Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 10:41 pm

সুইস ব্যাংকে ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের টাকা: বিএনপি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন জনগণের অর্থ বিদেশে পাচারের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে জমার পরিমাণ বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ‘মূলত দুর্নীতি আর লুটপাটের টাকা সুইস ব্যাংকে পাচার করেছে ক্ষমতাসীনরা। অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, ব্যাংক খাত অত্যন্ত নাজুক, লালবাতি জ্বলার উপক্রম হয়েছে। সেই ব্যাংক লুটের টাকাই সুইস ব্যাংকে পাচার হয়েছে বলে সবাই বিশ্বাস করে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে পাচারের জন্য দায়ীদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে একদিন বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশটির ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেড়ে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছর ২০০৬ সালে দেশটির ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অর্থের পরিমাণ ১২ কোটি ৪৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ। এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম বছর ২০০৭ সালে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁয় দাঁড়ায়। এরপর থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণে ওঠানামা দেখা গেলেও ২০১২ সাল থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। পাঁচ বছরে বেড়েছে প্রায় তিন হাজার ৬৪২ কোটি টাকার বেশি।

অর্থ পাচারের পেছনে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের লোকরা জড়িত মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘তা না হলে অর্থমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অসহায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন না। সত্যিকার অর্থে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’

এ ছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশের ঘাটতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় বিদেশে অর্থ পাচারের প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করে বিএনপি।

এবারের ঈদ ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক ছিল, কোনো যানজট ছিল না, যানজট ছিল বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে’ সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন রিজভী।

এ বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়কে সেই পুরোনো উদ্ধৃতি দিতে চাই, অন্ধ হলে কিন্তু প্রলয় বন্ধ থাকে না। যানজটের যে বিভীষিকাময় প্রলয়ের ধাক্কা ঘরমুখো মানুষকে পোহাতে হয়েছে, মন্ত্রীর বক্তব্যে মানুষের সেই কষ্টকে উপহাস করা হয়েছে।’

ঈদে ঘরমুখো ও ঈদের পর কর্মস্থলমুখী যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিসংখ্যান নিয়েও মন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী বলেছেন, ঈদে নাকি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০ জন লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। কী অদ্ভূত মিথ্যাচার। তিনি যে ডাহা মিথ্যা বলেছেন, এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় এখন মৃত্যুর মিছিল চলছে। ঈদের আগে ও পরে এখন পর্যন্ত ১২৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। শুধু গতকালই (বৃহস্পতিবার) এক পরিবারের পাঁচ জনসহ সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ জন।’