মানব পাচারে এক ধাপ নেমে গেছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানব পাচার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আরেক ধাপ নিচে নেমেছে। মানব পাচার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। নিচে নামার কারণ হিসেবে পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের যথেষ্ট উদ্যোগী না হওয়ার কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

তথ্যমতে, ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন’ শীর্ষক বার্ষিক এ প্রতিবেদনে গত পাঁচ বছর বাংলাদেশকে রাখা হয়েছিল দ্বিতীয় স্তরে (টায়ার-টু)। এবার এক ধাপ নামিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় স্তরের ‘নজরদারিতে থাকা দেশের’ তালিকায় (টায়ার-টু ওয়াচ লিস্ট) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সৌদি আরব, আলজেরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও হংকংসহ ৪৫টি দেশ এ নজরদারির তালিকায় রয়েছে। আর চীন, রাশিয়া ও ইরানকে এবার রাখা হয়েছে মানব পাচার পরিস্থিতিতে সবচেয়ে নিচের স্তরে, অর্থাৎ টায়ার-থ্রিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে ১৮৭ দেশের পরিস্থিতি নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেন, মানব পাচারের মহামারী বন্ধে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মানব পাচার এখনও বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। কিন্তু এসব অপরাধের তদন্ত করে দোষী মানবসম্পদ কর্মকর্তা, সীমান্তরক্ষী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষেত্রে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগী হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলছে, ২০১৫ সালে যৌনকর্মী হিসেবে মানব পাচারের ১৮১টি এবং শ্রমক্ষেত্রে মানব পাচারের ২৬৫টি ঘটনার তদন্ত হয়েছিল বাংলাদেশে। কিন্তু গত বছর তদন্তের সংখ্যা কমে যথাক্রমে ১২২ ও ১৬৮টি হয়েছে।

মানব পাচারের অপরাধে ২০১৬ সালে মাত্র তিনটি ক্ষেত্রে শাস্তির তথ্য পাওয়া গেছে, যেখানে ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল সাতটি, ২০১৪ সাল ছিল ১৮টি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তের জন্য যথেষ্ট জনবল না দেওয়ায় এবং তাড়াহুড়ো করে মামলা শেষ করার প্রবণতার কারণে বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই মানব পাচারের মামলাগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। সরকার মানব পাচার বন্ধে আইন ও একটি কর্মপরিকল্পনার খসড়া করলেও আগের বছরের তুলনায় এক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কর্মীদের কাছ থেকে রিক্রুটিং ফি আদায় না করে তা চাকরিদাতার কাছ থেকে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।

পাশাপাশি পাচারের শিকার মানুষের সুরক্ষায় নীতিমালা প্রণয়ন; সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা পাচারে জড়িত, তাদের তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, লেবার ইন্সপেক্টর ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

উল্লেখ্য, মানব পাচার পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ প্রতিবেদনে দেশগুলোকে তিনটি স্তর বা টায়ারে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে  যেসব দেশ পাচার ঠেকাতে ‘কার্যকর’ ব্যবস্থা নিয়েছে অর্থাৎ, ট্রাফিকিং ভিকটিমস প্রোটেকশন অ্যাক্টসের ন্যূনতম মান পূরণে সক্ষম হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সেসব দেশকে প্রথম স্তর বা টায়ার-ওয়ানে রাখা হয়।

দ্বিতীয় স্তর বা টায়ার-টুকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে- টায়ার-টু এবং টায়ার-টু ওয়াচ লিস্ট। সবশেষে রয়েছে তৃতীয় স্তর বা টায়ার-থ্রি।

তিন বছর টায়ার-টু ওয়াচ লিস্টে থাকার পর ২০১২ সালে বাংলাদেশ টায়ার-টু-তে উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচারে ন্যূনতম মান পূরণ না হওয়ায় এবার বাংলাদেশকে পুরোনো স্তরে ফিরিয়ে নেওয়া হলো।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০