নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আগামী বাজেটে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর অংশ হিসেবে আগামী দু-এক মাসেই কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো আপাতত একীভূত (মার্জার) করা হচ্ছে না। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো একীভূত হতে পারে। তারা এ প্রক্রিয়া শুরু করলে এরপর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কথা চিন্তা করবে সরকার।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে বিদায়ী বছরের শেষ কার্যদিবসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা বলেন।
নতুন বছরে ‘ব্যাংক খাতে আস্থার সংকট হবে না’ এমন দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক ফেল করার কোনো চান্স নেই।’
তিনি বলেন, ‘নতুন বছরে ব্যাংক খাতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আগামী দু’মাসের মধ্যেই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তবে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো ধরনের আভাস দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো একীভূতকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটি এখন সম্ভব হবে না। আর এগুলো একীভূতকরণের চিন্তা আপাতত সরকারের নেই। তবে আমি মনে করি, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে মার্জার করা যেতে পারে। তারা মুভ করলে তারপর আমরা সরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যাপারে চিন্তা করব। সরকার এখানে প্রো-অ্যাকটিভ স্টেপ নেবে না।’
বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংকটিকে এর উদ্যোক্তারাই শেষ করে দিয়েছেন। সরকার এটা দেখছে। ফারমার্স ব্যাংকের জন্য বেস্ট সল্যুশন হবে এটা যদি অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে মার্জার করে।’
ফারমার্স ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, নেওয়া প্রয়োজন। কারণ ফারমার্স ব্যাংকের বর্তমান অবস্থার জন্য তারাই দায়ী। তবে ব্যাংক দেউলিয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনো চান্স নেই। এর চান্স টোটালি নিল (শূন্য)।’
মানুষের স্বস্তি অনেক উচ্চমাত্রায় বিদায়ী বছর কেমন গেল জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সব মিলিয়ে এ বছরটা ভালোই গেছে। এ বছরে জ্বালাও-পোড়াও নেই। হরতাল নেই। হরতাল মানেই সহিংসতা। সেটা নেই। আর অর্থনীতির ক্ষেত্রেও মারাত্মক কিছু ঘটেনি।’
বিদায়ী বছরে ‘মানুষের স্বস্তি অনেক উচ্চমাত্রায় আছে’Ñএমন দাবি করে তিনি বলেন, ‘মানুষ অনেক ভালো আছে। দারিদ্র্যতা দূরীকরণে আমাদের যে ডিপ কমিটমেন্ট, এর কারণেই এটা হয়েছে। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা খুবই ভালো।’
‘বিদায়ী বছরে চালের দাম, পেঁয়াজের দাম ছিল নাভিশ্বাসে। তাহলে কীভাবে জনগণ স্বস্তিতে ছিল’Ñসাংবাদিকদের এমন কথার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফালোভী মানসিকতার কারণে চালের দামটা এত বেড়েছে। এটা হওয়া উচিত নয়। আমরা চেয়েছিলাম চালের দাম একটু বাড়–ক। সেটা কৃষকের খরচের কথা চিন্তা করেই ভেবেছি। কিন্তু সেটা হয়নি। কৃষকের উৎপাদন খরচ তখনই পুষে গেছে যখন চালের দাম ৩৮ টাকা ছিল। কিন্তু এখন সেটা ৬০ বা ৫৫ পর্যন্ত নিয়ে গেছে। এটা অবশ্য নামবে মার্চের দিকে। আমাদের একটা খাদ্য কমিটি আছে। জানুয়ারির দিকে আমরা বসব। সেখানে দেখব আমরা এই প্রাইসটাকে কন্ট্রোল করতে পারি কি না।’
রাজস্ব আদায় ও ভ্যাট প্রসঙ্গ রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাজস্ব আদায় বাড়ছে; কিন্তু আমি যে হারে চেয়েছিলাম, সেভাবে হচ্ছে না। যেভাবে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম, সেভাবে হচ্ছে না। তবে প্রজেক্টেড গ্রোথ রেটটা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। তারপরও আমি গ্রোথ রেট ২৫-৩০ শতাংশ আশা করেছিলাম। কারণ হচ্ছে, করদাতার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। নতুন করদাতার বেশিরভাগের বয়সই ৪০-এর নিচে। এটা তাদের একটা উন্নত মনের পরিচয়। আমার ধারণা, এসব যুবসমাজ মনে করে, আমি অর্থনীতি থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। তাই আমারও কিছু দেওয়া উচিত। এটা আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। কিন্তু এর যে রেজাল্ট আসা উচিত ছিল, ইজ নট দ্যাট কমফোর্টেবল। আরেকটু ভালো হওয়া উচিত ছিল। কারণ, করদাতার সংখ্যা বাড়ছে ঠিকই।’
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘আমাদের রেভিনিউ রেইজিং লেভেলটা ড্রামাটিক চেঞ্জ করতে হবে। পরবর্তী পাঁচ বছরে আমরা তা করব। আমরা এখনও লো পেয়িং টেক্স কান্ট্রি। আমাদের জিডিপি রেশিও কম। আমাদের রেভিনিউ জিডিপি রেশিও নেপাল থেকেও কম।’
মূল্য সংযোজন করে (ভ্যাট) কিছু সংশোধনী আসছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০-২১ সালের মধ্যে আয়কর থেকে যে রাজস্বপ্রাপ্তি, সেটা মূল্য সংযোজন করের প্রায় সমান হবে। আর মূল্য সংযোজন কর তো আমরা ২০১৯ বা ২০২০-এর আগে বাস্তবায়ন করছি না। তবে মূল্য সংযোজন করের ক্ষেত্রে আমি কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে আইএমএফের সুপারিশ অনুযায়ী আমরা ১৫ শতাংশ করছি না। আমি কয়েক বছরের রেটগুলো দেখেছি। এতে দেখা গেছে, চার শতাংশ বা পাঁচ শতাংশ হারে যেগুলো ছিল, সেগুলো থেকেই বেশি কালেকশন এসেছে। সে তুলনায় ১৫ শতাংশ থেকে কম এসেছে। তাই আমি নতুন আরেকটা সø্যাপ আনব। কিন্তু সেটা কি হবেÑতা আমি এখনও জানি না। এটা দুই স্তরবিশিষ্ট হতে পারে। দুই স্তরের ক্ষেত্রে একটি ১৫ শতাংশ আরেকটি সাত বা আট শতাংশ হতে পারে। আমি এটি পরবর্তী সরকারের জন্য রেখে যাচ্ছি। আমার ধারণা, সাবসিকোয়েন্ট সরকার আওয়ামী লীগেরই হবে। তাই আমার প্রস্তাব পরবর্তী সরকার বাস্তবায়ন করবে বলেই ধারণা।’
জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হতে পারে ৭.৫ শতাংশ
জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সাত দশমিক দুই শতাংশ হবে বলে আমি মনে করছি। এটা বোধ হয় তারচেয়ে ভালো হবে। কত হবেÑসেটা বলতে পারছি না। তবে মনে হয় সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ হতে পারে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের হিসাব তা-ই বলে। কারণ বাস্তবায়নের হার খুব ভালো। পাইপলাইনের অবস্থাও ভালো।’
বিশ্বব্যাংক কিংবা এডিবির পূর্বাভাসের দিকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, ‘কিছু পূর্বাভাস এসেছে যে, গত বছর থেকে এবারের জিডিপি গ্রোথ কম হবে। আমি এগুলো মানি না। আমার মনে হয়, এই ক্যালেন্ডার ইয়ার ধরলে অবশ্যই আগের চেয়ে ভালো হবে।’