নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রুপের অন্য তিন কোম্পানির সঙ্গে সামিট পাওয়ারের একীভূতকরণে অনিয়ম বিষয়ে কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফলে পূর্বনির্ধারিত গতকাল বৃহস্পতিবারের শুনানি থেকে স্টক এক্সচেঞ্জ বোর্ডকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর বোর্ডের পরিবর্তে স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা (সিআরও) শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। তবে তাদের কোনোরকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি। ফলে শিগগিরই ইস্যুটির নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। বিএসইসি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, একীভূতকরণের ক্ষেত্রে অনিয়মের দায়ে গত মাসে স্টক এক্সচেঞ্জ বোর্ডকে শোকজ করেছিল বিএসইসি। ১৫ ডিসেম্বর বোর্ড সদস্যদের সশরীরে হাজির হয়ে শুনানিতে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। দেশের শেয়ারবাজারে ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম। কিন্তু বোর্ডের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার দুই স্টক এক্সচেঞ্জের এমডি, সিআরও এবং সামিট প্রতিনিধিরা আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করেন। বৈঠকে কোনো পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রশ্ন করেনি বিএসইসি। লিখিত জবাব দিয়েই তারা চলে এসেছেন।
এর আগে বিএসইসির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সামিট পাওয়ার একীভূতকরণ নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের পদক্ষেপ সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থী। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিষয়টি নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, স্টক এক্সচেঞ্জের চিফ রেগুলেটরি অফিসার এবং লিস্টিং বিভাগের প্রধানকে আগামী ১৫ ডিসেম্বর সশরীরে এসে শুনানিতে অংশ নিতে হবে। একই সঙ্গে আইন লঙ্ঘনের ব্যাপারে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
এদিকে আশির দশক থেকে শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রায়ই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মকর্তাদের শোকজ কিংবা শুনানিতে ডেকেছে। দোষী কর্মকর্তাদের শাস্তিও দিয়েছে বিএসইসি। কিন্তু পুরো পর্ষদ বা বোর্ডকে শুনানিতে ডাকার ঘটনা এটিই প্রথম। তাদের কথার সত্যতা পাওয়া যায় বিএসইসিতে।
জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২২৮ ও ২২৯ ধারা অনুসারে উচ্চ আদালতে তিন কোম্পানিকে সামিট পাওয়ারের সঙ্গে একীভূতকরণের অনুমোদন চাওয়া হলে শর্তসাপেক্ষে গত ১৪ জুলাই সামিট গ্রুপের তিন কোম্পানির একীভূতকরণের চূড়ান্ত অনুমতি দেন হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমদের বেঞ্চ। এর আগে বিধিমোতাবেক বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) শেয়ারহোল্ডার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিরও অনুমোদন নেয় কোম্পানিগুলো।
সামিট পূর্বাঞ্চলের একটি শেয়ারের বিপরীতে সামিট পাওয়ারের এক দশমিক ৩০৯টি শেয়ার পান শেয়ারহোল্ডাররা। সামিট উত্তরাঞ্চল পাওয়ার কোম্পানির একটি শেয়ারের বিপরীতে সামিট পাওয়ারের এক শমিক ৬৬৮ বং সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ারের একটি শেয়ারের বিপরীতে সামিট পাওয়ারের এক দশমিক ৪৭৫টি শেয়ার দেওয়া হয়। একীভূত হওয়া গ্রুপের অন্য দুই কোম্পানি সামিট উত্তরাঞ্চল ও সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়।
একীভূতকরণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতায় উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ২৮ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লেনদেন বন্ধ রাখে ডিএসই ও সিএসই। একই সঙ্গে বিএসইসি ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ গঠন করে আলাদা তদন্ত কমিটি। কোম্পানিটি একীভূতকরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধিবিধান সঠিকভাবে অনুসরণ করেনি বলে অভিযোগ ছিল বিএসইসির।
Add Comment