সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: গত মাসে (মার্চ) চট্টগ্রামের খেলাপি গ্রাহকদের (ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান) বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে ৫৩টি মামলা দায়ের করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। চট্টগ্রামের শীর্ষ ব্যবসায়ী থেকে খুচরা দোকানদার পর্যন্ত এ খেলাপি গ্রাহকদের তালিকায় রয়েছে। ভোগ্যপণ্য আমদানি ও জাহাজভাঙা শিল্পের নামে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়ে পড়েছেন তারা। তবে মামলা করলেও শেষ পর্যন্ত পাওনা আদায় করা সম্ভব হবে কি নাÑ তা নিয়ে চিন্তিত অধিকাংশ ব্যাংক ব্যবস্থাপকরা। অন্যদিকে খেলাপি গ্রাহকরা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় তারা এগুলো নিষ্পত্তি করবেন।
ব্যাংক, ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন ও আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংক ঋণের সুদ বেশি, ব্যবসায়িক অদক্ষতা, টানা লোকসান, ব্যাংকের দায় পরিশোধে ব্যর্থতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে ধারাবাহিক দরপতনের কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের এমন অবস্থা।
জানা গেছে, গত মার্চে বহুল আলোচিত ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান লিজেন্ড হোল্ডিংয়ের বিরুদ্ধে পাওনা আদায়ে আরেকটি মামলা করেন ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। আরেক আলোচিত প্রতিষ্ঠান রাইজিং গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেভেন বি অ্যাসোসিয়েটের বিরুদ্ধে মামলা করে এবি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। একই এলাকার দি সিটি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা মারিয়া শিপ ব্রেকার্স ও মারিয়া স্টিল কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে মামলা করে। পাশাপাশি এ ব্যাংক ভাটিয়ারি শাখা মেসার্স এমএম এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ব্যাংকগুলোর একাধিক শাখা ব্যবস্থাপকরা বলেন, ‘চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যার ফলে মামলা করতে হচ্ছে। গত কয়েক বছরে কিছু ব্যবসায়ী আত্মগোপনে চলে যাওয়া ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’
চিটাগং চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বলেন, ‘ব্যাংকাররা ভালোভাবে যাচাই-বাচাই ও মূল্যায়ন করে ঋণ দিলে এত ঋণখেলাপি হতো না। এখানে ব্যাংকগুলো দায় এড়ানো পারে না।’
চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ও মোস্তফা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘তৃতীয় প্রজন্মের ব্যাংকগুলো অতি মুনাফার জন্য না বুঝে ইচ্ছামত ঋণ দেয়। আর অদক্ষ ব্যবসায়ী না বুঝে বিনিয়োগ করে। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েন। পাশাপাশি বাজারের একটি অসম বিনিয়োগ পরিস্থিতি তৈরি হয়, যা সবার জন্য ক্ষতিকর ছিল। এতে বেশ কিছু শিল্প গ্রুপ ব্যবসায়িকভাবে লোকসানে পড়ে। ফলে পাওনা আদায়ে ব্যাংকগুলো মামলা করছে।’
মামলার রেজিস্টার অনুসারে, পাওনা আদায়ে সবচেয়ে বেশি মামলা করে ইস্টার্ন ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। এ ব্যাংক মোট ১৭টি মামলা করেছে। তারপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। এ ব্যাংকের মোট ৬টি মামলা করে।
আর সোনালি ব্যাংকের মামলার সংখ্যা ৫টি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ মেসার্স নিমনা বত্রালয়, আমান উল্লাহ চৌধুরী, নরুল আলম, জালাল উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী, মেসার্স সাফি অটোমোবাইল, মেসার্স আসমা অটো মটরস, মেসার্স কোস্টাল ফুডস, মেসার্স পিকে করপোরেশন, মেসার্স শুভেচ্ছা করপোরেশন, শেফাল চন্দ্র দাশ, গাইসয়া ইলেকট্রো, জননী মেটাল স্টোরস, হামিম মেটাল স্টোরস, এমডি মিসবাহ হক চৌধুরী, নাজমুল হক চৌধুরী, এমডি ফোরকান উদ্দিন চৌধুরী, মো. জসিম উদ্দিন, এমআর শিপিং লাইনস, মেসার্স সায়মন পেপারস হাইজ, ট্রেডমার্ক, ওয়ান ফ্যাশন ডাবল ক্লিক ডটকম, খাজা ট্রেডিং, আবু তালেব অ্যান্ড ব্রাদার্স, ছগির অ্যান্ড ব্রাদার্স, মেসার্স এসএম করপোরেশন, মেসার্স আবেদন টেক্সটাইল মিলস ও নয়ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ আরও আরও কয়েক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া মামলাকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে আছে উত্তরা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোনালি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, স্যোসাল ইসলামি ব্যাংক, আইডিএলসি লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া মিলে ৫৩ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনাদায়ে ঋণ আদায়ের জন্য মামলা করে।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন ব্যাংক ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে অর্থঋণ আদালতে গত জানুয়ারি মাসে ১৭টি মামলা করে। আর ফেব্রুয়ারি মাসে করে ৪০টি। এছাড়া গত বছরে মোট মামলা হয়েছে ৭৪৪টি। এর আগে ২০১৫ সালে মামলা হয় ৯৫৮টি; ২০১৪ সালে হয় ৪৫৪টি। আর গত বছরের মামলা দায়েরের শীর্ষে ছিল অগ্রণী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড।