সেমিনারে বক্তারা: এসডিজি ব্যবসার নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের সম্ভাবনার পাশাপাশি নানা চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ ব্যবসার জন্য নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করছে। এ জন্য সরকারি উদ্যোগের চেয়েও বেসরকারি খাতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে ব্যবসার ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

গতকাল বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এসডিজি থেকে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়িক সম্ভাবনার কৌশল নির্ধারণ’ বিষয়ক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

ডিসিসিআই’র সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম বিশেষ অতিথি ছিলেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান।

সেমিনারে ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ও এসডিজিবিষয়ক কমিটির উপদেষ্টা আসিফ ইব্রাহীম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী কান্ট্রি ডিরেক্টর খুরশেদ আলম, ঢাকা চেম্বারের পরিচালক আকবর হাকিম, খন্দকার আবদুল মোক্তাদির, চেম্বার সদস্য আতিক-ই-রাব্বানী, এমএস সিদ্দিকী, অক্সফামের প্রাইভেট সেক্টর কো-অর্ডিনেটর মো. আনিসুর রহমান চৌধুরী, আইসিসি-বাংলাদেশের মহাসচিব আতাউর রহমান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরী অংশ নেন।

এসডিজিবিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেসরকারি খাত ও সরকারের অংশীদারিত্ব যথাক্রমে ৭০ শতাংশ এবং ৩০ শতাংশ। তাই এ লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ একান্ত অপরিহার্য। লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার কৌশলপত্র প্রণয়নের কাজ করছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে। এজন্য খাতভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন প্রয়োজন।

সভাপতির বক্তব্যে আবুল কাসেম খান বলেন, বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি সৃষ্টি হয়েছে। এখন এক হাজার ৪৬৫ ডলার মাথাপিছু আয়। ফলে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে বাংলাদেশ। এখন এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো ব্যবসায় নতুন খাত তৈরির সম্ভাবনা জাগিয়েছে। এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে ৭, ৮, ৯, ১২, ১৪ এবং ১৭ নম্বর সরাসরি ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত, যা বেসরকারি খাতের জন্য আশাব্যঞ্জক। এজন্য সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ এবং কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর বাণিজ্য বৃদ্ধি, আঞ্চলিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং পিপিপির কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বিগত কয়েক দশক যাবৎ আমরা সারা বিশ্বে বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক অরাজকতা লক্ষ্য করছি। তিনি সত্যিকার অর্থে দারিদ্র্য বিমোচনে বর্তমানে ব্যবহƒত উন্নয়নের মডেলগুলো সংস্কারের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য কমাতে হবে। তিনি সামাজিক সেবা খাতে নতুন নতুন ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য এনজিওদের প্রতি আহ্বান জানান।

ড. শামসুল আলম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলোÑঅর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়ন, সামাজিক ঐক্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনের বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এসডিজিতে উল্লিখিত ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার আলোকে কৌশলপত্র প্রণয়ন, ব্যবসায়িক খাতগুলোকে বিন্যাসের জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, যার ভিত্তিতে সরকার আইন সংস্কার ও নীতিমালা প্রণয়নে সহায়তা প্রদান করবে। ড. শামসুল আলম আরও জানান, দেশের মোট বিনিয়োগে বেসরকারি খাত ও সরকারের অবদান যথাক্রমে ৭৮ ও ২২ শতাংশ।

মূল প্রবন্ধে আসিফ ইব্রাহিম বলেন, প্রাইস ওয়াটার হাউজ কুপারসের তথ্যমতে, সারা বিশ্বে ৭১ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এসডিজিতে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং ১৩ শতাংশ এসডিজির প্রভাব নির্ধারণে কৌশলপত্র প্রস্তুত করেছে। এসডিজির ফলে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ, কাগজ ও পাল্প, পানিশোধন, খাদ্যবর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০