মেহেদী হাসান: ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করছে না বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস)। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থা ভালো থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবেই ঋণ পরিশোধ করছে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো অভিযোগ করেছে। বাডাসের কাছে কাছে ১১টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা ২৫২ কোটি টাকা। একদিকে ব্যাংকগুলো ঋণের টাকা আদায়ে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছে; অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি ঋণের টাকা ফাঁকি দিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ে ধরনা দিচ্ছে।
জানা যায়, হেলথ কেয়ার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এইচসিডিপি) নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, অগ্রণী এবং বেসরকারি খাতের পূবালী, আইএফআইসি, ডাচ্-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল (ইউসিবি), স্টান্ডার্ড ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ছাড়াও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি থেকে ৯৯ কোটি সাত লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল সংগঠনটি। যার আসল ১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং সুদ ৫২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এরপরে আসল ঋণ ৮৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বকেয়া সুদ ১৬৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা মিলে মোট ২৫২ কোটি ১৬ লাখ টাকা বকেয়া দায় রয়েছে সমিতির কাছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো জানায়, এটি একটি সিন্ডিকেট ঋণ ছিল। ঋণের লিড ব্যাংক হলো পূবালী ব্যাংক। বর্তমানে ডায়াবেটিক সমিতি আর্থিকভাবে খুবই সচ্ছল। স্বাস্থ্যসেবা খাতে তাদের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে; যেগুলোর আর্থিক অবস্থা অনেক ভালো। তারপরও তারা ঋণ পরিশোধ করছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল হালিম চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, তাদের অবস্থা যখন তেমন একটা ভালো ছিল না; তখন তাদের লেনদেন ভালো ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি আর্থিকভাবে খুবই সচ্ছল। তারপরও তারা ঋণের অর্থ পরিশোধ করছে না। ঋণের টাকা না পেলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।
সূত্র জানায়, ঋণের টাকা ফাঁকি দিতে সরকারের উচ্চ মহলে ধরনা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে একটি চিঠিও দিয়েছে ডায়াবেটিক সমিতি।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের সঙ্গে। তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আমরা ঋণের সুদ মওকুফের আবেদন করেছিলাম। ব্যাংকগুলো এ বিষয়ে আমাদের একটি প্রস্তাব দিতে বলেছে। আমরা আগামী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে প্রস্তাব পাঠাব।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সমর্থনে এবং নেদারল্যান্ডস সরকারের ওরেট গ্রান্টের অর্থায়নে হেলথ কেয়ার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এইচসিডিপি) নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ ঋণে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। এ প্রকল্পটি ১২টি ব্যাংকের ঋণ ছাড়াও নেদারল্যান্ডস সরকারের আর্থিক অনুদান এবং বাংলাদেশ সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হয়েছে।
জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত উত্তরবঙ্গের পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে পাঁচটি হাসপাতাল এবং উপজেলা পর্যায়ে চারটি প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র; ঢাকার উপকণ্ঠে ৯টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং ঢাকায় একটি একাডেমিক হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৫৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত এবং বর্তমানে বাংলাদেশের ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস)। বাডাস পরিচালিত দেশের অন্যতম চিকিৎসাকেন্দ্র বারডেম হাসপাতাল। জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমসহ কয়েকজন সমাজসেবক এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
সমিতির অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ক (এনএইচএন), হেলথ কেয়ার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এইচসিডিপি), ঢাকার জুরাইনে অবস্থিত রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার (আরভিটিসি) ও ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এছাড়া সমিতির রয়েছে ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্স। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি অধিভুক্ত ফরিদপুর ডায়াবেটিক সমিতিও একটি মেডিক্যাল কলেজ এবং নার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি নতুন কোম্পানি সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি পাইপলাইনে রয়েছে। এসব উদ্যোগের কারণে বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে বাজারমুখী হচ্ছেন, যার কারণে বেশ কয়েক দিন ধরে পুঁজিবাজারে মোটামুটি সন্তোষজনক লেনদেন হতে দেখা যাচ্ছে। বাজার শুরুতে ইতিবাচক এবং শেষে নেতিবাচক এমন প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসেছে। শুরুতে ইতিবাচক, মাঝে পতন এবং শেষভাগে ফের উত্থানÑএই গতিতে লেনদেন হয়েছে গতকাল। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানি থেকে মুখ ফিরিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন প্রকৌশল, বস্ত্র, ওষুধ ও জ্বালানি খাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। মাঝে মাঝে বড় খাতগুলো এড়িয়ে ছোট খাতগুলোতেও তাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ গতকাল সবচেয়ে বেশি ছিল ওষুধ ও রসায়ন, খাদ্য, বিবিধ এবং কাগজ ও মুদ্রণ খাতে। তবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় প্রকৌশল খাতে। এ খাতে লেনদেন হয় ১৮৩ কোটি টাকা, যা মোট মূলধনের ২২ শতাংশ। এ খাতের ৫০ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে। কেডিএস এক্সেসরিজ ও বেঙ্গল উইন্ডসর প্রায় ১০ শতাংশ করে বেড়ে দরবৃদ্ধির শীর্ষে অবস্থান করে। কেডিএসের সাড়ে ৩২ কোটি টাকার লেনদেন হয়ে বাজারে নেতৃত্ব দেয় কোম্পানিটি। এছাড়া বিবিএস কেব্লসের ২৩ কোটি ও আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ১৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়। দুটি কোম্পানির দর ইতিবাচক ছিল। বস্ত্র খাতে লেনদেন হয় ১৬ শতাংশ। এ খাতে ৫০ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে। শাশা ডেনিমসের দর সাত দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়ে দরবৃদ্ধির শীর্ষ দশে উঠে আসে। কোম্পানিটির প্রায় ১৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়। বিবিধ খাতে ১১ শতাংশ লেনদেন হয়। এ খাতে ৫৪ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে। আমান ফিড ও আরামিট দরবৃদ্ধির শীর্ষ দশে অবস্থান করে। এর মধ্যে আমান ফিডের প্রায় ২৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। ওষুধ ও রসায়ন খাতে মাত্র আট শতাংশ লেনদেন হলেও এ খাতে ৭২ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে। এসিআই ফরমুলা ও ইবনে সিনা দরবৃদ্ধির শীর্ষ দশে উঠে আসে। এছাড়া খাদ্য খাতে ৬১ শতাংশ, কাগজ ও মুদ্রণ খাতে শতভাগ, চামড়াশিল্প খাতে ৮৩ শতাংশ, কাগজ ও মুদ্রণ খাতে ৬০ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে। এদিকে উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকার পাশাপাশি কারসাজি চক্র প্রায়ই সক্রিয় থাকার কারণে মডার্ন ডায়িং অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিং ও রহিমা ফুড কোম্পানি দুটিকে তালিকাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আজ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। গতকাল মডার্ন ডায়িংয়ের শেয়ার সর্বশেষ ৩২৬ টাকা ৯০ পয়সায় এবং রহিমা ফুডের শেয়ার ১৭৪ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়।