মাদকবিরোধী সংগঠন মানসের হিসাবমতে, ৭০ লাখ মাদকাসক্তের ১৬ শতাংশ অর্থাৎ ১১ লাখের বেশি নারী। নারীর মধ্যে যে বিভিন্ন ধরনের মাদকের প্রতি আসক্তি বাড়ছে, সেটা অবশ্য নতুন তথ্য নয়। এর নানা কারণের কথাও জানা। সম্প্রতি পালিত হয়ে যাওয়া বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে এমন তথ্যও প্রকাশ পেল যে, মাদকাসক্ত নারীর ৫৬ শতাংশই ইয়াবাসেবী। বেসরকারি সংস্থা ঢাকা আহছানিয়া মিশন পরিচালিত এক জরিপ থেকে এমন তথ্য মিলেছে।
ইয়াবাকে বলা হয় সবচেয়ে খারাপ ধরনের নেশা। পরিবহন, হাতবদল ও সেবন সহজতর বলে এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশে। গ্রাম পর্যন্ত ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে আর তা সর্বনাশ করছে দেশের প্রায় সব শ্রেণির মানুষের। এতদিন পর্যন্ত জানা গিয়েছিল, এটি তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়। সম্প্রতি প্রাপ্ত জরিপের তথ্য বলছে, নারী মাদকাসক্তের অধিকাংশই ইয়াবায় আসক্ত। এ ধরনের নেশায় আসক্তি তাদের শরীর ও মনে বিশেষ অবনতি ঘটাচ্ছে বলেই মনে হয়। এ বিষয়ে যথাযথ বক্তব্য অবশ্য দিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরাই। আমরা কেবল শঙ্কা প্রকাশ করতে পারি।
সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপলক্ষে এখন বলা হচ্ছে, দেশে দুটি বড় সমস্যা রয়েছে, যা বলিষ্ঠভাবে মোকাবিলা করা দরকার। একটি হলো জঙ্গিবাদ, অপরটি মাদকের ভয়াবহ বিস্তার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যেয়ে মাদকের বিস্তার রোধে জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসনকে এর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ মাত্রায় সক্রিয় হতে বলছেন। এরই মধ্যে পাওয়া গেল নারীর মাদকাসক্তি বিষয়ক ওই রকম উদ্বেগজনক তথ্য।
নারীকে মাদক থেকে আলাদা করে দূরে রাখা যাবে না, এটা অবশ্য মানতে হবে। তবে আমাদের সমাজে নারীর মধ্যে সুশৃঙ্খল জীবন পরিচালনার একটি প্রবণতা এখনও রয়েছে। পুরুষকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার বিষয়েও তার রয়েছে আগ্রহ আর অবদান। এখন এ নারীর একাংশই যদি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে সেটা বেশি মুশকিলের। ইয়াবায় আসক্তদের মধ্যে যৌন অপরাধে বেশি জড়িয়ে পড়ার রেকর্ড রয়েছে। নারীরা বেশি করে ইয়াবা আসক্ত হলে তাদের মধ্যেও এটা বাড়বে। এতে ক্ষতিটা তারই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। এক্ষেত্রে তার প্রজনন স্বাস্থ্যের অবনতি হলে সন্তানের ওপরও যে বেশি করে প্রভাব পড়বে, তা বলাই বাহুল্য।
খতিয়ে দেখা দরকার, কোন শ্রেণির নারীর মধ্যে মাদকাসক্তির প্রবণতা বেশি এবং সেটা দ্রুত ‘অ্যাড্রেস’ করা চাই। দরিদ্র ও শ্রমজীবী নারীর মধ্যেও মাদকাসক্তি বেশি থাকতে পারে। মাদকদ্রব্য সস্তা হয়ে পড়লে এ ঝুঁকি বাড়বে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত নারীর মধ্যেও মাদকাসক্তি বেড়েছে বলে মনে হয়। পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোয় খবর নিলে সেটা বোঝা যাবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় ইয়াবাসহ মাদকের সহজলভ্যতা দূর করা গেলে। ছোটখাটো নেশার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেলেও কড়া নেশার দিকে ঝোঁক বাড়ে। এটা সত্যি এক কঠিন সমস্যা। তবে সরকারের উচিত হবে ইয়াবাসহ মাদকের সহজপ্রাপ্তি রোধে সম্ভাব্য সব কিছু করা। এক্ষেত্রে সক্রিয় চক্রগুলো কিন্তু একেবারে অচিহ্নিত নয়। তাদের ধরার জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছাও লাগবে।