বাংলাদেশ ব্যাংকে যে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, স্বর্ণ রিজার্ভ কেলেঙ্কারিই তার বড় উদাহরণ। এ নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি বড় ধরনের কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশিত হলো। বছর দুয়েক আগে বিপুল অঙ্কের রিজার্ভ চুরি হয়ে গেছে এবং সেই রিজার্ভের কতটুকু অর্থ এখন পর্যন্ত ফেরত পাওয়া গেছেÑতার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। এখন আবার স্বর্ণের যে রিজার্ভ থাকে ব্যাংকে, সেখানেও দুষ্কৃতকারীদের চোখ পড়েছে। একটি পরিবারের প্রধান ব্যক্তি যদি ঠিক না থাকেন, তাহলে কিন্তু ওই পরিবারের অন্য সদস্যরা ভালো থাকতে পারেন না। ব্যাংক খাতে যে কী হচ্ছে, তা আসলেই চিন্তার বিষয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম ও বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি মো. রিয়াদ মতিন।
সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, দেশের যেসব মাইক্রো ইকোনমিক বিষয় আছে, সেগুলো এগিয়ে নিতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক কাজ করে চলেছেন। কিন্তু তার চারপাশে ঘিরে থাকা ব্যক্তিরা অধিকাংশই অসৎ ও বাটপার। যেমনটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের মতো বিশ্বাসঘাতক। জনগণ বুঝতে পারে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের শীর্ষস্থানে যারা বসে আছেন, তাদের অনেকেই বাটপার। উন্নত দেশগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটু ইতিবাচক কথা বললে বাজারে উন্নতি হয়; কিন্তু আমাদের দেশে তা হয় না। সরকারকে একতরফা দোষ দিয়ে লাভ নেই। ব্যাংক খাতে চলছে ব্যাপক অরাজকতা। বাংলাদেশ ব্যাংকে যে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, স্বর্ণ রিজার্ভ কেলেঙ্কারিই তার বড় উদাহরণ। যদিও এসব ঘটনার জন্য এককভাবে গভর্নর দায়ী নন। একটি শক্তিশালী আন্ডার ওয়ার্ল্ডের কাছে তারা সবাই জিম্মি হয়ে পড়েছেন। মজার বিষয় যে, স্বর্ণের চাকতি হয়ে গেছে ধাতব পদার্থ। ২২ ক্যারেট হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট এবং এক টনের কাছাকাছি স্বর্ণ হয়ে গেছে অন্য জিনিস। কাজেই ব্যাংক খাতে যে কী হচ্ছে, তা আসলেই চিন্তার বিষয়।
মো. রিয়াদ মতিন বলেন, সম্প্রতি এক মিডিয়ায় ব্যাংকে রাখা স্বর্ণের ব্যাপারে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি বড় ধরনের কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশিত হলো। একটি হচ্ছে, বছর দুয়েক আগে রিজার্ভ চুরি হয়ে গেছে এবং সেই রিজার্ভের কতটুকু অর্থ আমরা এখন পর্যন্ত ফেরত পেয়েছি তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। এটি নিয়ে মাঝখানে যে কর্মতৎপরতা ছিল, সেটিও ঝিমিয়ে পড়েছে। দ্বিতীয়ত, এখন আবার স্বর্ণের যে রিজার্ভ থাকে, সেখানেও দুষ্কৃতকারীদের চোখ পড়েছে। কাজেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে বাকি ব্যাংকগুলোর কী অবস্থা, তা তো দেখাই যাচ্ছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো এতদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুঝিয়ে এসেছে, সেগুলোর ব্যাপারে আস্থাহীনতা চলে আসছে। পুঁজিবাজারের ওপর তারা অযাচিত খবরদারি করে এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গে তাদের সমন্বয়হীনতা দূর করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উন্নত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি বলে দেশের অর্থনীতিতে দশমিক ০০১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তাহলেই পুঁজিবাজার অনেক ওপরে উঠে যায়। তারা বাজারকে কখনোই ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয় না। কিন্তু আমাদের দেশে যেভাবে পুঁজিবাজারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আটকে রেখেছে, তাতে বাজার উঠতে গেলেই কোনো একটি নীতিমালা বা পদ্ধতি প্রণয়ন করে বাজারকে বসিয়ে দেয়। অথচ নিজেদের বেলায় কোনো খবরদারি নেই। বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম