এনবিআরের হয়রানি বন্ধের দাবি জানাল এফবিসিসিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক: সব ধরনের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করার পরও রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে অনেক সময় ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন ২০১৯ সাল পর্যন্ত পেছানো হলেও ব্যবসায়ীরা সে সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান সৎ ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হবে না এবং ঠিকমতো রাজস্ব পরিশোধে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে গতকাল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন বক্তব্য উঠে আসে।

স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল দুই লাখ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ সময়ে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেট চার লাখ ৬০ হাজার বা চার লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন। বাজেটের আকার বৃদ্ধি করা হলে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করে তা নির্ধারণ করা হয়। তখনই ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয় না। এ ধরনের বড় আকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা হয়। তখনই আইন ও বিধিবিধানের অপপ্রয়োগ, জুলুম ও হয়রানি বৃদ্ধি পায়।

তিনি আরও বলেন, শুল্ক, মূসক ও আয়কর অফিসগুলোতে সেবা প্রদানের মন-মানসিকতা আরও উন্নত করতে হবে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা যেন অফিসে গিয়ে সেবা নিতে হয়রানি বা বাড়তি খরচ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন এর নিশ্চয়তা দেওয়া প্রয়োজন। তাই সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে আগামী বাজেটে রাজস্বনীতি গ্রহণ করতে হবে। শিল্প ও ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই যেন খরচ বৃদ্ধি না পায়, সে দিকটি বিবেচনায় নিয়ে আয়কর, মূসক ও শুল্কনীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।

আগামী বাজেট সামনে রেখে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক সম্পর্কিত ১৫টি প্রস্তাব দেন এফবিসিসিআই সভাপতি। এতে পণ্য আমদানিতে অগ্রিম আয়কর আদায় প্রত্যাহার, জিপি (মোট মুনাফা) নির্ধারণে সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্ট গ্রহণ করা, আয়কর অধ্যাদেশের ১২০ ধারার অধীনে ফাইল রি-ওপেন বন্ধ, ব্যবসায়ীদের ঘোষিত এইচএস কোডে পণ্যের শুল্কায়ন, নতুন শুল্ক আইন বাস্তবায়ন, নতুন ভ্যাট আইনে প্রভাব বিস্তার পর্যালোচনা, মূল্য ঘোষণা পদ্ধতি বাতিল, রফতানির ক্ষেত্রে ভ্যাট বিধিমালা সহজকরণ ও ট্রেড লাইসেন্সসহ সব ধরনের লাইসেন্সের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ঘণ্টাব্যাপী মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীরা খাতভিত্তিক রাজস্ব-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার চিত্র তুলে ধরে প্রতিকার চান। বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ভ্যাট নিয়ে পোশাক রফতানিকারকদের হয়রানি করা হচ্ছে। আবার অডিটের নামেও হয়রানি করা হচ্ছে। এ থেকে রফতানিকারকরা মুক্তি চান।

অটো রি-রোলিং মিল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শহীদুল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও নতুন এক্সেল লোড নীতিমালার কারণে দেশে রডের দাম বাড়ছে। এ দুটো সমাধান হলে আবার রডের দাম কমে আসবে।

ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বেলায়েত হোসেন বলেন, রফতানি করা কন্টেইনার ফেরত এলে কাস্টমস সেটিকে আমদানি হিসেবে গণ্য করে অগ্রিম আয়কর আদায় করছে। শিল্পের স্বার্থে এ পদ্ধতি বাতিল করা উচিত।

মুদ্রণশিল্প সমিতির চেয়ারম্যান তোফায়েল খান বলেন, মুদ্রণশিল্পের ফিনিশড গুডস বইয়ের চেয়ে কাঁচামালের শুল্ক বেশি। এ বৈষম্য দূর করা উচিত। অন্যদিকে কাগজ মিলের কাছে ছাপাখানা ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়ছেন। বই ছাপানোর মৌসুমে নি¤œমানের কাগজ সরবরাহ করা হয়। ফলশ্রুতিতে নি¤œমানের বই পাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। এ সমস্যা সমাধানে শূন্য শুল্কে ছাপাখানা ব্যবসায়ীদের কাগজ আমদানির অনুমতি দিতে হবে।

এফবিসিসিআই পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা বলেন, ভ্যাট দিতে ভোক্তাদের অনীহা বেশি। কারণ ভ্যাটের হার বেশি। এ হার কমিয়ে দিলে ভ্যাট আদায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন দুবছর পেছানো হলেও পুরোনো আইনের বিধিমালায় নতুন আইনটির বিধিমালা ৭০-৮০ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাহলে নতুন করে পেছানোর কী মানে থাকল। এতে বরং জটিলতা তৈরি হতে পারে।

সবশেষে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘একটা সাধারণ অভিযোগ আছে যে, এফবিসিসিআই যেসব প্রস্তাব দেয়, সেগুলো বিবেচনায় না নিয়েই বাজেট প্রণয়ন করা হয়। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এবার আর এমনটি হবে না।’ তিনি বলেন, ‘শুল্ক-করের ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা দেখা দেয়, সেখানে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের অনেক দায় রয়েছে। তারা স্বচ্ছভাবে কাজ করতে চায় না। অনেক ক্ষেত্রে আমদানিকারকের কাছ থেকে বেশি অর্থ আদায় করে কম রাজস্ব পরিশোধ করে পণ্য খালাসের চেষ্টা করে। পরে অডিটে রাজস্ব ফাঁকি ধরা পড়লে আমদানিকারক হয়রানির শিকার হন।’ এসব বিষয় ঠিক করতে কিছুদিন সময় লাগবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০