বড় হচ্ছে অস্বাভাবিক দরের কোম্পানির তালিকা

শেখ আবু তালেব: সাম্প্রতিক সময়ে দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়াই দর বাড়ছে বেশকিছু কোম্পানির শেয়ারের। অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিগুলোর কাছে ব্যাখ্যাও চেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তারপরও বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির দর বৃদ্ধি থামছে না। বরং দর বৃদ্ধির কারণে বিতর্কিত কোম্পানির তালিকা বাড়ছে। কারসাজি এড়াতে দুর্বল-বিনিয়োগের ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির লেনদেন স্থগিতের দাবি করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী ও বিশ্লেষকরা।
অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি শুরু হয়েছে প্রকৌশল খাতের কোম্পানি মুন্নু জুট স্টাফলারসের শেয়ারদর দিয়ে। গত জানুয়ারিতে ৬৫৫ টাকায় থাকা শেয়ারটির দর সর্বোচ্চ তিন হাজার ৬২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এখন লেনদেন হচ্ছে তিন হাজার ১৯৫ টাকায়। মাত্র সাত কার্যদিবসে কোম্পানিটি বাজার মূলধন হারিয়েছে ১১ কোটি টাকা। সর্বশেষ পর্যায়ে শেয়ারটির ক্রেতারা এখন লোকসানে রয়েছেন। এতে পুঁজি হারিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন অতি উৎসাহী ক্রেতারা। একই গ্রুপের আরেক কোম্পানি মুন্নু সিরামিকেরও দর বৃদ্ধি হচ্ছে লাগামহীনভাবে। ৩৯ টাকার শেয়ারটি গতকাল দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ২৯৯ টাকায়। এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৭০৬ শতাংশের বেশি।
স্বল্প মূলধনি এসব কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধি ও প্রভাব নিয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ গতকাল শেয়ার বিজকে বলেন, একটি চক্র সব সময়ই বাজারে থাকে। এ অসঙ্গতি আমাদের পুঁজিবাজারের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিগুলোর ট্রেড (লেনদেন) সাসপেন্ড করতে পারে। তাহলে তারা একটি বার্তা পাবে। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
দর বৃদ্ধির অস্বাভাবিক তালিকায় সম্প্রতি আরও যুক্ত হয়েছে ওয়াটা কেমিক্যাল, ফার্মা এইডস, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বিডি অটোকারস লিমিটেড, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, ওরিয়ন ইনফিউশন, লিবরা ইনফিউশন, রিজেন্ট টেক্সটাইল, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল, অরামিট সিমেন্ট, এইচআর টেক্সটাইল মিলস, জুট স্পিনার্স, ফু-ওয়াং ফুড, এপেক্স ফুটওয়ার, অ্যামবি ফার্মা, স্টাইল ক্রাফট, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, মডার্ন ডায়িং, কে অ্যান্ড কিউ, আজিজ পাইপস, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, জেমিনি সি ফুড, শ্যামপুর সুগার ও সোনালি আঁশসহ অধিকাংশ স্বল্প মূলধনি কোম্পানি।
অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির এ তালিকায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে ড্রাগন সোয়োটার অ্যান্ড স্পিনিং লিমিটেড। এসব কোম্পানির শেয়ারদর গত এক বছরে ২০ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন একশ্রেণির বিনিয়োগকারী।
জানা গেছে, স্বল্প মূলধনি এসব কোম্পানির শেয়ার সংখ্যাও কম। এর মধ্যে স্টাইলক্র্যাফটের ৯ লাখ ৯০ হাজার, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের ৯ লাখ ৯৪ হাজার, লিবরা ইনফিউশনের ১২ লাখ ৫২ হাজার, মডার্ন ডায়িংয়ের ১৩ লাখ ৬৮ হাজার, সাভার রিফ্যাক্টরিজের ১৩ লাখ ৯৩ হাজার, জুট স্পিনার্সের ১৭ লাখ, রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের ২০ লাখ, নর্দান জুটের ২১ লাখ ৪৩ হাজার, অ্যামবি ফার্মার ২৪ লাখ, সোনালি আঁশের ২৭ লাখ ১২ হাজার, ফার্মা এইডের ৩১ লাখ ২০ হাজার শেয়ার রয়েছে।
এছাড়া জেমিনি সি ফুডের ৩৭ লাখ ১৩ হাজার, বিডি অটোকারসের ৩৮ লাখ ৬৩ হাজার, রেকিট বিনকিজারের ৪৭ লাখ ২৫ হাজার, কে অ্যান্ড কিউর ৪৯ লাখ তিন হাজার, শ্যামপুর সুগারের ৫০ লাখ, আজিজ পাইপের ৫০ লাখ ৯৩ হাজার এবং এপেক্স ফুডের ৫৭ লাখ তিন হাজার শেয়ার রয়েছে পুঁজিবাজারে।
২৬টিরও বেশি এসব কোম্পানি গত এক বছরে নতুন কোনো বিনিয়োগে যায়নি। দ্রুত যে নতুন কোনো বিনিয়োগ বা ব্যবসা সম্প্রসারণের কোনো পরিকল্পনাও নেই। দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই শেয়ারদর উল্লম্ফনের পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী কারসাজি চক্র। স্বল্প ও কম শেয়ারের এসব কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি করে লাভাবান হচ্ছেন তারা। শেয়ারদর অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছানোর পর বিক্রি শুরু করে সেই চক্র।
পরে অতিরিক্ত দামে সেই শেয়ার কিনে পরে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এতে পুঁজিবজার নিয়ে নেতিবাচক ধারণা যাচ্ছে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ইমেজ নষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে।
অবশ্য এসব কোম্পানির কাছে দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়েছিল ডিএসই। চিঠির উত্তরে তারা জানিয়েছে, কোনো কারণ জানে না কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। কোম্পানির এখন নতুন কোনো বিনিয়োগ পরিকল্পনাও নেই।
অপরদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দাবি করেছেন, হাতেগোনা এসব কোম্পানির কারণে বাজার অস্বাভাবিক আচরণ করছে। ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারদরেও প্রভাবিত হয়ে পতনের দিকে যাচ্ছে। হুট করেই কারসাজি এ চক্রটি বাজার ছেড়ে গেলে পড়ে যাবে সূচক। বড় অঙ্কের বাজার মূলধন হারাবে পুঁজিবাজার। একটি চক্র লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ বিনিয়োগকারী। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকেই হস্তক্ষেপ করতে হবে। কারসাজিচক্রকে শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০