মাছ চাষে চাই আদর্শ পুকুর

 

মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে পুকুরের পরিবেশ উন্নয়ন ও পানির গুণাগুণ বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের আয়োজন এর নানা দিক নিয়ে

ছোট ও অগভীর জলাধার, যাতে পর্যাপ্ত পানি থাকে, যে পানি ঢেউ খেলতে পারে, বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণিকণার উপস্থিতি রয়েছে এমন জলাশয়ই পুকুর। তবে সব পুকুরে মাছ চাষ করা যায় না। কারণ, সব পুকুরই আদর্শ নয়। যে পুকুরে মাটি ও পানির গুণাগুণ এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা মাছের অনুকূলে থাকে, সে ধরনের পুকুর আদর্শ। এমন পুকুরের ওপর মাছের উৎপাদন ও জীবন ধারণ নির্ভরশীল।
আদর্শ পুকুরের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন:
# পানি ধরে রাখার ক্ষমতা
# মাছ অনুপাতে স্থান ও গভীরতা
# আলো-বাতাস প্রবাহের সুযোগ
# রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের অনুপস্থিতি
# প্রজনন ও বংশ বিস্তারে সহায়ক সুবিধা
# প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের উপস্থিতি।
পুকুরের আকৃতি বা গঠন, উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ দিক। আদর্শ পুকুরের আকৃতি এমন হওয়া উচিত, যাতে জমির ব্যবহারিক দিকটিও সফল হয়। মূলত পুকুরের আকার সবদিকে সমান হওয়াই উত্তম। এমন বড় পুকুরের পাড় লম্বাভাবে খাড়া হলে এতে বায়ু প্রবাহ ও পরিবেশের ক্ষয়রোধ করা সহায়ক হয়।
মাছ ছাড়াও পুকুরে নানা ধরনের উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীও অবস্থান করে। এ উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করে পুকুরের উৎপাদন-শক্তি সৃষ্টি করে। এগুলো আদর্শ পুকুরের জৈবিক উৎপাদক। তবে কিছু জীববৈচিত্র্য অনেক পুকুরে দেখা যায়, আবার কিছু খালি চোখে দেখা যায় না। কিছু ভাসমান ও কিছু তলদেশে অবস্থান করে। তবে পুকুরের এসব জলজ আগাছা ও উদ্ভিদ পিএইচ অর্থাৎ ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলি কিছুটা প্রভাবিত হয়ে থাকে। যেসব পুকুরে খুদিপানা, টোপাপানা, পদ্ম প্রভৃতি থাকে, সেসব পুকুরে পিএইচের মান ছয় দশমিক আট থেকে সাত দশমিক তিন লক্ষ করা যায়। কিন্তু যেসব পুকুরে এসব থাকে না, এর পিএইচ সাত দশমিক চার থেকে আট পর্যন্ত হতে পারে।
আদর্শ পুকুর আকারে ছোট কিংবা বড় হতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই সফলভাবে মাচ চাষ করা যায়। তবে মাছ চাষের জন্য নতুন পুকুর খনন, পুকুরের আকার, জৈবিক অবস্থা, স্থান-পরিবেশ ও আর্থিক মূল্যায়নের ওপর ভালো মাছ চাষ অনেকাংশে নির্ভর করে। মূলত কোন জাতের মাছ চাষ করা হবে ও কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে পুকুরের আকার। এছাড়া আংশিকভাবে ভূপ্রকৃতি বা মাটির গঠন, মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা প্রভৃতির ওপরও নির্ভর করে পুকুরের আকার কেমন হবে।

পুকুরের পানির গুণাগুণ
পুকুরে মাছ চাষের জন্য পানিই মাছের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। পানি কেবল মাছের সফল চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়কই নয়, বরং খাদ্যের মৌলিক উপাদানও তৈরি করে। তাই মাছ চাষকৃত পুকুরের পানির গুণাগুণ থাকা আবশ্যক। পানির গুণাবলি দুই ভাবে ভাগ করা যায়।

ভৌত গুণ
পুকুরের গভীরতা, তাপমাত্রা, আলো ও ঘোলা প্রভৃতি পানির ভৌত গুণ। একটি পুকুরের গভীরতা ভৌত গুণাগুণকে প্রভাবিত করে। অগভীর পুকুরে সূর্যের আলো তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছে পানির সকল স্তর সচল রাখে। এতে উৎপাদন শক্তি বৃদ্ধি পায়। তবে এক মিটারের কম গভীর হলে মাছ ও অন্যান্য প্রাণিকণা টিকে থাকা অসম্ভব। দুই মিটার গভীর পুকুর সবদিক থেকেই উপযুক্ত। এমন গভীরতা পুকুরে জৈবিক শক্তি গতিশীল হয়। এদিকে, বেঁচে থাকা ও গতি সঞ্চারের জন্য মাছের তাপের প্রয়োজন হয়। মাছের পরিপাক ও দৈহিক ক্রিয়া সম্পাদনে, খাদ্য গ্রহণে, প্রজনন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে তাপের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাপ বৃদ্ধির ফলে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায় ও তাপের অসামঞ্জস্যতার কারণে পানির উৎপাদন হারের বৃদ্ধি কম হয়। তাই তাপ সহ্য করার একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। তেলাপিয়া জাতীয় মাছ আট ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও কম তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে। তবে প্রজননে ২১ থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রয়োজন হয়। আবার রুই জাতীয় মাছের জন্য ১৮ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপের প্রয়োজন হয়। তাই যে মাছের যেমন তাপ প্রয়োজন সেই তাপের পরিবেশে পুকুর তৈরি করতে হবে। পানির জৈবিক প্রক্রিয়ার জন্য আলোর ভূমিকা রয়েছে। পানিতে আলোর প্রবেশ পুকুরের পারিপার্শ্বিকের অবস্থার উপর নির্ভর করে। পানিতে যে উদ্ভিদ উপাদান থাকে তা আলোর সংস্পর্শে এসে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করে। এ অক্সিজেন পানিতে মিশ্রিত হয় ও শ্বাসপ্রক্রিয়ায় মাছ তা গ্রহণ করে। যে পুকুরের তলদেশ পর্যন্ত আলো পৌঁছাতে পারে না, সে পুকুরের অনেক অংশ অনুৎপাদক থেকে যায়।

রাসায়নিক গুণ
পানিতে নানা গ্যাসীয় পদার্থের অবস্থান পানির রাসায়নিক গুণাবলি নির্দেশ করে। এরমধ্যে পিএইচ গুরুত্বপূর্ণ। এটি পানির হাইড্রোজেনের পরমাণুর উৎস বিন্দু। পানির অন্যান্য গুণের ন্যায় পিএইচ পুকুরে থাকা প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন প্রক্রিয়া উন্নত করে। পানির নিরপেক্ষ পিএইচ মান সাত। এর মান সাতের নিচে হলে পানি অ্যাসিড বা অম্লীয় বেশি হলে ক্ষারীয় ধর্মী নির্দেশ করে। দ্রবীভূত গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গুরুত্বপূর্ণ। পানিতে মাছের জীবন ধারণ ও সঞ্চালনের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় যে অক্সিজেন থাকে মাছ ফুলকার সাহায্য তা গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। কার্বন ডাই-অক্সাইড মাছের খাদ্য উৎপাদনের জন্য এটি থাকা আবশ্যক। তবে এর পরিমাণ বেড়ে গেলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। এছাড়া পানির সামগ্রিক ক্ষারত্ব রাসায়নিক গুণকে প্রকাশ করে। পুকুরের পানিতে ৪০ শতাংশ সামগ্রিক ক্ষার থাকা ভালো। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ক্ষার খুব সহায়ক। পানিতে জৈব ও অজৈব বা রাসায়নিক উভয় পদার্থ মিশ্রিত থাকে। দ্রবীভুত রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসব পদার্থের উপস্থিতি ও দ্রবণের মাত্রা পানির রাসায়নিক ঘনত্ব ও প্রাচুর্যকে প্রভাবিত করে।

পুকুরের শ্রেণিবিভাগ

বাংলাদেশে ছোট, বড়, গভীর ও অগভীর বা গোলাকার যে পুকুরগুলো রয়েছে, সেগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন:

উৎপত্তির ভিত্তিতে তৈরি হওয়া পুকুর
# প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া উৎপত্তি জলাশয়গুলো পুকুর হিসেবে বিবেচিত
# সৃষ্ট ক্ষুদ্রাকার অগভীর পুকুর
# খনন, সংস্কার ও উন্নয়ন তৎপরতার ফলে সৃষ্ট পুকুর।

পানি প্রবাহের বৈশিষ্ট্যের কারণে
# বেগবান পুকুর
# বৃষ্টির জলাধার
# ছোট নদীবেষ্টিত পুকুর।

অবস্থান ও উদ্দেশ্যগত কারণে তৈরি
করা পুকুর
# গ্রামীণ পুকুর
# বসতবাড়ির পুকুর
# সেচ পুকুর
# গহীন পুকুর
# ডোবা বা পাগাড়

পানি অবস্থানের মেয়াদকরণ পুকুর
# বাৎসরিক পুকুর (যে পুকুরে বছরব্যাপী পানি থাকে)
# মৌসুমি পুকুর (যে পুকুরে চার থেকে ছয় মাস পানি থাকে)

পানির বর্ণভেদে পুকুর
# সবুজ পুকুর (ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর যথাযথ উপস্থিতি)
# বাদামি পুকুর (ক্ষুদ্র উদ্ভিদ অপেক্ষা ক্ষুদ্র প্রাণীর উপস্থিতি বেশি)
# পরিষ্কার পুকুর (ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবস্থান মোটামুটি থাকে)
# বর্ণহীন পুকুর (ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী নেই, তবে তলদেশে ঝাউগাছ-জাতীয় থাকে)
# ঘোলাটে পুকুর (পানিতে মাটি-জাতীয় পদার্থ মিশে থাকে; কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী তেমন থাকে না)
পুকুরকে নিষ্কাশনযোগ্য বা নিষ্কাশনযোগ্য নয় এমনভাবেও ভাগ করা যায়। নিষ্কাশনযোগ্য পুকুরের আকার ও গভীরতা গ্রহণযোগ্যতার মধ্যে থাকে। কিন্তু নিষ্কাশনের অযোগ্য পুকুর স্বভাবত বড় ও গভীর হয়ে থাকে বলে নিষ্কাশন করা সম্ভব হয় না।
ভূপৃষ্ঠে পুকুরের অবস্থান, ভৌগোলিক বিবর্তন ও পরিবেশগত কারণেও পুকুরকে শ্রেণিবিভাগ করা হয়। যেমন

রেণু পোনার পুকুর বা আঁতুড় পুকুর

নবজাতক শিশু প্রতিপালনের আঁতুড়ঘরের মতোই আঁতুড় পুকুর। যে পুকুরে মাছের ডিম পোনা বা রেণু পোনা লালন-পালন করা হয়, সেই পুকুর আঁতুড় পুকুর হিসেবে পরিচিত। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, পুকুর ছোট ও অগভীর হয়। গ্রীষ্মকালে ছোট ও অগভীর ডোবা বা খাদগুলোকে আঁতুড় পুকুর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ পুকুরে পোনার চাষ স্বল্পমেয়াদি হয়ে থাকে। ডিম বা রেণু পোনা ১৫ থেকে এক মাস পর্যন্ত পালন করে দুই থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার আকারের বড় করে উপযুক্ত করা হয়।

চারা পুকুর

চারা পুকুর আকারে অপেক্ষাকৃত বড় হয়। বছরে দুই থেকে তিন মাস পানি থাকে এমন পুকুরগুলো চারা পুকুর হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আঁতুড়পুকুরের ধানি পোনা বাছাই করে চারা পুকুরে ছাড়া হয়। চারা পুকুরে দুই থেকে তিন মাস পোনা প্রতিপালন করে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চারা পোনা তৈরি করা হয়।

মজুত পুকুর

মজুত পুকুরই হচ্ছে মাছ চাষের প্রধান পুকুর। চারা পুকুর থেকে চাষযোগ্য পোনা বাছাই করে মজুত পুকুরে ছাড়া হয়। খাওয়ার উপযোগী বা বাজারে বিক্রির উপযোগী করা পর্যন্ত মজুত পুকুরেই রাখা হয়। এ পুকুর বড় ও গভীর হয়ে থাকে। যে কোনো বড় জলাশয়ে পোনা ছেড়ে পূর্ণ আকারের মাছ পরিণত করা হলে তাকে মজুত পুকুর হিসেবে গণ্য করা হয়। এ পুকুরে ব্যবস্থাপনা ও চাষের সুবিধার জন্য মজুত পুকুরের আকার ও গভীরতার একটি নির্দিষ্ট পরিমাপ থাকা প্রয়োজন।

ডিম ফোটানোর পুকুর

ডিম ফোটানোর পুকুর মজুতং পুকুরের পাশেই স্থাপন করা হয়। এ পুকুর অনেকটা আঁতুড় পুকুরের মতোই, তবে ছোট। এ পুকুরের তলায় পলিথিন কাগজ বা মোটা কাপড় বিছিয়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক উপায়ে প্রজননকৃত নিষিক্ত ডিম বা সদ্যজাত ডিম-পোনা উৎস থেকে সংগ্রহের পরপরই এ পুকুরে রাখা হয়। পুকুরে মাত্র দুই থেকে তিন দিন প্রতিপালন করে আঁতুড় পুকুরে স্থানান্তর করা হয়। বলা যায়, ডিম থেকে পোনা তৈরি করা হয় সে পুকুরকে ডিম ফোটানের পুকুর বলা হয়।

সঠিক পদ্ধতিতে পুকুরের উন্নয়ন
নানা কারণে পুকুরের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টি কিংবা অতিরিক্ত খরা পুকুরের মাটি ও পানির ভারসাম্য বিনষ্ট করে। এসব প্রতিকূল অবস্থা দূরে ঠেলে পুকুরের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের ওপর মাছ চাষের সাফল্য নির্ভর করে। তাই পুকুরের উৎপাদনশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। দেখে নিতে

পারেন এমন কয়েকটি পদ্ধতি:
# ঘোলা পানি মাছ চাষের উপযোগী নয়। লাল মাটি পুকুরের পানি নষ্ট করে। ফলে মাছের উৎপাদন অনেকটা কমে যায়। তাই অতিরিক্ত ঘোলাটে ভাব দূর করতে প্রতি শতাংশ হিসেবে এক দশমিক পাঁচ কেজি চুন অথবা এক দশমিক দুই কেজি জিসান সাত দিন পরপর তিনবার ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঘোলার পরিমাণ অনেকটা কমে আসবে এবং পুকুরের স্বাভাবিকতা বজায় থাকবে। গভীর তলদেশে বিচরণ করে এমন ধরনের মাছ (কার্প, মৃগেল) লাল মাটিতে চাষ করা উচিত নয়। কারণ, এসব মাছ পুকুরের তলদেশে খাদ্যের সন্ধান করে। ফলে পানি আরও ঘোলাটে হয়ে যায়।
# মাছ উৎপাদনের জন্য অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। এজন্য পানি সুষ্ঠু হওয়া জরুরি। অতিরিক্ত বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলের মাটির চুন বা ক্যালসিয়াম ধুয়ে এসে পুকুরের পানিতে পড়লে অম্লত্ব বাড়তে পারে। এছাড়া পুকুরের মাটিতে লৌহের অভাব থাকলে অথবা লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেলে পানি ক্ষারীয় হতে পারে। এক্ষেত্রে চুন ব্যবহার করে পানির অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা যেতে পারে।
# বালি মাটিতেও পুকুর তৈরি করে মাছ চাষ করা যায়। বালি পুকুরে দীর্ঘদিন জৈবসার বেশি মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। এতে ক্রমান্বয়ে বালির ওপর প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এক ধরনের সবুজ স্তর জমাট বাঁধে। পরে ধীরে ধীরে উর্বর হতে থাকে। তাছাড়া তলদেশের বালির স্তর ঢেকে দেওয়ার জন্য বাইরের পলিযুক্ত উর্বর মাটি বিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এভাবে বালি পুকুর মাছ চাষের উপযোগী করা যায়।
# অতিরিক্ত শীত ও গ্রীষ্মে মাছের জৈবিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। পুকুরে এমন পরিবেশে মাছ রক্ষায় পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে উন্নীত করা যেতে পারে। অতিরিক্ত তাপ থেকে মাছ রক্ষার জন্য পুকুরের গভীরতা বাড়াতে হবে। তাহলে তাপ কমে আসবে। পুকুরের এক পাশে কিছু ভাসমান উদ্ভিদ রেখেও তাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
# পুকুরের চার পাশে বড় গাছপালার ডালপাতা পুকুরের পানি চুইয়ে পড়ে। লাভজনক হলেও কখনও কখনও পুকুরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা। অতিরিক্ত ছায়ার কারণে সূর্যের আলো পুকুরের পানিতে প্রবেশে বাধা পায়। এছাড়া গাছের পাতা অব্যাহত পচনে পানিতে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এ অবস্থা থেকে পুকুরকে উন্নত রাখতে বেড়ে যাওয়া গাছের ডালপালা কেটে ফেলতে হবে। যেসব গাছের পাতা বেশি ঝরে, সেসব গাছ না লাগানোই ভালো।
# একাধিক প্রজাতির মিশ্র চাষ করে পুকুরের পরিবেশ উন্নয়ন করা সম্ভব। পুকুরে যে সার ও খাদ্য দেওয়া হয়, তার সবটুকু ব্যবহৃত না হলে পানির বিভিন্ন স্তরে বিরাজ করতে থাকে। পরে পচে পানি ও অন্য স্তরে খাদ্যকণা নষ্ট করতে পারে। তাই একাধিক প্রজাতির মাছ থাকলে স্বাভাবিক নিয়মে পুকুরের পানির সব স্তর মাছের স্বাভাবিক বিচরণ ও খাদ্য গ্রহণের আওতায় থাকবে।
# পুকুরের পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণে সার ও খাদ্য ব্যবহারের যথাযথ নিয়ম মেনে চলা উচিত। সার-খাদ্য দুটিই মাছের খাদ্যের জোগান দিয়ে থাকে। সার থেকে পানিতে মাছের প্রয়োজনীয় জীবাণুখাদ্য তৈরি হয়, এ খাদ্য সরাসরি মাছ খায়। এতে পুকুর ও পানির সুষ্ঠু অবস্থা বিরাজ করে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০