ক্রীড়া প্রতিবেদক: নীল নাকি বেদনার বার্তা ছড়িয়ে দেয় কষ্টের রঙ! কিন্তু এই কথা অন্তত ফরাসিরা কিছুতেই মানতে চাইবেন না! গতকাল রাতটা যে নীলের উৎসবেই রঙিন হয়ে থেকেছে। মস্কো থেকে প্যারিসে আছড়ে পড়েছে উচ্ছ্বাসের সেই ঢেউ। আবার যে বিশ্বকাপ ট্রফি ফিরল আইফেল টাওয়ারের দেশে। লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে কাঁদিয়ে ৪-২ গোলে অনায়াসে জয় তুলে নিল ফ্রান্স। ১৯৯৮ সালের পর আবারও বিশ্বকাপে ছড়িয়ে পড়ল ফরাসি সুবাস!
যদিও প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে ঠিকই মন জয় করে দেশে ফিরছে ক্রোয়েশিয়া! পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফুটবলের পসরা সাজালেও ফাইনালে এসে নিজের ঠিক খুঁজে পেল না বলকান অঞ্চলের এই দেশটি! অবশ্য ভাগ্যটাও যেন সঙ্গে ছিল না তাদের।
ম্যাচের ১৮তম মিনিটে মারিও মানজুকিচের আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্রোয়েশিয়া। তারপর ২৮ মিনিটে আচমকা বুলেট শটে সমতা ফেরান ইভান পেরিসিচ। এরপর সৌভাগ্যের পরশে ফের এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ৩৮ মিনিটে আন্তোঁয়ান গ্রিজমানের পেনাল্টি নিশানা খুঁজে পেলে উল্লাসে ফেটে পড়ে ফরাসিরা। এরপর ৫৯ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার প্রত্যাশার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন পল পগবা।
গত কয়েক ম্যাচে নিজেকে খুঁজে না পেলেও সময়মতো ঠিকই ঝলসে উঠলেন তিনি। অবশ্য এরপর ৬৫ মিনিটের কিলিয়ান এমবাপের গোলে নির্ভার হয়ে যায় ফ্রান্স। এ কারণেই কি নাÑকে জানে মারিও মানজুকিচ ৬৯ মিনিটে ব্যবধান কমান (২-৪)। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধান ধরে রেখেই মাঠ ছাড়ে ফ্রান্স।
আত্মঘাতী আর পেনাল্টি গোল সর্বনাশ ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা ক্রোয়েশিয়ার। তবে ঠিকই মন জয় করেছে লুকা মডরিচদের ফুটবল। চোখে চোখ রেখেই লা ব্লুজদের সঙ্গে লড়েছে ক্রোয়াটরা।
১৮ মিনিটে ভাগ্যসঙ্গী থাকায় গোল পেয়ে যায় ফ্রান্স। ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফ্রিকিক পেয়েছিল তারা। আন্তোয়ান গ্রিজমানের বাঁক নেওয়া ফ্রিকিক সামাল দিতে লাফিয়ে উঠেন ক্রোয়েশিয়ার মারিও মানজুকিচ। তার মাথায় বল লেগে আশ্রয় নেয় নিজেদেরই জালে (১-০)! দুঃখজনক হলেও সত্য, এটিই বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসে প্রথম আত্মঘাতী গোল। আর ২১ আসরে এটি ১২তম আত্মঘাতী গোল।
দুর্দান্ত দাপটে খেলতে থাকা ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে ফিরে ২৮তম মিনিটে। ডি-বক্সের ভেতর থেকে দেখার মতো এক শটে গোল করেন ইভান পেরিসিচ। ফ্রিকিক থেকে আসা বলটা দোমাগোই ভিদা পাঠান তার কাছে। ডান পা দিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়ে বাম পায়ের বুলেট গতির শট থেকে যাওয়া বলটা আটকানোর কোনো সুযোগ ছিল না ফরাসি গোলকিপার গোলরক্ষক উগো লরিসের। এই বিশ্বকাপে পেরিসিচের এটি তৃতীয় গোল। গোলের পর গর্বের সঙ্গে উরু দেখাচ্ছিলেন পেরিসিচ। এই উরুর চোটের জন্য ফাইনালে খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত নেমে গোল পেলেন তিনি।
কিন্তু সেই আনন্দটা ৪৫ লাখ মানুষের দেশ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। ৩৮ মিনিটে ফের এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ডিবক্সে বল লেগেছিল ইভান পেরিসিচের হাতে। ভিএআর দেখে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। মাথা ঠাণ্ডা রেখে বল জালে পাঠান গ্রিজমান। এবারের বিশ্বকাপে এটি তার চার নম্বর গোল।
৫৯তম মিনিটে বাম দিক থেকে ডি-বক্সে এমবাপের ক্রস থেকে বল পেয়ে গ্রিজমান পাস দেন পল পগবাকে। তার ডান পায়ের প্রথম শট রক্ষণভাগে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। এরপর ফিরতি বলে বাম পায়ের শট থেকে বল আশ্রয় নেয় জালে। ৬৫তম মিনিটে এমবাপের দুর্দান্ত গোলে আরও এগিয়ে যায় ফরাসিরা। এ নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে চতুর্থ গোলটি পেলেন এমবাপে।
ইতিহাস জানাচ্ছে ব্রাজিলের কিংবদন্তি পেলের পর প্রথম টিনএজার হিসেবে ফাইনালে গোল পেলেন ১৯ বছর বয়সী এই তারকা! এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা আবিষ্কার তিনিই।
সব মিলিয়ে তরুণ এই দলটার হাত ধরেই ২০ বছর পর আবারও বিশ্বকাপ ট্রফি জিতল ফ্রান্স। একইসঙ্গে নতুন এক অভিজাত ক্লাবে পা রাখলেন দলটির কোচ দিদিয়ের দেশম। এর আগে ফুটবলার হিসেবে জিতেছিলেন ট্রফি। এবার কোচ হয়েও সেই একই সম্মান পেলেন। এমনটা আগে করে দেখিয়েছেন ব্রাজিলের মারি জাগালো আর জার্মানির ফ্রাঞ্চ বেকেনবাওয়ার। এবার সেই তালিকায় যোগ হলো দিদিয়ের দেশমের নাম।