Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 11:37 am

ক্ষত চিকিৎসায় ভ্যাকুয়াম থেরাপি

শরীরে বিভিন্ন কারণে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। যেমন আঘাত, দুর্ঘটনা, বার্ন, অপারেশন প্রভৃতি। সময়মতো ক্ষত না শুকালে নানা জটিলতা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি ডেকে আনে। তাই ছোট-বড় কোনো ক্ষতকে অবহেলা না করে সঠিক চিকিৎসা নিন।

ক্ষত শুকানোর বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি বর্তমানে প্রচলিত। যেমন ড্রেসিং, ডেব্রাইডমেন্ট, ট্রপিক্যাল ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট, ওঊন্ড বাথ, সোডিয়াম/ক্যালসিয়াম এলজিনেট, সার্জিক্যাল ক্লোজার, গ্রাফট, ফ্ল্যাপ, হাইপারবারিক অক্সিজেন, টপিক্যাল অক্সিজেন, স্টেম সেল থেরাপি ও ভ্যাকুয়াম থেরাপি। আজ থাকছে ভ্যাকুয়াম থেরাপি।

ভ্যাকুয়াম থেরাপির মাধ্যমে গভীর ও অগভীর ক্ষতস্থানে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত ও তরল শোষণের মাধ্যমে শুকানো হয়। এটি ব্যয়বহুল নয়। সহজে স্থাপনযোগ্য। সফলতার মাত্রা অনেক বেশি। এটি একটি নেগেটিভ প্রেশার ওঊন্ড থেরাপি (এনপিডব্লিউটি)। সম্প্রতি দেশে এ পদ্ধতি শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা ক্ষত শুকানোর ক্ষেত্রে নতুন যুগে প্রবেশ করলো। এত দিন যে ক্ষতগুলো সহজে শুকাতো না অথবা যেসব ক্ষতের কারণে রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা ছিল, সে ক্ষতগুলো এখন ভালো করা সম্ভব। ক্ষতের কারণে মরণাপন্ন রোগীদের জন্য এটি সুসংবাদ।

ভ্যাকুয়াম থেরাপি একটি অত্যাধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি। একটি বিশেষ ধরনের ভ্যাকুয়াম ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে নতুন ও পুরেনো ক্ষতসহ দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডিগ্রি পোড়া (বার্ন) ক্ষত নিরাময় হয়। স্বাভাবিক বায়ুমণ্ডলীয় চাপের

চেয়ে ১২৫ মিমি নেগেটিভ চাপে ও একটি ভ্যাকুয়াম পাম্প সংযুক্ত লিক-প্রুফ ড্রেসিং

ব্যবহার করে ক্ষত শুকানো হয়। এনপিডব্লিউটি ডায়াবেটিক ফুট আলসার, বেড সোর ও অন্য যেকোনো ক্ষত চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি চিকিৎসাপদ্ধতি।

ভ্যাকুয়াম থেরাপি বা ‘ভ্যাকুয়াম এসিস্টেড ক্লোজার’ একটি বাস্তবধর্মী অস্ত্রোপচার পদ্ধতি। এর মাধ্যমে ক্ষত বা অপারেশন সাইট থেকে রক্ত বা তরল শোষণ করা হয়। বিশেষ ধরনের একটি ফোম (পলিইউরাথেন ফোম) ক্ষতস্থানে স্থাপন করে বিশেষ এক ধরনের ফিল্ম দিয়ে ক্ষতস্থান সম্পূর্ণ ঢেকে (সিল) দেওয়া হয়। সিলের ভেতর থেকে একটি পাইপ ভ্যাকুয়াম মেশিনের পাম্পে সংযুক্ত করা হয়। পাম্পের সাহায্যে ক্ষতস্থানের তরল পদার্থ ও সংক্রামক উপাদানগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইরে টেনে নেওয়া হয়।

‘বেড সোর’ বা শয্যাক্ষত একটি মারাত্মক সমস্যা। সাধারণত প্যারালাইসিস রোগী, কিডনি রোগী, হাড়ভাঙা রোগী বা পঙ্গু রোগীদের দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। তাদের পিঠে বা কোমরে বড় বড় ক্ষত হয়। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেওয়াসহ রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে। ভ্যাকুয়াম থেরাপির মাধ্যমে এ ধরনের ক্ষত শুকানো এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ।

নেগেটিভ চাপ নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় প্রয়োগে ডেব্রাইডমেন্ট ত্বরান্বিত হয়। ফলে গভীর ও অগভীর ক্ষতগুলো দ্রুত শুকায়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে চক্রাকারে ‘অন’ ও ‘অফ’ করে ভ্যাকুয়াম থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। নেগেটিভ চাপ ক্ষতস্থানের তরল অপসারণে সাহায্য করে, লোকাল ইডেমা কমায় ও রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে। এতে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায়। সুস্থ গ্র্যানুলেশন টিস্যু দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ পদ্ধতি ডিগ্লোভিং ইনজুরি, ডোনার সাইট, সংক্রমিত ক্ষত ও বিভিন্ন সফট টিস্যু ইনজুরিতে প্রয়োগ করে পরে সার্জিক্যাল ক্লোজার, গ্রাফটিং অথবা রি-কনস্ট্রাক্টিভ সার্জারিসহ অনেক চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। জটিল ক্ষতগুলোতে প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতিতে যে সময় ব্যয় হয়, ভ্যাকুয়াম থেরাপির মাধ্যমে তার চেয়ে অনেক কম সময়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

ভ্যাকুয়াম থেরাপির মাধ্যমে যে চিকিৎসা

করা যাবেÑ

১. ডায়াবেটিস ও নন-ডায়াবেটিস রোগীর

পায়ের ক্ষত

২. নতুন ও পুরোনো ক্ষত

৩. অপারেশন-পরবর্তী ফেটে যাওয়া ক্ষত

৪. আঘাতজনিত ক্ষত

৫. স্কিন ও মাসল গ্রাফট, ম্যাশড গ্রাফট

৬.    ফ্ল্যাপ

৭. পোড়া রোগীর ক্ষত

৮.    পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ

৯. বেড সোর (প্যারালাইসিস বা ক্যানসার রোগীর পিঠের বা কোমরের ক্ষত)

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, ডেনমার্ক, নরওয়ে, চীন, হংকং, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্যাকুয়াম থেরাপি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

 

ডা. এম মঞ্জুর আহমেদ

এমবিবিএস (সিইউ), পিজিটি (সার্জারি), সিসিডি (বারডেম), ইডিসি (বারডেম)

ডায়াবেটিক ফুট অ্যান্ড ওউন্ড হিলিং সেন্টার

২২ মধুশহিদ, মেডিক্যাল রোড, সিলেট

১৯৫ গ্রিন রোড, ঢাকা, ০১৭১১৯৭৩২৯১

ই-মেইল : sajib1991Ñgmail.com

ওয়েবসাইট :www.diabeticcenteronline.com

অনুলিখন: আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর