বিপর্যয় এড়াতেই ব্যাংক খাতে ভর্তুকি: সংসদে অর্থমন্ত্রী

সংসদ প্রতিবেদক: ব্যাংক খাতে বিপর্যয় ঘটলে সারা দেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে। সে কারণেই ব্যাংক খাতে বিপর্যয় রুখতেই পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বৃহস্পতিবার সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত দায়যুক্ত ব্যয় ব্যতীত অন্যান্য ব্যয় সম্পর্কিত মঞ্জুরি দাবির ওপর আলোচনায় এ কথা বলেন মুহিত।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে সরকার খামাখা ভর্তুকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে এখানে। বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাত খুবই নাজুক। পরিস্থিতি নাজুক বলেই বিপর্যয় এড়াতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমে আসা তথ্য অনুযায়ী, মূলধন ঘাটতি পূরণ, তহবিল সহায়তা, সুদ ভর্তুকি ও সরকারি শেয়ারের অংশ ঠিক রাখতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ব্যাংকের মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ খাতের বরাদ্দ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ওই অর্থ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সোনালী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭০ শতাংশ। দুর্নীতি ও ঋণ জালিয়াতির কারণে দুর্দশায় থাকা ব্যাংকগুলোকে এভাবে মূলধন জোগানো নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দসহ ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নরুল ইসলাম মিলন সমালোচনা করে বলেন, আমাদের ব্যাংকের অবস্থা সংকটাপন্ন। ব্যাংক খাতে এক লাখ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ। বেশিরভাগ ব্যাংক পরিচালক নিজেদের মধ্যে ঋণ ভাগ করে নিচ্ছে। মালিক ও পরিচালকরা টাকা গিলে খাচ্ছে। পুরো ব্যাংক খাত জিম্মি হয়ে আছে ব্যাংকের মালিক-পরিচালকদের কাছে।

স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে। অর্থই অনর্থের মূল। এখন পারিবারিকভাবে ডিরেক্টর হতে পারে। সরকারি ব্যাংক জনগণের টাকা দিয়ে পুষবেন। আবার বেসরকারি ব্যাংকও একই দিকে যাচ্ছে। ব্যাংক কমিশন করেন।  জোরালো ও কঠিনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ফখরুল ইমাম বলেন, ডোরাকাটা দাগ থেকে বাঘ চেনা যায়। বাতাসের বেগ  দেখে মেঘ চেনা যায়। এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামপুরে ইনভেস্ট করি। এক লাখ টাকায় পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া যায়। ব্যাংকে রাখলে টাকা কেটে নেয়। এটা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। এটা বের করতে পারলে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।

ফখরুল ইমাম আরও বলেন, আসল সমস্যাটা হলো সুশাসন। সরকার ব্যবসা করে কোনোদিনই ভালো করেনি। এজন্য সরকারকে ব্যবসা থেকে দূরে রাখি।  ৮০ ভাগ ব্যবসা ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। ২০ ভাগ সরকার করে। যেহেতু ব্যবসায়ীরা ভালো করে, সেহেতু তাদের হাতে অর্থনীতির ৮০ ভাগ ছেড়ে দিতে চাই। আর সুশাসন শব্দটার সীমানা ব্যাপক। এখানে ব্যাংকিং ব্যবস্থার আইন-কানুন সব আসে। আমাদের সরকার ব্যাংকিং খাত আর মানি মার্কেটের সুশাসনের জন্য মোটামুটিভাবে ন্যায়নিষ্ঠভাবে কাজ করে গেছে। তার ফল মানি মার্কেটে দেখতে পাচ্ছেন। ব্যাংকিং খাতেও দেখতে পাবেন।

সবার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, দাবিটি হচ্ছে অর্থ বিভাগের। কিন্তু সবাই কথা বলেছেন ব্যাংক খাত নিয়ে। বেসরকারি ব্যাংকে পারিবারিক সদস্য বৃদ্ধির আইনটি সংসদের বিবেচনায় আছে, সংসদীয় কমিটি বিবেচনা করছে।