ক্রীড়া ডেস্ক: মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে গত পরশু যখন আঁতোয়ান গ্রিজমান-পল পগবারা একের পর এক গোল উদ্যাপন করছিলেন তখন উৎসব চলছিল সুদূর প্যারিসে। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেব ছিল ভিন্ন চেহারায়। লুকা মদ্রিচ-ইভান রাকিটিচদের হতাশা সেখানেও ছড়িয়ে পড়েছিল কান্নার রোল।
রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ফ্রান্স বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর শিল্প-সংস্কৃতির তীর্থভূমি প্যারিস হয়ে উঠে উৎসবের নগরী। আইফেল টাওয়ার হয়ে ওঠে আরও উজ্জ্বল। যা ছড়িয়ে পড়ে ছোট বড় শহরগুলোতে। সেখানে পতাকা হাতে আর গানের তালে তালে মাতিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা। জয় নিশ্চিত হবার পর উল্লাসে ফেটে পড়ে ফ্রান্সের সাধারণ জনগণও। পুরো দেশজুড়েই চলেছে সোনালি কাপ জয়ের আনন্দ।
দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ সবাই নিজের মতো করে উদ্যাপন করছেন ফ্রান্স সমর্থকরা। দেশটির নাগরিকরা সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ফ্রান্সের এবারের জয় ১৯৯৮ সালের বিজয়কে ছাড়িয়ে গেছে।
এর আগে গত পরশু রাতেই প্যারিস গেট এবং আইফেল টাওয়ারের সামনে জড়ো হয়েছিল লাখো লাখো ফুটবল ভক্ত। জয়ের উৎসবকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ আলোকসজ্জাসহ নানা রঙে রাঙিয়ে তোলা হয় আইফেল টাওয়ার ও প্যারিস গেট। তবে প্যারিসে রাত নেমেছিল ঠিকই, নামেনি প্যারিসবাসীর চোখে। বিয়ার-শ্যাম্পেনসহ নানা ব্রান্ডের পানীয় খেয়ে নেচে-গেয়ে উৎসব করে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দেন তারা। এ-এক অন্যরকম প্যারিস। কোনো যান্ত্রিকতা নেই, কোনো বিরতি নেই, শুধু উৎসব আর আনন্দ।
অতিরঞ্জিত উল্লাস করতে গিয়ে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও ঘটেছে ফ্রান্সে। বিশৃঙ্খল আচরণ ঠেকাতে আগে থেকেই রাস্তায় রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছিল হাজার হাজার দাঙ্গা পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে আনন্দ উদ্যাপনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর লিয়নে। রাত বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে অর্থাৎ সাড়ে ১১টার দিকে জড়ো হওয়া লোকদের গ্যাস ছুড়ে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
এদিকে প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে শিরোপার স্বপ্ন বুনছিল ক্রোয়েট সমর্থকরা। যে কারণে ম্যাচ শুরু হওয়ার পর পরই দেশটির সমর্থকরা জড়ো হতে থাকেন রাজধানী জাগরেবে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় খেলা দেখেন তারা। আবার বিজয় উল্লাসের প্রস্তুতিও মনে মনে রেখে নিয়েছেন ক্রোয়েটরা। কিন্তু তাদের সে আশা শেষ পর্যন্ত পূরণে ব্যর্থ হন রাকিটিচরা। যে কারণে মুহূর্তের মধ্যে কান্না ছড়িয়ে পড়ে জাগরেবের আকাশে। সে সময় বাতাসও যেন ভারি হয়ে উঠেছিল। এদিকে রাগে-ক্ষোভে লুঝনিকি স্টেডিয়ামে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন ক্রোয়েট সমর্থকরা। পরে অবশ্য নিরাপত্তাকর্মীদের হস্তক্ষেপে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে ফ্রান্সের সাপ্তাহিক ‘জুর্নাল দ্য দিমশের’-এর আগাম জরিপ রিপোর্টে বলা হয়েছিল, শতকরা ৮৪ ভাগ ফরাসির ধারণা এবার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে হারাবে ফ্রান্স। আর যারা নিয়মিত ফুটবল দেখেন বা ভালোবাসেন তাদের মধ্যে এ হার ছিল শতকরা ৯০ ভাগের বেশি। তবে উটের গণনায় পিছিয়ে ছিল ফ্রান্স। কিন্তু সেটাকে ভুল প্রমাণিত করে ক্রোয়েটদের হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলে ফ্রান্স। এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তে তো জয়োৎসব হবেই।