শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রতি হাজারে তিন দশমিক ৬৭ মানুষ কোনো না কোনোভাবে আধুনিক দাসত্বের শিকার হচ্ছেন। এই হিসেবে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে এ ধরনের দুর্দশায় পড়া মানুষের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ ৯২ হাজার।
গত বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সংস্থা ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স ২০১৮’-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া কারণে অথবা কোনো না কোনোভাবে এই মানুষগুলো নামমাত্র মজুরিতে দাসের মতো শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে বাধ্য হচ্ছেন যৌনকর্মীর জীবনযাপনে, অথবা ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করে কাটাচ্ছেন ক্রীতদাসীর জীবন। ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন তাদের এই দুর্দশাকে বর্ণনা করেছে ‘আধুনিক দাসত্ব’ হিসেবে। বিশ্বের চার কোটির বেশি মানুষ এই দাসত্বের শিকার। জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসাবে বিশ্বের ১৬৭টি দেশের এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ৯২তম।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানে প্রতি হাজারে ২২.২ জন, পাকিস্তানে হাজারে ১৬.৮ জন, মিয়ানমারে ১১ জন, ভারতে ৬.১ জন, নেপালে ৬ জন এবং শ্রীলঙ্কায় ২.১ জন আধুনিক দাসত্বের শিকার। এই দাসত্বের অবসানে সরকারের পদক্ষেপ ও তাতে সাফল্যের বিবেচনার সূচকে বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে ‘বি’ রেটিং। এই বিচারে বাংলাদেশের স্কোর একশ’র মধ্যে ৪৪ দশমিক ৪। আর তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থায় থাকা নেদারল্যান্ডসই কেবল ‘এ’ রেটিং পেয়েছে। দেশটির স্কোর ৭৫ দশমিক ২।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে যারা ‘আধুনিক দাসের’ জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশেরই বসবাস এশিয়ায়। আর মোট সংখ্যার হিসাবে সবচেয়ে বেশি আধুনিক দাসের বসবাস চীন, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ায়; এই সংখ্যা বিশ্বে আধুনিক দাসের মোট সংখ্যার ৬০ শতাংশ।
প্রতি হাজারে এ ধরনের দুর্দশার শিকার মানুষের হার বিবেচনা করলে এবারের সূচকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। সেখানে প্রতি হাজারে ১০৪ দশমিক ৬ জন আধুনিক দাসত্বের শিকার। ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের গবেষকরা উত্তর কোরিয়ার ৫০ নাগরিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, যারা বর্ণনা করেছেন, কীভাবে রাষ্ট্রের নির্দেশে তারা বিনা মজুরিতে কৃষি খামার, নির্মাণ অথবা অবকাঠামো খাতে শ্রম দিতে বাধ্য হয়েছেন। ইয়ন-মি পার্ক এ রকমই একজন কিশোরী, যিনি উত্তর কোরিয়া থেকে পাচারের শিকার হয়ে চীনে যেতে বাধ্য হন। সেখানে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয় বিয়ের কনে হিসেবে। সম্প্রতি জাতিসংঘে এক অনুষ্ঠানে ইয়ন-মি পার্ক বলেন, ‘হয়তো ভুল জায়গায় আমাদের জš§ হয়েছে, এ কারণেই এই শাস্তি।’
এই তালিকার শীর্ষ দশে উত্তর কোরিয়ার পরে ধারাবাহিকভাবে এসেছে ইরিত্রিয়া, বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, আফগানিস্তান, মৌরিতানিয়া, সাউথ সুদান, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া ও ইরান।
আধুনিক দাসত্বের এমন চিত্র থেকে মুক্ত নয় উন্নত বিশ্বও। যুক্তরাষ্ট্রের চার লাখ, যুক্তরাজ্যের এক লাখ ৩৬ হাজার, জার্মানির এক লাখ ৬৭ হাজার এবং ফ্রান্সের এক লাখ ২৯ হাজার মানুষ দাসের মতো জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে উঠে এসেছে এবারের প্রতিবেদনে। ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এন্ডরু ফরেস্ট বলেন, ‘আধুনিক দাসত্ব আধুনিক বিশ্বের তৈরি একটি সমস্যা। আধুনিক দেশগুলোই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা, তাদেরই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।’