শেয়ার বিজ ডেস্ক: তখনও সকালের আলো ফোটেনি। ভোর ৪টা। কেটির জন্ম দাতা বাবা ছোট একটা কম্বলে মুড়িয়ে তাকে নিয়ে যান একটি মার্কেটে। কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে, কপালে আলতো চুমু দিয়ে লোকচক্ষুর অগোচরে তাকে রেখে দেয়। কান্না সামলাতে দৌড়ে চলে আসেন সেখান থেকে। পাশে রেখে আসেন একটা চিঠি। চীনা ভাষায় সে চিঠিতে লেখা ছিল আজ থেকে ১০ অথবা ২০ বছর তোমার সঙ্গে আমাদের দেখা হবে চীনের বিখ্যাত একটি ব্রিজের ওপর। কিন্তু কেমন ছিল সে সময়টা কেটির বাবার জন্য? খবর বিবিসি।
তিনি বলছিলেন আমার স্ত্রী যখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন আমরা অ্যাবরশন করতে যাই। কারণ আপনি জানেন যে চীনে এক সন্তান নীতি। কেটির আগে আমাদের আরেকটা কন্যাসন্তান ছিল। কিন্তু যখন আমরা হাসপাতালে গেলাম তখন আমরা সন্তানের নড়াচড়া টের পেলাম তার মায়ের পেটের মধ্যে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা অ্যাবরশন করাব না।
পরিস্থিতি আরও জটিল হলো। লুকিয়ে একটা নৌকার মধ্যে থাকতে হলো তাদের। সন্তান প্রসবের সময় কোনো চিকিৎসকের সাহায্য তারা পাননি। কেটির বাবা বলছিলেন আমরা ভেবেছিলাম পরিচিত কারও কাছে হয়তো আমরা রাখতে পারব কিন্তু তেমন কাউকে পাওয়া গেল না।
১৯৯৬ সাল। আমেরিকান এক দম্পতি কেটিকে দত্তক নেন। আর কেটির জš§দাতা বাবা-মাকে জানান যে সে ভালো আছে আর তারা তাকে খুব ভালোবাসে। কেটির বয়স যখন ১০ তখন তার আমেরিকান বাবা তার চীনা বাবাকে মেসেজ পাঠান যে তারা আসবেন ওই ব্রিজের ওপর। চীনের ব্রোকেন ব্রিজে প্রতিবছর ৭ জুলাই প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
কেটির জš§দাতা বাবা বলছিলেন সেই রাতটা আমরা ঘুমাতে পারিনি। আমার মনে হয়েছিল যারা তাকে দত্তক নিয়েছে তারা হয়তো দুই, পঁাঁচ বছরে আমাদের সঙ্গে দেখা করাবে না। তাই ১০-২০ বছরের কথা লিখেছিলাম। অবশেষে সেই দিন এসে গেল। আমরা সকাল ৭টায় চলে গেলাম ব্রিজের ওপর। ৮টা, ৯টা, ১০টা বেজে গেল। আমরা দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। কিন্তু তারা এলো না।
অসম্ভব হতাশা নিয়ে তারা ফিরে এলেন। এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেল। চীনের মিডিয়া এ ঘটনা নিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করল। সেই অনুষ্ঠানে কেটির বাবা তার মেয়ের গল্প বললেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করল।
আমেরিকায় বসে কেটির দত্তক নেওয়া বাবা-মা এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারলেন। ইতোমধ্যে কেটির বয়স ২০ বছর হয়েছে। তারা কেটিকে জানালেন তারা জš§দাতা বাবা-মা এখন চীনে থাকেন এবং তাকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। কেটি প্রথমবারের মতো কথা বলেন এ বিষয়ে।