নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা এখন থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ হিসেবে পরিচিত হবেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলো পরিদর্শন শেষে ঢাকা ফিরে গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ত্রাণমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার থেকে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ হিসেবে উল্লেখ করা হবে। আজ (গতকাল) থেকেই তাদের এ পরিচয় কার্যকর করা হবে।
তিনি আরও বলেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত আগত অনিবন্ধিত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকের সংখ্যা পাঁচ লাখ অতিক্রম করেছে। এছাড়া আরও চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আগে থেকেই এদেশে শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করছে। এদের সবাইকে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার রোহিঙ্গা বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। কুতুপালং ক্যাম্পে এখন প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে আট হাজার লোকের নিবন্ধন করা হচ্ছে। অচিরেই আমরা এ সংখ্যা দৈনিক ১০ থেকে ১২ হাজারে উন্নীত করতে চাই। যদি এটি সম্ভব হয় তাহলে আগামী আড়াই মাসের মধ্যে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কাজ শেষ হয়ে যাবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আকার আরও বড় হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে সরকার রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিতে ক্যাম্প স্থাপনের জন্য কুতুপালং ও বালুখালী মিলিয়ে দুই হাজার একর জমি বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু সব রোহিঙ্গাকে এক স্থানে রাখতে গিয়ে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অতিরিক্ত আরও এক হাজার একর জমি বরাদ্দ করা হচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আকার এখন তিন হাজার একর করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৮ সাল থেকে গত ৪ অক্টোবর পর্যন্ত যত রোহিঙ্গা এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাদের সবাইকে এই নির্দিষ্ট কুতুপালং ক্যাম্পে এনে রাখা হবে। এতে তাদের রেজিস্ট্রেশন যেমন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে, তেমনি ফেরত পাঠানোও সহজ হবে। একই সঙ্গে তাদের খাবার সরবরাহ, স্বাস্থ্য, চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবা দেওয়া নিশ্চিত করা হবে। ফলে সব মিলিয়ে বায়োমেট্রিক কার্ডটি তাদের জন্য সম্পদে পরিণত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, তিন হাজার একরের কুতুপালং ক্যাম্পকে ২০টি বøকে ভাগ করা হয়েছে। এর আগে চার লাখ ২০ হাজার মানুষের জায়গা দেওয়া সম্ভব হয় এ রকম ৮৪ হাজার শেড নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলাম। এর মধ্যে ৭৫ হাজারের বেশি শেড নির্মাণ হয়ে গেছে। তবে নতুন করে লোক আসায় ও বাড়তি লোক সংকুলানের জন্য এখন মোট এক লাখ ৫০ হাজার শেড বানানো হবে। অর্থাৎ আরও ৭৫ হাজার নতুন শেড বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৩ অক্টোবর থেকে বান্দরবান থেকে রোহিঙ্গাদের কুতুপালংয়ে ক্যাম্পে নিয়ে আসা শুরু হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এছাড়া অন্য এলাকায় ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গাদেরও কুতুপালং ক্যাম্পে আনা হবে।
রোহিঙ্গাদের খাদ্য সরবরাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিদিন পাঁচ লাখ ২০ হাজার লোকের খাদ্যের সংস্থান করছে। এর বাইরে বাকিদের প্রাথমিকভাবে দেশি-বিদেশি ত্রাণ থেকে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সব কিছু বাদ দিলে প্রতিদিন ১২০ টন চাল লাগে রোহিঙ্গাদের জন্য। এর পুরোটাই দেওয়া হচ্ছে বৈদেশিক সহায়তা থেকে। আর বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য এ পর্যন্ত ৫০০ টন চাল ও ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলেও ওই টাকাসহ মাত্র ১০ টন চাল খরচ হয়েছে। বাকি চাল এখনও অব্যবহৃত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল উপস্থিত ছিলেন।
Add Comment