নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে নতুন অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে মুদ্রানীতির প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, নতুন মুদ্রানীতির ধরন কেমন হবে, সে বিষয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পক্ষের মতামত নেওয়া শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নির্বাহী পরিচালক ও জেনারেল ম্যানেজারদের (জিএম) সঙ্গে বসছেন মুদ্রানীতি তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমিটি।
সূত্র জানায়, মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাবেক এবং বর্তমান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্টজনের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বিভিন্ন ধাপে এ বৈঠক শেষ করা হবে। এসব বৈঠকে আসা পরামর্শের আলোকে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের নতুন মুদ্রানীতি তৈরি করা হবে।
গতকালের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও জিএমদের কাছ থেকে মতামত নিয়েছে গভর্নর। বৈঠকে মুদ্রানীতির বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে।
এ সময় ব্যাংকের নতুন সুদহার নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
এর আগের মুদ্রানীতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পূর্বের মুদ্রানীতি অনেকটা সংযত ছিল। তবে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ ব্যাপকহারে বাড়িয়ে দেয়। কোনো কোনো ব্যাংক এডিআর (ঋণ-আমানত অনুপাত) হার লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ করে। গত অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক দুই শতাংশ। তবে সর্বশেষ হিসাবে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। ঋণ বিতরণের আইনি সীমা থাকলেও কোনো কোনো ব্যাংক সে সীমা লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরে জাতীয় নির্বাচনের কারণে কালো টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বাজারে নগদ অর্থের প্রবাহে লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল গত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে। এছাড়া ঋণ প্রবৃদ্ধি মাত্রাতিরিক্ত বাড়ার কারণে ঋণের লাগাম টেনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ আমানত অনুপাত হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে ব্যাংকগুলোর জোড়াজুড়িতে নতুন এই হার কার্যকরের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা বা এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ছয় মাস অন্তর আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে তার একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
কতিপয় দুর্বৃত্তের কর্মকাণ্ডের কারণে চিকিৎসাসেবার সুনাম নষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, দেশে অনেক স্বনামধন্য চিকিৎসক এবং ভালো মানের চিকিৎসাসেবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কতিপয় ভুল চিকিৎসার ভয়ে রোগীরা পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাচ্ছেন। এতে দেশীয় মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। তাই আদালত এ ধরনের পরিস্থিতি কমিয়ে আনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদকে নির্দেশনা দেন।
গতকাল এ-সংক্রান্ত এক রুলের শুনানিকালে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।
আদালতে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত। তার সঙ্গে ছিলেন সুভাষ চন্দ্র দাস। অন্যদিকে ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমিনুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
এর আগে চুয়াডাঙ্গা শহরের ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে আয়োজিত চক্ষুশিবিরে চিকিৎসা নিতে এসে চোখ হারানো ২০ জনের প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু সেই রুলের কোনো জবাব আদালতে দাখিল না করায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনকে ব্যাখ্যা দিতে তলব করেন আদালত। ৯ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. মো. খাইরুল আলম আদালতে হাজির হন।
শুনানির শুরুতে আদালতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. মো. খাইরুল আলম রুলের বিষয়ে তাদের লিখিত জবাব দাখিলের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন। তখন আদালত বলেন, ‘লিখিত জবাব দাখিলের জন্য সময় পাবেন। যেহেতু (স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন) দুজনই আছেন, তাই আপনাদের বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে শুনব।’
এরপর আদালত সিভিল সার্জনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘চক্ষুশিবির করার আগে আপনার অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কিনা?’ জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘না, নেয়নি।’
এরপর স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য শুনতে চান আদালত। শুরুতে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর আবুল কালাম আজাদকে দেখিয়ে আদালত বলেন, ‘চট্টগ্রামে যা (চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক মালিকরা চিকিৎসাসেবা বন্ধের ঘোষণা) হয়েছে, সেটি দুঃখজনক। গতকালের (৯ জুলাই) মামলার সঙ্গে এটি সম্পর্কিত নয়। যেহেতু আপনি (স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক) আছেন, তাই বলছিÑমানুষ বিপদে পড়লে তিন পেশার লোকের কাছে যায় পুলিশ, আইনজীবী ও ডাক্তার। তিনটি পেশা যদি কিছু কিছু দুর্বৃত্তের কারণে ধ্বংস হয়, তবে মানুষ বিপদে পড়বে। মেয়েটাকে (চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে রাফিদা খান রাইফার মৃত্যু) তো ফিরিয়ে আনা যাবে না। ডাক্তাররা দেবতা নন। আমাদের (মানুষের) ভুল হবে বলে আমাদের একটা উচ্চ আদালত রয়েছে। ভুলটা অন্যায় নয়। কিন্তু ভুলটা জাস্টিফাই (যথাযথ) করার জন্য যদি হরতাল (ধর্মঘট) ডাকা হয়, তবে তা অন্যায়।’
আদালত আরও বলেন, ‘কতিপয় দুর্বৃত্তের কর্মকাণ্ডের কারণে চিকিৎসাসেবার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। দেশে অনেক স্বনামধন্য চিকিৎসক ও ভালোমানের চিকিৎসাসেবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কতিপয় ভুল চিকিৎসার ভয়ে রোগীরা পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাচ্ছেন। এতে দেশীয় মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। তাই আদালত এ ধরনের পরিস্থিতি কমিয়ে আনার জন্য আপনাকে (স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ) বলা হলো।’
এরপর প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ আদালতকে বলেন, ‘আমরা মহামান্য আদালতের সঙ্গে একমত। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গায় চিকিৎসা নিতে আসা চোখ হারানো ২০ জনের বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ আদালতকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি করেছি। তারা ইতোমধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। আমরা পর্যালোচনা করছি। ইমপ্যাক্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে ওষুধের নমুনা আইসিডিডিআর’বিতে পাঠায়। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী ওই ওষুধে ব্যাকটেরিয়ার নমুনা পাওয়া গেছে। কিন্তু আমাদের প্রতিবেদনে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। আমরা দুটো রিপোর্টই পর্যালোচনা করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করছি।’
পরে আদালত আগামী ১৬ জুলাই এ মামলায় জারি করা রুলের পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। এরপর প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘লিখিত জবাবে যেন ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটিত হয়। যাতে করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়।’ এই বলে আদালত স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৯ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষুশিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কম্যুনিটি হেলথ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষুশিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। এদের মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে এবং ইমপ্যাক্টের পক্ষ থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ রোগীকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে যে, ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়েছে। আর বাকি একজন অন্য জায়গায় চিকিৎসা নিতে থাকেন।
পরে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ১ এপ্রিল রিট দায়ের করেন।