মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। অবিরাম দরপতনের পর সম্প্রতি কিছুটা চাঙা হয়েছিল দেশের পুঁজিবাজার, কিন্তু তা স্থায়ী হতে পারেনি। কয়েকদিন না যেতেই পুঁজিবাজারে আবারও ছন্দপতন হয়েছে। পাশাপাশি সন্তোষজনক অবস্থায় নেই লেনদেন। লেনদেন ঘুরপাক খাচ্ছে ৪০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে, যা স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় নিজেদের পুঁজি নিয়ে দোলাচলে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
আলাপকালে বাজারসংশ্লিষ্ট জানান, ডিএসইতে গড়ে প্রতিদিন এক হাজার কোটি টাকার উপরে লেনদেন হওয়া উচিত। কিন্তু বাজার সামান্য ঘুরে দাঁড়ালেও হাজার কোটির টাকার উপরে লেনদেন চোখে পড়ে না। তাদের মতে, ডিএসইতে এখন যে পরিমাণ প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে তাতে এক হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা লেনদেন খুবই স্বাভাবিক।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তারা বলেন, বাজার কিছুদিন বেশ ভালো ছিল। এরপর দর সংশোধন হতেই পারে। কিন্তু লেনদেন হতে হবে সন্তোষজনক। কিন্তু এ বাজারে যে লেনদেন হচ্ছে তা মোটেও সন্তোষজনক নয়। এটা দেখে বোঝা যায় বাজারে তারল্য সংকট চলছে। এটা দূর করতে না পারলে বাজার পরিস্থিতি ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেন তারা। তবে কেউ কেউ বাজারের এ পরিস্থিতির কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
গত চার কার্যদিবসে সূচক পাঁচ হাজার ৫২১ পয়েন্ট থেকে পাঁচ হাজার ৪০৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এ সময়ের মধ্যে সূচকের পতন হয়েছে ১১৭ পয়েন্ট। যদিও বড় পতনের পর এর আগের ছয় কার্যদিবসে সূচক বাড়ে ১৫৬ পয়েন্ট।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক বাজার পতনের কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। বাজারে তারল্য সংকট রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে বাজারে তারল্য সংকট কেটে গিয়েছিল। বর্তমানে হয়তো আবার সে সংকট দেখা দিতে পারে। তবে আমি বলল বিনিয়োগকারীদের হতাশা থেকেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলেন, পুঁজিবাজার একটি চক্রের হাতে বন্দ্বি হয়ে রয়েছে; যে কারণে বাজার তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে না। তাদের অভিযোগ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তাদের সঠিক ভূমিকা পালন করছে না। তারা বিমাতা সূলভ আচরণ করছে। আর তাদের কারণেই নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারা সঠিক ভূমিকা পালন করলে বাজার সঠিক চেহরায় ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, সেল প্রেশারের কারণেই সম্প্রতি শেয়ারের দরপতন হয়েছে। তাদের যুক্তি পতনের সময় যারা শেয়ার কিনেছেন, কয়েক দিন বাজার ভালো থাকায় তারা মুনাফায় ছিলেন। যে কারণে তারা মুনাফা করতেই শেয়ার বিক্রি করেছেন। আর এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা, যে কারণে বাজারে হঠাৎ করেই ছন্দপতন হয়েছে। তারা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে অর্থ না আনলে তারল্য সংকট দূর হবে না। আর এমন চলতে থাকলে লেনদেনও সন্তোষজনক হবে না।
এ প্রসঙ্গে মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীন বলেন, পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন থাকবে এটা স্বাভাবিক। এটা মেনে নিয়েই বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা করতে হবে। অকারণে ভেঙে পড়লে চলবে না। পুঁজিবাজার ধৈর্য্যরে জায়গা। তাই এখানে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার মাশুল দিতে হয়।
একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজার উত্থান-পতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচা তেমন ভূমিকা রাখে না। এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। তারা শেয়ার কেনাবেচা করলেই শুধু বাজারের সার্বিক চেহারা বদলে যায়। তিনি বলেন, এ বাজারে সবাই প্রফিট করতে আসেন। মুনাফা পেলে সবাই শেয়ার বিক্রি করবেন এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কীভাবে নিরাপদে থাকবে সেটা তাদেরই ভাবতে হবে।
পুঁজি নিয়ে অস্বস্তিতে বিনিয়োগকারীরা
