হামিদুর রহমান: দেশে অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসা বন্ধে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’র (বিটিআরসি) অভিযানে ভাটা পড়েছে। অবৈধ ভিওআইপি প্রযুক্তি ও স্থাপনা পরিচালনাকারীদের শনাক্ত করতে বিটিআরসি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। গত তিন বছরে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে ১৬৫টি অভিযান পরিচালনা করেছে বিটিআরসি। তবে প্রতিবছর এ অভিযানের সংখ্যা কমছে। একই সঙ্গে কমছে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা। যদিও অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আনতে সারা দেশে এ অভিযান আরও বাড়ানো হবে বিভিন্ন সময়ে বলে আসছে বিটিআরসি।
তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিযান পরিচালনা করে ১১৩টি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা অনেক কমে যায়। সে বছর মাত্র ৩৩টি অভিযান পরিচালনা করে। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৯টি অভিযান পরিচালনা করা হয় অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শাহজাহান মাহমুদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ভিওআইপি প্রযুক্তির অপ-ব্যবহার রোধে বিটিআরসি তৎপর রয়েছে। তবে ভিওআইপি ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমরা এটি কমিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছি। দেশে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের ধরতে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যবসা বন্ধ করতেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন চালু করা হয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্টদের জরিমানাও করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের শেষের দিকে ইনকামিং কলরেট কমিয়ে এক দশমিক পাঁচ সেন্ট করা হয়েছিল। তারও আগে এর রেট ছিল তিন সেন্টের ওপরে। কলরেট কমানোর পর দেশে ইনকামিং কলের সংখ্যা বেড়ে বৈধ পথে কল বেশি আসতো। এমনও দেখা গেছে একদিনে বৈধভাবে ১২৩ মিলিয়ন পর্যন্ত ইনকামিং কল আসতো।’
বিটিআরসি বলছে, ভিওআইপি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবৈধ পথে আন্তর্জাতিক কল কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এটি শনাক্তে সিম বক্স ডিটেকশন সিস্টেম, সেলফ রেগুলেশন প্রসেস, সিগোস সিস্টেম ছাড়াও সম্প্রতি নতুন করে চালু হয়েছে থ্রিভিআই সিস্টেম। এছাড়া নিয়মিত পরিদর্শন ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি জব্দ ও ব্যবসায়ীদের আটক করা হচ্ছে। এছাড়া অবৈধ কল টার্মিনেশন রোধে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মনিটরিং কমিটি করেছে বিটিআরসি। এর মাধ্যমে অবৈধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরামের তথ্যমতে, টেলিকম নীতিমালা অনুযায়ী দেশে অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশে সরকারের অনুমোদন ছাড়া আন্তর্জাতিক মোবাইল কল আদান-প্রদানকারীরা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। বেসরকারি ছাড়াও সরকারি কিছু কর্মকর্তা এ অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে জড়িত বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিটিআরসির তথ্যমতে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসি অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশনসহ ভিওআইপি স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার রোধে ইন্সপেকশন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপি শনাক্তকরণপূর্বক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে পাশাপাশি অনুমোদনবিহীন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী স্থাপনা শনাক্তকরণ, তাদের কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও অবৈধ এবং ভুল তথ্য দিয়ে সিম-রিম রেজিস্ট্রেশন প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া কমিশন হতে ইস্যুকৃত ডিরেক্টিভস অনুযায়ী সিম-রিম রেজিস্ট্রেশন করছে কি-না তা যাচাই করা ও টেলিকম অপারেটররা বিটিআরসি হতে ইস্যুকৃত লাইসেন্সিং শর্তাবলি এবং ইস্যুকৃত ডিরেক্টিভগুলো মেনে চলছে কি-না তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে বিটিআরসি।
জানা যায়, ২০১৫ সালে বৈধ পথে প্রতিদিন গড়ে ১২ কোটি মিনিটের বেশি কল দেশে আসতো। এ সংখ্যা হঠাৎ করে ২০১৬ সালে কমতে শুরু করে। বছরের শেষদিকে অবৈধ কল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কলসংখ্যা এখন প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ থেকে চয় কোটি মিনিটে নেমে এসেছে। কমে যাওয়া কল বেশিরভাগই অবৈধ ভিওআইপি হয়ে দেশে আসছে। অবৈধ পথে কল যারা আনছেন-তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্যদিকে সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর জোট বেঁধে কলরেট দেড় থেকে দুই সেন্ট বাড়ানোর ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এ প্রতিষ্ঠানগুলো বিটিআরসির কোনো অনুমতি ছাড়াই আধা সেন্ট করে কলরেট বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর বিটিআরসি আন্তর্জাতিক কলরেট পুনর্র্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। আইজিডব্লিউগুলো আন্তর্জাতিক কলরেট বাড়িয়ে দেওয়ায় কারণে গ্রাহকদের কলরেটও বেড়ে গেছে। বিদেশে কল করা কিংবা বিদেশ থেকে দেশে কল করলে গ্রাহকদের আগের তুলনায় বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। আগে সাত টাকা মিনিটে কল করা যেতো। এখন এ কল নয় টাকার কাছাকাছি চলে গেছে।
এদিকে বিটিআরসির নিয়মানুযায়ী, প্রতি মিনিট কল থেকে যে আয় হয় বিটিআরসি এর ৪০ শতাংশ, ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ১৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ, মোবাইল অপারেটর ২২ দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং আইজিডব্লিউ অপারেটরগুলো বাকি ২০ শতাংশ পেয়ে থাকে। মোট ২৩ আইজিডব্লিউ অপারেটরের মধ্যে সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর সিন্ডিকেট করে কলরেট বাড়ানোর ফলে আগের নিয়মেই অর্থের অংশ পাচ্ছে সরকার।
Add Comment