নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন রমজানে রাজধানীতে বিক্রীত মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এবার প্রতি কেজি দেশি গরুর মাংসের দাম ঠিক হয়েছে ৪৭৫ টাকা। এছাড়া বিদেশি গরুর মাংস কেজি প্রতি ৪৪০ টাকা, মহিষের মাংস ৪৪০ টাকা, খাসির মাংস ৭২৫ এবং ভেড়া ও বকরির মাংস ৬২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রমজানে এ নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দাম রাখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
গতকাল রমজান উপলক্ষে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ দাম নির্ধারণ হয়। অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বিলালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গত রমজানের তুলনায় বছর ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম ৫৫ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হলো। আর খাসির মাংসের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৫৫ টাকা। গত বছর প্রতি কেজি গরুর মাংস দাম ছিল ৪২০ টাকা, মহিষ ৪০০, খাসি ৫৭০ এবং ভেড়া ও বকরির মাংস ৪৭০ টাকা।
গতকাল এ মূল্য ঘোষণার পর বাজারে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেক ক্রেতাদের। তাদের ভাষ্য, ২০১৫ সালে সিটি করপোরেশন প্রতি কেজি গরুর মাংসের মূল্য ২৮০ টাকা নির্ধারিত করেছিল। গত বছর তা হঠাৎ ১৪০ টাকা বাড়িয়ে ৪২০ টাকা করা হয়। এবার আবার বাড়ানো হলো। আর খাসির মাংস তো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক দাবি মেনে তাদের পক্ষে দেখছে সরকার। এতে ক্ষুণœœ হচ্ছে ভোক্তাস্বার্থ। গত রোজার ঈদের পরও দেশে মাংসের দাম কমে ৪০০ টাকায় আসে। তবে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও ইজারাদারদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কয়েকটি দাবিতে এরপর ছয় দিন ধর্মঘটে যান ব্যবসায়ীরা। এরপর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে মাংস বিক্রি শুরু করে ৫০০ টাকায়। শেষ গত মাস থেকে আবারও দ্বন্দ্বের সমাধান না হওয়ার কারণে পয়লা রমজান থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার কথা জানায়। কিন্তু সে সময় বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন মাংস ব্যবসায়ীরা। এরপর তাদের বেপরোয়া ভাবের প্রকাশ মেলে গত শবেবরাতে। সে সময় তারা রাজধানীর বহু এলাকায় ৫৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করেন।
এদিকে গতকাল রোজার মাসে জনগণের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে এবারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়ে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ২৬ রোজা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় এ দামে মাংস বিক্রি করতে হবে। সভায় সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সবাইকে দাম মেনে চলার নির্দেশ দিচ্ছি। আমাদের একটি মনিটর টিম সবসময় কাজ করবে। কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তারা ব্যবস্থা নেবে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ মাংস বিক্রি করে এমন সব দোকানের জন্যই এ দাম প্রযোজ্য হবে বলে জানান মেয়র।
এদিকে ওই বৈঠকে মাংসের এই দাম রোজার পরও ঠিক রাখার আশ্বাস দিয়ে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘রোজার পর বড়জোর ৫-১০ টাকা ‘এদিক-সেদিক’ হতে পারে। আর রোজায় মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ধর্মঘট কর্মসূচি থেকে সরে এসেছি আমরা। এখান থেকে ঘোষণা দিচ্ছি, পবিত্র রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় আমরা যে ধর্মঘট কর্মসূচি দেওয়ার কথা বলেছিলাম, তা প্রত্যাহার করে নিলাম।’
এদিকে প্রতিবারের মতো গতকালও মতবিনিময় সভায় রবিউল অভিযোগ করেন, গাবতলী গরুর হাটের ইজারাদারদের অত্যাচারের কারণে ব্যবসা করতে পারছেন না তারা। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের অভিযোগ জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম আসার পর থেকে সেখানে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
তিনি বলেন, এ চাঁদাবাজি বন্ধ হলে ঢাকার মানুষকে ৩০০ টাকা কেজি দলে মাংস খাওয়ানো যাবে। এজন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার কামরাঙ্গীরচর, মাতুয়াইল, হাজারীবাগ এলাকায় একটি করে গরুর হাট করা যেতে পারে। সঙ্গে কাপ্তানবাজার, হাজারীবাগ জবাইখানার আধুনিকায়ন করার দাবি জানানো হয়।
Add Comment