ও নিয়োজিত শ্রমিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাওনাদার বলেন, সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন তাদের দেখা পাই না। পাওনা টাকা ফেরত
পাব কি না, তা জানি না। শুধু তিনি নন, পাওনা টাকার সন্ধানে আগ্রাবাদের প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে প্রতিদিন চার-পাঁচজন লোক খোঁজ নিতে আসেন। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় খোঁজখবর নিতে পারেন না তারা।
ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ফটিকছড়ির বাসিন্দা আবদুল হাই। প্রথম দিকে ব্যবসা করে করে ভালো মুনাফাও পান তিনি। বছর তিনেক আগে শিপইয়ার্ডের ব্যবসায় বিপুল লোকসানের দায়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এর পর থেকে আস্তে আস্তে আড়ালে চলে যান লিজেন্ড হোল্ডিংসের মালিক আবদুল হাইসহ অন্য পরিচালকরা। পাশাপাশি এ কোম্পানির মালিকানাধীন অন্য প্রতিষ্ঠান ও কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে অন্যতম শীর্ষ শিল্প গ্রুপের মেয়ের জামাতা হন আবদুল হাই। বর্তমানে তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন। ফলে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত লোকসানে পড়ায় বেশিরভাগ কর্মকর্তাদের ছাঁটাই করা হয়। অফিসে পাওনাদারদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় মালিকরা কেউ এখানে আসেন না। মাঝেমধ্যে একজন কর্মচারী অফিস চালু রাখেন সীমিত সময়ের জন্য।
এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও
ব্যবস্থাপক নিজাম আহমদ বলেন, মাঝে শুনেছিলাম তিনি দেশে বাইরে গেছেন। কিন্তু ফিরে আসছে কি না, তা জানি না। কোন দেশে গিয়েছেন তাও নিশ্চিত নই।
লিজেন্ড হোল্ডিংসের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে ক্রেতা পায়নি ন্যাশনাল ব্যাংক

Add Comment