উন্নত পুঁজিবাজারের দেশ অর্থনীতিতেও শক্তিশালী

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

এনটিভির ১৬ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় মার্কেট ওয়াচের বিশেষ পর্বে গতকাল ছয়জন আলোচক উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন-ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান, আহসানুল ইসলাম টিটু এবং মো. শাকিল রিজভী। আরও ছিলেন, ডিএসইর সাবেক পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীন, অর্থনীতিবিদ ড. মিজানুর রহমান এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান। তারা পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
রকিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করে বড় বড় শিল্প-প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের কথা বলেছেন। কিন্তু এ কথা আমরা কেউই মানছি না। বাংলাদেশ ব্যাংকও এটিকে অনুসরণ করছে না। বেশিরভাগই ব্যাংক থেকে টাকা নিতে পছন্দ করে কিন্তু পুঁজিবাজারকে দেখে না। আর এমন যদি চলতে থাকে তাহলে সফলতা আসবে না। তারপরও আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া সরকার সবসময় বাজারের ভালো চায়। কিন্তু সরকারি একটি শেয়ারও আমরা বাজারে আনতে পারিনি। বিদ্যুৎ প্রকল্প, টেলিটকসহ অনেক সরকারি শেয়ারই বাজারে আনা যায়নি। টেলিটকের সম্প্রসারণের জন্য পুঁজিবাজার থেকে টাকা না নিয়ে আমরা বিদেশ থেকে টাকা আনছি। আর এটি ঠিক নয়। এক বছর আগে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন আমরা পাঁচ-ছয়টি বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নিয়ে আসবো। অথচ এগুলোর একটিও পুঁজিবাজারে আসেনি।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, গত ১০ বছরে দেশের সবচেয়ে প্রবৃদ্ধি সম্পন্ন খাত হচ্ছে জ্বালানি খাত। আর এ খাতের উন্নয়নের জন্য যে বিনিয়োগ দরকার ছিল তার পরিমাণ কিন্তু ব্যাপক আকারের। আর এ অর্থের জোগান দেশের পুঁজিবাজার থেকে নেওয়া গেলে বাজারের জন্য ভালো হতো। এ ব্যাপারে আমাদের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু উনি আমলাদের কাছ থেকে সেভাবে সহযোগিতা পাননি। কারণ তারা এডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে ঋণ খোঁজে। কারণ সেখানে বিদেশ ভ্রমণ, প্রকল্প, প্রকল্প প্রধান, গাড়ি-বাড়িসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকে। কিন্তু পুঁজিবাজারে এ সুযোগ-সুবিধাগুলো নেই। যে কারণে তারা পুঁজিবাজারের ধারের কাছ দিয়েও যেতে চায় না।
মো. শাকিল রিজভী বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, পুঁজিবাজারের জন্য যে শিক্ষা তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা আগে বাজেটে ফাইনান্সিয়াল প্রণোদনা, ট্যাক্স কমানো ইত্যাদি চেয়েছি। কিন্তু একজন শিক্ষিত বিনিয়োগকারী ছাড়া ভালো বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। আর এ জায়গাগুলোতে মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানটি বেশ ভালো ভূমিকা রেখেছে বলেই মনে করি।
খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীন বলেন, পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগকারীরা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। যা আমাদের জন্য একটি বড় ধরনের সতর্কবার্তা। দেশের পুঁজিবাজারে অনেক কোম্পানি এসেছে কিন্তু সে তুলনায় আমরা বিনিয়োগকারী আনতে পারিনি। আর এটি আমাদের একটি ব্যর্থতা। তবে বাজারে না বুঝেশুনে অনেক বিনিয়োগকারীরা আসেন। তারা মনে করেন এখানে শুধু কেনা আর বেচা ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই। কিন্তু এখানে আসলে অনেক কিছু শেখার আছে, অনুসন্ধান করার আছে এবং অনেক টেকনিক্যাল বিষয়ও আছে। তাছাড়া পুঁজিবাজারে ঘনঘন নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে বাজার দাঁড়াতে পারছে না বলে মনে করি।
মিজানুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন যে, পুঁজিবাজারকে সম্ভাবনাময় জায়গায় যেতে হলে বিনিয়োগকারীদের বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং তাদের সচেতন ও শিক্ষিত করতে হবে। আর এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যেও একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। এছাড়া পুঁজিবাজার বিনিয়োগ শিক্ষা কর্মসূচিটি বাজার সম্প্রসারণে ভালো ভূমিকা রাখবে।
মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, কথায় আছে, যে দেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালী সে দেশের পুঁজিবাজার তত শক্তিশালী। আবার উল্টোদিকে যে দেশের পুঁজিবাজার যত শক্তিশালী সে দেশের অর্থনীতি তত শক্তিশালী। কাজেই উভয়ই একটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটিকে বাদ দিয়ে আর একটিকে চিন্তা করা যায় না। তাই এ একটি দেশের উন্নয়নের জন্য এ দুটির উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০