বড় মুনাফায় স্বপ্নবাজ বিনিয়োগকারী

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ ও পলাশ শরিফ: বিনিয়োগকারী হাসান মাহমুদ। আগাম সংবাদ পেয়ে মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্সের শেয়ারে ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। তিন মাস না পেরোতে সেই শেয়ার তিনি বিক্রি করেছেন এক কোটি ৬০ লাখ টাকায়। লাভ এক কোটি ১৫ লাখ টাকা। তিনি এখন গুলশানে ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্ন দেখছেন। একই অবস্থা বিনিয়োগকারী শাফায়েত হোসেন মুরাদের। ব্রোকারেজ হাউজের এক বন্ধুর খবরে এক মাস আগে বিডি অটোকারসের শেয়ারে ৩৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। সম্প্রতি সেই শেয়ার ৭৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন ওই বিনিয়োগকারী। লাভের টাকায় এখন টয়োটা হ্যারিয়ার কেনার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
জানা গেছে, মন্দা বাজারেও বেশ আছেন এসব বিনিয়োগকারী। বাজার নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ নেই। ৫০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে মাসে পাঁচ লাখ টাকা মুনাফা করেনÑএ রকম বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কম নয়। তারা আশাবাদী, স্বপ্নবিলাসী ও ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন। বাজার সম্পর্কে তাদের ধারণা পরিষ্কার। তাদের রয়েছে বড় নেটওয়ার্ক। এসব বিনিয়োগকারীই বাজারে ভালো অবস্থানে রয়েছেন।
অন্যদিকে বছরের শুরুতে একটি মৌল ভিত্তিসম্পন্ন ব্যাংকের শেয়ারে ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বিনিয়োগকারী রাসেল আহমেদ। লোকসানের কারণে বর্তমানে তার পুঁজি ঠেকেছে ৩৫ লাখ টাকায়। একই অবস্থা জাহানারা জামানেরও। একই সময়ে তিনিও মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগ করে ২৫ লাখ টাকা লোকসান গুনেছেন। কোম্পানির দর বাড়া-কমার বিষয়ে তাদের কাছে কোনো আগাম খবর ছিল না। দর বাড়তে দেখে শেয়ার কিনে বিপদে পড়েছেন তারা।
বিনিয়োগকারী জাহানারা জামান কিংবা রাসেল আহমেদের মতো অবস্থা লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর। বাজারের সার্বিক অবস্থা মন্দা থাকায় মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেও লোকসান গুনে নিঃস্ব হচ্ছেন তারা। অথচ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কিংবা কারসাজিকারী চক্রের দেওয়া আগাম তথ্য পেয়ে দুর্বল কোম্পানি বিনিয়োগ করেও আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন অনেকে। সংখ্যায় কম হলেও এই বাজার থেকে তারাই মুনাফা করছেন। স্বল্প সময়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। আর তাদের ফাঁদে পড়েই নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বাজারে যখন ভালো ইনভেস্টরের অভাব থাকে তখন ছোট ছোট কোম্পানির শেয়ার নিয়ে এমন কারসাজির খবর পাওয়া যায়। শেয়ারসংখ্যা কম থাকায় তারা এসব কোম্পানি নিয়ে সহজে গেম করতে পারে। বিনিয়োগে ঝুঁকি এড়াতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।’
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, স্বল্প মূলধনি ও বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্সের শেয়ারদর গত তিন মাসেরও কম সময় আগে ৯০০ টাকা ছিল। তখন ওই শেয়ারের দর তিন হাজার টাকা অতিক্রম করবে বলে বাজারে গুজব রটানো হয়। এরপর থেকে অস্বাভাবিকহারে বাড়তে থাকে ওই শেয়ারটির দর। অস্বাভাবিক দর বাড়ার পর অবস্থায় ডিএসই দরবৃদ্ধির কারণ জানতে তিন দফায় নোটিস দেয়, যার জবাবে ‘শেয়ারদর বাড়তে পারে এমন কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই’ বলে উল্লেখ করে তিনবারই গৎবাঁধা উত্তর দেয় কোম্পানিটি। দায়সারা নোটিস আর মনগড়া উত্তরসম্বলিত চিঠি চালাচালির মধ্যেই কোম্পানিটির শেয়ারদর তিন হাজার ৬০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। কোম্পানির প্রভাবশালী এক পরিচালকের হাত ধরে এমন কারসাজির অভিযোগ উঠলেও কারসাজির নায়করা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্সের মতো একই গ্রুপের ওপর কোম্পানি মুন্নু সিরামিকের শেয়ারের দরও কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে। গত এক বছরের ব্যবধানে ওই কোম্পানির শেয়ারদর ৭০৫ শতাংশ বেড়েছে। এক বছর আগে ওই শেয়ারটির দর ছিল ৩৮ টাকা, যা গতকাল সর্বশেষ ৩০৬ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
এদিকে এক মাস আগেও বিডি অটোকারসের শেয়ারদর ছিল ১১৭ টাকা। গতকাল ওই শেয়ারটি সর্বশেষ ৩৬৭ টাকায় লেনদেন হয়েছে। ওই শেয়ারটি নিয়েও বাজারে গুজব রয়েছে। উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সহায়তায় একটি কারসাজি চক্র কৃত্রিমভাবে ওই কোম্পানির শেয়ারদর বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুঞ্জীভূত লোকসানে থাকা কোম্পানির দর বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শুধু ওই তিনটি কোম্পানিই নয়, গত কয়েক মাসে রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, মডার্ন ডায়িং, ওয়াটা কেমিক্যাল, কেঅ্যান্ড কিউ, ফার্মা এইডস, আজিজ পাইপস ও সোনালী আঁশসহ অধিকাংশ স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই শেয়ারদরে উল্লম্ফনে কারসাজির সঙ্গে জড়িতরা লাভবান হচ্ছে। আর শেয়ারদর অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছানোর পর বিক্রি শুরু করে সেই চক্র। আর অতিরিক্ত দামে সেই শেয়ার কিনে পরে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই- নাহারিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু বিনিয়োগকারী রয়েছেন যারা না বুঝে অতিমূল্যায়িত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। পরে তারা চরম মূল্য দিয়ে নিঃস্ব হয়ে বাজার থেকে বের হয়ে যান। কিন্তু তারা যদি আগে সাবধান হন তাহলে এমন ফল ভোগ করতে হয় না। তাই সব সময় তাদের ক্রেতা সাবধাননীতি অবলম্বন করা উচিত।’

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০