জনগণের ওপর চাপতে যাচ্ছে এলএনজির বোঝা

মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ: বিশ্ববাজারে বেড়েই চলছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম। গত এপ্রিলে দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। এরই মধ্যে গ্যাস সংকট মেটাতে এলএনজি আমদানি শুরু করেছে বাংলাদেশ। এতে দাম বাড়ার কারণে বাড়তি দামের বোঝা পরতে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর।
এদিকে গত এপ্রিলে দেশে আসার পরও বসে আছে এলএনজিবাহী জাহাজ। সঞ্চালন লাইনের ত্রুটিতে জাতীয় গ্রিডে এ গ্যাস যুক্ত হয়নি। যদিও এলএনজি আমদানির যুক্তিতে এরই মধ্যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
এক হিসাবে দেখা গেছে বিশ্বজুড়েই এলএনজির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় অনেক দেশই নতুন করে এলএনজির ব্যবহার শুরু করছে। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী এলএনজির চাহিদা ছিল ২৮৫ ট্রিলিয়ন মেট্রিক টন। চলতি বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৫ ট্রিলিয়ন টন। ২০৩০ সালে এ চাহিদা দাঁড়াবে ৪৯০ ট্রিলিয়ন টন।
এদিকে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এলএনজির দামও। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এলএনজির দাম সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৪ সালে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ওই বছর প্রতি এমএমবিটিউ এলএনজির (জাপানের আমদানি) দাম দাঁড়ায় ১৬ ডলারে। ২০১৬ সালে তা ছয় দশমিক ৮৯ ডলারে নেমে আসে। এ যাবৎকালে সবচেয়ে কম দাম ছিল ২০১৬ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে, প্রতি এমএমবিটিইউ ছয় দশমিক ৬৮ ডলার। বিশ্বব্যাংক বলছে, গত নভেম্বর মাসে এ দর বেড়ে সাত দশমিক ৭৫ ডলারে দাঁড়ায়। আর চলতি বছরের প্রথমদিকে এর দাম হয় প্রতি এমএমবিটিইউ ৯ ডলার ৪০ সেন্ট। বিশ্বব্যাপী এলএনজির দাম বাড়ায় তা বাংলাদেশেও প্রভাব ফেলবে।
পেট্রোবাংলার প্রাক্কলনে দেখা যায়, প্রতি ঘনফুট এলএনজির দাম সাড়ে আট ডলার ধরলে প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বিক্রয়মূল্য হবে ৩৩ টাকা ৪৪ পয়সা। এক্ষেত্রে এলএনজির ক্রয়মূল্য হবে ২৫ টাকা ১৭ পয়সা। এর সঙ্গে ব্যাংক চার্জ (এলসি, কমিশন ইত্যাদি) দুই পয়সা, ভ্যাট তিন টাকা ৭৭ পয়সা, রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ দুই টাকা ১২ পয়সা, ট্রান্সমিশন, বিতরণ ও পেট্রোবাংলা মার্জিন ৮৮ পয়সা এবং আরপিজিসিএলের এলএনজি অপারেশন মার্জিন ৪০ পয়সা। সব মিলিয়ে বিক্রিপূর্ব ব্যয় দাঁড়াবে ৩২ টাকা ৩৬ পয়সা। এর সঙ্গে বিক্রিকালে ভ্যাট হিসাবে আরও যুক্ত হবে এক টাকা আট পয়সা। দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা হলে চূড়ান্তভাবে এর বিক্রিমূল্য দাঁড়াবে ইউনিটপ্রতি ৩৩ টাকা ৪৪ পয়সা।
এলএনজির সঙ্গে দেশীয় গ্যাসের (দেশীয় ২৭০০ ও এলএনজি ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট) মিশ্রণ করলে প্রতি ঘনমিটার মিশ্রিত গ্যাসের বিক্রিমূল্য দাঁড়াবে ১২ টাকা ৮৯ পয়সা। এক্ষেত্রে যেখানে দেশীয় গ্যাসের বিক্রয়পূর্ব ব্যয় চার টাকা ৬৩ পয়সা আর এলএনজির বিক্রিপূর্ব ব্যয় ৩২ টাকা ৩৬ পয়সা। মিশ্রিত বিক্রিপূর্ব ব্যয় ১২ টাকা ১২ পয়সা এবং বিক্রিকালে ভ্যাট যুক্ত হবে ৮৭ পয়সা। কিন্তু এলএনজি দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ কর হয় তাহলে মিশ্রিতি গ্যাসের (দেশীয় ২৭০০ ও এলএনজি ৫০০ মিলিয়ন ঘটফুট) বিক্রিমূল্য হবে ৯ টাকা ৬৯ পয়সা।
যদিও বিশ্বজুড়ে এলএনজির দাম বাড়ার কারণে আমদানি করা এলএনজিতেও এর প্রভাব পড়বে। বাড়তি দামের হিসাবও করে রেখেছে পেট্রোবাংলা। এলএনজির ক্রয়মূল্য ঘনফুট প্রতি ১০ দশমিক ৭৬ ডলার ধরে করা পেট্রোবাংলার হিসাবে দেখা যায় তখন প্রতি ঘনমিটার এলএনজির দাম হবে ৪১ টাকা ২৯ পয়সা।
তখন মিশ্রিত গ্যাসের দামও বাড়বে। এলএনজির সঙ্গে দেশীয় গ্যাসের (দেশীয় ২৭০০ ও এলএনজি ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট) মিশ্রণ করলে প্রতি ঘনমিটার মিশ্রিত গ্যাসের বিক্রিমূল্য দাঁড়াবে ১৫ টাকা। আর ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি হিসাবে (দেশীয় ২৭০০ ও এলএনজি ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট) বিক্রিমূল্য হবে ১০ টাকা ৯১ পয়সা।
এদিকে সঞ্চালন লাইনের ত্রুটির কারণে কারণে প্রায় দুই মাসেও ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে প্রথম কিস্তির এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এতে প্রতিদিনই অপচয় হচ্ছে গ্যাসের। অপচয়ের পাশাপাশি পরিচালন বাবদও আর্থিক ক্ষতি গুনতে হচ্ছে পেট্রোবাংলাকে। এলএনজির প্রথম কিস্তি নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল কক্সবাজারের মহেশখালীতে পৌঁছায় এলএনজিবাহী কার্গো। গত ১২ মে পাইপলাইনের মাধ্যমে এ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু এফএসআরইউ থেকে জিরো পয়েন্ট তথা জাতীয় গ্রিডের আগ পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার পাইপলাইনের বিভিন্ন অংশে ছিদ্র দেখা দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এরপর পুনরায় সরবরাহের তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৬ মে। এ সময়ের মধ্যেও ত্রুটি মেরামত না হওয়ায় দুই মাস ধরে সাগরে নোঙররত অবস্থায় বসে আছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ ঘনমিটার (৬০ হাজার ৪৭ টন) এলএনজিবাহী জাহাজটি।
এদিকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হলেও দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহের কথা থাকলেও সম্ভব হবে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ। চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত যে পাইপলাইন হওয়ার কথা ছিল তা এখনও হয়নি। মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। আনোয়ারা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করবে। আনোয়ারায় একটি সাবস্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা হয়ে আরও একটি গ্যাস পাইপলাইনে ফৌজদারহাট পর্যন্ত যাবে এলএনজি গ্যাস। ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রামের উদ্বৃত্ত গ্যাস নেওয়া হবে জাতীয় গ্রিডে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলএনজি আমদানির মাধ্যমে গ্যাস সংকট সমাধানের সম্ভব নয়। কারণ দিন দিনই এলএনজির দাম বাড়বে। ফলে বাংলাদেশের গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে যা সাধারণ মানুষের জন্য চাপের সৃষ্টি করবে। সে সঙ্গে শিল্প খাতের উৎপাদন খরচও বাড়বে।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যধাপক বদরুল ইমাম বলেন, এলএনজি কোনো সমাধান নয়। এটির ওপর নির্ভরশীলতা বরং এক সময় বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে। তাই দেশের অভ্যন্তরে গ্যাস খাতে অনিয়ম ও চুরি বন্ধ করতে হবে এবং সঠিক পরিকল্পনা মতো নতুন গ্যাসের অনুসন্ধান চালাতে হবে।

অর্থ পাচারের অভিযোগে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক বদিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রাজধানীর মতিঝিল থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। দুদকের উপপরিচালক জালাল উদ্দিন আহাম্মদ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, বদিউর রহমান ১৯৯৫ সাল থেকে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক। এছাড়া তিনি ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্যাংকের পরিচালক থাকাকালে বদিউর রহমান সিঙ্গাপুরে ২০০৩ সালে এমএস এরিয়েল মেরিটাইম প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি স্থাপন করেন। কোম্পানিটি তিনজন পরিচালক নিয়ে (দুজন শেয়ারহোল্ডার) যাত্রা শুরু করে। এর অনুমোদিত মূলধন ১০ লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার ও পরিশোধিত মূলধন ছিল ৫০ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার। এর মধ্যে বদিউর রহমানের বিনিয়োগ করা মূলধন ২৫ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার, যা বাংলাদেশি আট লাখ ২৫ হাজার টাকা। ২০০৪ সাল থেকে কোম্পানিটির একক মালিকানা অর্জন করে তা পরিচালনা করে আসছেন তিনি। এ সময়ে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি পেয়ে পাঁচ লাখ সিঙ্গাপুরি ডলারে উন্নীত হয়। ফলে মূলধন বাবদ বদিউর রহমানের টাকার পরিমাণ এক কোটি ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকা।
তিনি আরও জানান, দুদকের অনুসন্ধানে এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে মূলধনের বৈধ কোনো উৎস দেখাতে পারেননি তিনি। অবৈধ সুবিধা নিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে এই টাকা পাচার করে বিনিয়োগ করেছেন। এ অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে দুদক বদিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০