পাকিস্তানে বড় বিনিয়োগ চীনের অস্বস্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

শেয়ার বিজ ডেস্ক: পাকিস্তানের বিভিন্ন খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করছে দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন। বিশেষ করে বেলুচিস্তানের গাদার বন্দরে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে দেশটি। সেখানে অত্যাধুনিক বিমানবন্দর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, জ্বালানি পাইপলাইন, রেল ও সড়ক সংযোগ স্থাপনসহ বেশ কয়েকটি খাতে উল্লেখযোগ্য হারে বিনিয়োগ করছে বেইজিং। আর এতে অস্বস্তিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। তাদের ধারণা, এভাবে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের ধারাবাহিকতায় এক সময় পাকিস্তানে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলবে বেইজিং। খবর রয়টার্স।

বেলুচিস্তানের উপকূলীয় ছোট্ট শহর গাদার বাসিন্দাদের মন জয়ের পাশাপাশি সেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে চীন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সন্দেহ, ভবিষ্যতে বন্দরটিকে চীনা নৌবাহিনীর কাজে লাগানো হবে। যদিও চীন তা অস্বীকার করেছে। পাকিস্তান এ সহায়তাকে খোলাখুলিভাবে স্বাগত জানিয়েছে।

চলতি বছরই দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা মালিকানাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে মার্কিন ডেস্ট্রয়ার। অন্যদিকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের সম্ভাব্য সাবমেরিন হামলা মোকাবিলায় নিজেদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে ভারতীয় নৌবাহিনী। ইতোমধ্যে ভারত নিজেদের তৈরি প্রথম সাবমেরিন যুক্ত করেছে নৌবাহিনীতে। যা গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধন করেন। এমন বাস্তবতায় এ অঞ্চলে চীনা নৌবাহিনীর অবস্থানের বিষয়টি বাস্তব রূপ পেলে সেটা নিঃসন্দেহে ওয়াশিংটন ও দিল্লির জন্য এক ধরনের অশনি সংকেত।

আরব সাগরের পাশে বিশ্বের ব্যস্ততম তেল ও গ্যাস পরিবহন রুটের পাশে গাদার বন্দরটির অবস্থান। বেইজিং সেখানে স্কুল নির্মাণ, চিকিৎসক পাঠানোসহ প্রায় ৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে বিমানবন্দর, হাসপাতাল, কলেজ ও অতিপ্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নির্মাণ করতে যাচ্ছে। গবেষক ও পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এসব অনুদানের মধ্যে একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে, যা দেশের বাইরে চীনের সবচেয়ে বড় প্রকল্পের একটি।’

প্রকল্পটি অন্যান্য দেশের প্রতি চীনের দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে একটু আলাদা। বেইজিং পশ্চিমা দেশগুলোর মতো অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তার বদলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে সরাসরি ঋণ দিত। এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনভিত্তিক জার্মান মার্শাল ফান্ডের গবেষক অ্যান্ড্র– স্মল বলেন, ‘চীনের এমন অনুদানের নিবিষ্টতা বেশ আকর্ষণীয়। চীন সাধারণত সহায়তা বা অনুদান দেয় না; তাই এতে বুঝতে হবে তারা পরিণত হচ্ছে।’

চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের কেন্দ্র হিসেবে গাদারকে দেখছে দুই দেশ। চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ পরিকল্পনায় এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার ৬০টির বেশি দেশের স্থল ও সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক ‘সিল্ক রোড’-এর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে গাদার। পরিকল্পনা অনুযায়ী গাদারের পাশেই বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। সেখান থেকে শিল্পসামগ্রী বিশ্বব্যাপী রফতানির সুযোগ তৈরি হবে। চীনের পশ্চিমাঞ্চল থেকে গাদার পর্যন্ত জ্বালানি পাইপলাইন, সড়ক ও রেল যোগাযোগও স্থাপন করা হবে। আর ২০২২ সালের মধ্যে বন্দরটির সক্ষমতা ১২ লাখ টন থেকে বাড়িয়ে এক কোটি ৩০ লাখ টন করা হবে। এজন্য আগামী বছর বন্দরের পাঁচটি বার্থ খনন করে গভীরতা ২০ মিটার পর্যন্ত বাড়ানো হবে। এ ব্যাপারে জানতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

গাদারে বিনিয়োগের সুফল হিসেবে আগামী ৪০ বছর বন্দরের ৯১ শতাংশ শুল্ক আদায় করবে চীন। আর তাদের বিদেশি বন্দর পরিচালনা প্রতিষ্ঠানটিও ২০ বছরের জন্য বড় ধরনের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।

তবে গাদার প্রকল্পে চীনের জন্য বেশকিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। সুপেয় পানির অভাব, বিদ্যুতের অপ্রতুলতার পাশাপাশি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের হুমকিও রয়েছে সেখানে। বিদ্রোহীরা গাদারসহ বেলুচিস্তানের অন্যান্য চীনা প্রকল্পে হামলার হুমকি দিয়ে রেখেছে। এ কারণে সেখানে চীনা নাগরিকসহ বিদেশিদের সেনাবাহিনী ও পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হয়। তবে চীন সাধারণ নাগরিকদের আস্থা অর্জনে নানা চেষ্টা করলেও অবস্থার খুব পরিবর্তন হচ্ছে না। পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে খুব শিগগিরই পানি বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্র ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে জানিয়ে বাসিন্দাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে।

গাদারকে অবশ্য অনেকেই শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের সঙ্গে তুলনা করতে চাইছেন। হাম্বানটোটা গ্রামটিকে বন্দরে রূপান্তরিত করা হলেও ঋণের দায়ে তা চীনের কাছে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দিতে বাধ্য হয় শ্রীলঙ্কা। একে অনেক শ্রীলঙ্কানই তাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। হাম্বানটোটাও চীনের মেগা প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোডের অংশ। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এমন আশঙ্কা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, হাম্বানটোটার চেয়ে এখানে অনেক কম ঋণ নেওয়া হচ্ছে।

পাকিস্তানের সমুদ্রবিষয়ক মন্ত্রী হাসিল বিজেঞ্জো বলেন, পারস্য উপসাগরে এক সময় ব্রিটেন ও রাশিয়া এবং পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তিনি  বলেন, ‘চীন খুব সহজে এখানে পৌঁছেছে। এ উষ্ণ পানির সমুদ্রে প্রবেশাধিকারের সুবিধার তুলনায় তাদের বিনিয়োগ কিছুই নয়।’

গাদারে চীনের সামরিক ঘাঁটি হতে পারে বলে গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়। ভারতও একই আশঙ্কা প্রকাশ করলে চীন তা প্রত্যাখ্যান করে। সে সময় চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী উ সিয়ান বলেছিলেন, পাকিস্তানে চীনের সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের বিষয়টি নিছক অনুমান ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০