২৮ বছর পর সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড

ক্রীড়া ডেস্ক: ফেভারিটদের পতনের এই বিশ্বকাপে দাপটে শিরোপা জয়ের পথে আরেকটু পথ এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড। ট্রফি জয়ের আনন্দ থেকে আর মাত্র দুটো ম্যাচ দূরে ১৯৬৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা। দুটো জয় ফের উৎসবে ভাসিয়ে দেবে তাদের। গতকাল সামারা অ্যারেনায় দুর্দান্ত দাপটে খেলে ইংলিশরা ২-০ গোলে হারিয়েছে চেনা প্রতিপক্ষ সুইডেনকে। এই জয়ে ১৯৯০ সালের ইতালি বিশ্বকাপের পর আবারও সেমিফাইনালে উঠল ইংল্যান্ড। ২৮ বছর পর নতুন প্রাপ্তি যোগ হলো ইংলিশ ফুটবলে।
ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালে তুলতে একটি করে গোল করেন হ্যারি ম্যাগুইয়া ও ডেলে আলি। আলাদা করে বলতেই হবে গোলরক্ষক পিকফোর্ডের কথা। কেননা ইংলিশ এ তারকা গতকাল সুইডিশ ফরোয়ার্ডদের জন্য হয়ে ওঠেন শক্ত প্রাচীর। প্রতিপক্ষের ৯টি দুর্দান্ত আক্রমণ রুখে দেন তিনি। তাতে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিতে ওঠার পথটা অনেকাংশে সহজই হয়ে যায় ১৯৬৬ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
সামারা অ্যারেনায় গতকাল সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ের শুরুটা ভালো ছিল না ইংল্যান্ডের। সেই সুযোগে ম্যাচের ১৫ মিনিট পর্যন্ত ১৯৬৬ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের রক্ষণে চাপ তৈরি করে সুইডেন। ভাগ্য ভালো হলে দলটি লিড নিতে পারত ১৩তম মিনিটেই। কিন্তু সতীর্থের বাড়ানো বল আয়ত্তে নিয়ে ২৫ গজ দূর থেকে জোরালো শটে গোল করতে পারেননি ভিক্তর ক্লসন। এরপর হঠাৎ করে ঘুমন্ত ইংল্যান্ড জেগে ওঠে। বলতে গেলে বিরতির আগ পর্যন্ত একটানা ইংলিশরা প্রথম পক্ষের রক্ষণের পরীক্ষা নেয়। ১৯ মিনিটে রাহিম স্টার্লিং দারুণভাবে বল টেনে নিয়ে চলে যান একদম সুইডেনের বক্সের কাছাকাছি। শেষ মুহূর্তে তিনি এক ঝটকায় বলটা দিয়ে দেন দৌড়ে আসা হ্যারি কেইনকে। বক্সের একটু বাইরে মাঝ থেকে জোরালো শটও নিয়েছিলেন কেইন, একটুর জন্য সেটা বেরিয়ে যায় গোলপোস্টের ডানদিক দিয়ে। তবে ৩০তম মিনিটে অ্যাশলে ইয়াংয়ের কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে মাথা ছুঁইয়ে ঠিকই গোল করে থ্রি লাইনসদের এগিয়ে দেন হ্যারি ম্যাগুইয়ার। সুইডিশ গোলরক্ষক রবিন ওলসেনের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিল না। এ নিয়ে ইংল্যান্ডের হয়ে এটাই ম্যাগুইয়ার প্রথম গোল।
এগিয়ে যাওয়ার পর আক্রমণের ধার আরও বেড়ে যায় ইংল্যান্ডের। প্রথমার্ধের ঠিক আগ মুহূর্তে ৪৪তম মিনিটে নিশ্চিত একটি গোলের সুযোগ মিস করে বসেন রাহিম স্টার্লিং। জর্ডান হ্যান্ডারসনের উঁচু করে বাড়ানো বল বক্সের মধ্যে একা পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সুইডিশ গোলরক্ষক ওলসেনকে একা পেয়েও ম্যানচেস্টার সিটির এ মিডফিল্ডার সুযোগটা নষ্ট করেন। তাতে কিছুটা হলেও হতাশ হয় ইংল্যান্ড।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ইংল্যান্ডকে নিশ্চিত গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। সুইডিং তারকা ফরোয়ার্ড মার্কাস বার্গ ইংলিশ অ্যাশলে ইয়াংকে ফাঁকি দিয়ে গোলপোস্টে নেন দুর্দান্ত শট। কিন্তু গোলরক্ষক পিকফোর্ড বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁ হাত দিয়ে রুখে দেন বল। এর কিছুক্ষণ পরই লিড বাড়ানো দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন সেই ম্যাগুইয়ার। কিন্তু হ্যারি কেইনের ক্রস থেকে রাহিম স্টার্লিংয়ের কাছ থেকে উঁচু হয়ে আসা বলে এবার আর ঠিকমতো হেড করতে পারেননি। তবে এর পাঁচ মিনিট পর সেটা পুষিয়ে দেন ডেলে আলি। ডান দিক থেকে জেসি লিনগার্ডের মাপা ক্রসে কাছ থেকে হেডে ব্যবধান বাড়ান তিনি। এর ফলে ইংল্যান্ডের সেমিফাইনালে ওঠার পথও অনেকটায় পরিষ্কার হয়। তবে হাল ছেড়ে দেয়নি সুইডেন। ৬৩তম মিনিটে ভিক্তর ক্লসন ও মার্কাস বার্গের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড। এর দুই মিনিট পরই ভিক্তর ক্লসন জালে বল জড়ানোর ডাবল সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু এবারও তার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন সেই পিকফোর্ড। প্রথম পর্যায়ে তার শট কোনোমতে রুখে দেন পিকফোর্ড। সেই বল আবার চলে যায় ক্লসনের কাছে। এবার তার শট হ্যান্ডারসনের গায়ে লেগে প্রতিহত হয়।
৬৬তম মিনিটে ইংল্যান্ডের লিড হতে পারত ৩-০। কিন্তু ম্যাগুইয়ারের ভলি করা বল চলে যায় সুইডেনের ক্রসবারের ওপর দিয়ে। এর কিছুক্ষণ পরই ১০ গজ দূর থেকে বার্গের দুর্দান্ত শট অসাধারণ দক্ষতায় প্রতিহত করেন পিকফোর্ড। এ নিয়ে ইংলিশ এ গোলরক্ষক সুইডিশদের ৯ নম্বর প্রচেষ্টা রুখে দেন। তাতে দারুণ হতাশ প্রতিপক্ষ। শেষ পর্যন্ত এ আক্ষেপটা থেকেই গেল দলটির। অন্যদিকে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দে মেতে ওঠে ইংল্যান্ড।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০