সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: খাট শুধু ঘুমানোর জন্য না বানিয়ে খাটের সঙ্গে বুক সেলফটাও রাখতে পারেন। খাটের আশপাশে ছোট ছোট সেলফ আর নিচের জায়গাটাকে ব্যবহার করতে পারেন ওয়ারড্রোব হিসেবে। তাহলে বই আর জামা-কাপড় রাখার জন্য আলাদা করে বুকসেলফ আর ওয়ার্ডরোব কেনার টাকা খরচ হলো না, জায়গাও বাঁচলো। পাশাপাশি বারান্দায় বা জানালার জন্য আলাদা করে র্যাক তৈরি করে নিতে পারেন, যেগুলো ভাঁজ করা যায়। এসব র্যাকে কাপড় শুকানো হয়ে গেলে আবার ভাঁজ করে ঘরে তুলে রাখতে পারেন। এতে আলাদা করে বারান্দায় বা ঘরের ভেতর কাপড় শুকানোর জন্য দড়ি টানাতে হবে না। চট্টগ্রামের ফার্নিচার মেলায় এমন সব তথ্য জানাছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা।
দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের আগ্রহের আসবাবগুলো একদিকে জায়গার কম প্রয়োজন হয় এবং অন্যদিকে অর্থ সাশ্রয় করবে। বিভিন্ন স্টলে আগ্রহী দর্শনার্থীরা আসবাবে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে ভিড় জমছে। আবার কেউ প্রয়োজনীয় আসবাবের ফরমায়েশও দিয়ে যাচ্ছে। এমন চিত্র ছিল অষ্টমবারের মতো চট্টগ্রামের আয়োজিত ফার্নিচার মেলার দ্বিতীয় দিনের।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের আগ্রহ বেশি হোম ফার্নিচার, অফিস ফার্নিচার, ডোর অ্যান্ড ফ্লোর, কিচেন ইন্টারিউর আর গার্ডেন ফার্নিচারের কালেকশনে। এর মাঝে নান্দনিক ও শৈল্পিক ডিজাইনের সোফা, ডিভাইন, সেন্টার টেবিল, ওয়ার্ডরোব, ডায়নিং টেবিল, সোকেস, টিভি কেবিনেট, মিনি কেবিনেট, কর্নার টেবিল, ডিনার ওয়াগনের প্রতি সবার নজর বেশি। নতুন সংসার সাজাতে এ মেলায় আসনে আগ্রাবাদ এলাকা ব্যাংকার শেহরিন আহমদ। তিনি বলেন, নতুন সংসারে এখনও অনেক কিছুর প্রয়োজন। মেলায় পছন্দের আসবাব পাওয়া যায় কিনা তা দেখতে আসা। আর যদি পছন্দ হয়ে যায়, তবে অর্ডারও দিয়ে দেব। আরেক তরুণ আইনজীবী সরওয়ার কামাল রাসেল বলেন, অফিসের জন্য নতুন আসবাবের প্রয়োজন। তাই মেলায় আসা। কারণ এখানে একসঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাহারি আসবাবগুলো দেখা যাবে। কেননা আমার পছন্দ উন্নত কাঠের ফার্নিচার আর ডিজাইন হতে হবে নান্দনিক ও শৈল্পিক।
ভেগাজ ফার্নিচারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আইএম ইফতেখার উদ্দিন বলেন, গুণগতমানের ক্ষেত্রে আমরা কখনও কম্প্রোমাইজ করি না। তিনি আরও জানান, তাদের রয়েছে হোম ফার্নিচার, অফিস ফার্নিচার, ডোর অ্যান্ড ফ্লোর, কিচেন ইন্টারিউর আর গার্ডেন ফার্নিচারের কালেকশন। এগুলো তৈরি করা হয় চট্টগ্রামের কারখানায়। হোম ফার্নিচারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের সোফা, ডিভাইন, সেন্টার টেবিল, ওয়ার্ডরোব, ডায়নিং টেবিল, সোকেস, টিভি কেবিনেট, মিনি কেবিনেট, কর্নার টেবিল, ডিনার ওয়াগন। রয়েছে অফিস ফার্নিচারের বিশাল সম্ভার। ডিজাইন অনুযায়ী দামের রকমফের আছে।
তবে ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম বলেন, মেলা উপলক্ষে আমরা এবার ৪০% পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি।
এ মেলা আয়োজকরা বলেন, স্থানীয় চাহিদা, সহজ লভ্য কাঁচামাল, সস্তা শ্রমবাজার, উন্নত পরিবহন সুবিধা উন্নত কারিগরি জ্ঞানের কারণে চট্টগ্রামের গড়ে উঠেছে দেশের হাজার কোটি টাকার ফার্নিচার বাজার।
এ ক্ষেত্রে আরও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠাপোষকতা পেলে আগামীতে এ শিল্প আরও সম্প্রসারিত হবে। পাশাপাশি আমদানিনির্ভর ফার্নিচার শিল্পকে রফতানিমুখী শিল্পে পরিণত করা যাবে। এ লক্ষ্য নিয়ে অষ্টম ফার্নিচার মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি চট্টগ্রাম বিভাগ।
বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি এসএম নুরুউদ্দিন বলেন, ফার্নিচার শিল্প বিকাশে এ মেলার গুরুত্ব রয়েছে। মৌলিক চাহিদা না হলেও আসবাবপত্র মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এদেশে দক্ষ কারিগর রয়েছে। তাদের জন্য প্রয়োজন উন্নত ট্রেনিং ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাহলেই আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের তৈরি ফার্নিচার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নগরীর জি.ই.সি কনভেনশনে এ ফার্নিচার মেলায় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারবেন। দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্মত ফার্নিচার নির্মাণকারী ৯টি প্রতিষ্ঠান এ মেলায় কো-স্পনসর করেছে। দেশীয় ৪০টি প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশগ্রহণ করছে। মেলা উপলক্ষে অংশগ্রহণকারী ফার্নিচার প্রতিষ্ঠানগুলো ঘোষণা করেছেন আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট।
Add Comment