শেখ আবু তালেব: পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনি কোম্পানি নিয়ে আলাদা ট্রেড বোর্ড গঠনের দাফতরিক কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেছে। বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে থাকলেও মূলত চীনা কনসোর্টিয়ামের জন্য অপেক্ষা করছে ডিএসই। তাদের প্রতিনিধি ডিএসই পর্ষদে যোগ দেওয়ার পরই বাজার চালু হতে যাচ্ছে।
স্মল ক্যাপ বাজার তৈরি হলেও পুঁজিবাজারে বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোনো স্বল্প মূলধনি কোম্পানি এ বাজারে লেনদেন করবে না। সম্পূর্ণ নতুন কোম্পানি নিয়েই চালু হবে এ বাজারের লেনদেন। নতুন কোম্পানি নিয়ে বাজার শুরু করতে চাইলেও বর্তমানে স্বল্প মূলধনি কোনো কোম্পানি আইপিও অনুমোদনে প্রক্রিয়ায় নেই। বর্তমানে ডিএসইতে অনুমোদিত আইপিওর তালিকায় দুটি কোম্পানি রয়েছে, যারা অনুমোদন পেলেও শেয়ার ছাড়েনি।
সূত্র জানিয়েছে, চারটি নতুন স্বল্প মূলধনি কোম্পানি নিয়ে বাজারটি চালু হতে যাচ্ছে। কিন্তু সেই চারটি কোম্পানি নির্ধারিত হওয়ার পরই তাদের আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হবে। তারপর শেয়ার ছেড়ে মূলধন সংগ্রহ করবে কোম্পানিগুলো। আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বরাদ্দের পরই লেনদেনের তারিখ ঘোষণা করবে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো। এই প্রক্রিয়াটি শেষ করতেই সময়ের প্রয়োজন হবে আরও কয়েক মাস। দৃশ্যত আগামী কয়েক মাসের মধ্যেও বাজারটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
সূত্রমতে, মূলত কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ায় পরিচালনা পর্ষদে চীনা কনসোর্টিয়ামের যোগদানের জন্য অপেক্ষা করছে ডিএসই। স্মল ক্যাপের বাজারটি চালু করার প্রক্রিয়াকালে তারা ডিএসইর বিনিয়োগ অংশীদার হয়েছে। ফলে তাদের মতামত নেওয়াটা জরুরি মনে করছেন অনেকে। ভবিষ্যতে যাতে নতুন কোনো বিতর্কের সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সতর্কতামূলক এমন চিন্তা করছেন অনেক পরিচালক। ফলে বিষয়টি একটু দেরি হতে পারে।
এ বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেছেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আইনগত কোনো কাজ বাকি নেই। যে কোনো সময়ে বাজারটি চালু হবে নতুন কোম্পানি নিয়ে।’ পরিচালনা পর্ষদে চীনা কনসোর্টিয়ামের যোগদানের পরে বাজারটি চালু হবে কি নাÑএমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পর্ষদে চীনা কনসোর্টিয়াম যোগ দিলে ডিএসইর আরও পণ্য নিয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করা যাবে।’
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে স্বল্প মূলধনি বা স্মল ক্যাপ কোম্পানি নিয়ে আলাদা ট্রেড বোর্ড বা বাজার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এজন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালাও তৈরি করেছে। দশ কোটি টাকার বেশি ও ৩০ কোটি টাকার কম পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি নিয়ে গঠিত হবে এ বাজার। এই বাজারে শুধু ‘কোয়ালিফাইড বা যোগ্য’ বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করতে পারবেন। যোগ্য বিনিয়োগকারীর তালিকায় রয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংক ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও সিআইএস, স্টক ডিলার, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ইন্স্যুরেন্স, বিকল্প বিনিয়োগ ফান্ড ম্যানেজার, বিকল্প বিনিয়োগ ফান্ড, স্বীকৃত পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড, কমিশন-নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান ও উচ্চ সম্পদধারী বাংলাদেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসই অবশ্য ইতোমধ্যেই নতুন এ বাজরে লেনদেনের জন্য ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম, স্মলক্যাপ বোর্ড গঠন, মার্কেট মেকারসহ যাবতীয় দাফতরিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এখন চলছে খুঁটিনাটি বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণের। কোনো কিছু বাদ রইল কি না তা দেখা হচ্ছে। অপরদিকে এ বিষয়ে জনমত যাচাই শেষে আইন ও নীতিমালা তৈরি শেষে গেজেট আকারে তা প্রকাশ করেছে বিএসইসি।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেছে বিএসইসি। ডিএসই প্রস্তাব দিলেই বিএসইসি অনুমোদন দেবে। যেকোনো সময় বাজারটি চালু করতে পারে ডিএসই।’
তুলনামূলক কম শেয়ার থাকায় স্বল্প মূলধনি কোম্পানির ওপর ভর করেই পুঁজিবাজারে কারসাজি বেশি হয়। এজন্য অর্থনীতিবিদ, বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের দাবির মুখে এসব কোম্পানি নিয়ে পৃথক বাজার গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। পরবর্তীকালে তালিকাভুক্ত ও শেয়ার লেনদেন করতে ডিএসই এবং অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) স্বল্প মূলধনি প্ল্যাটফর্ম (স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্ম) গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মূল বাজারের আদলেই সব কার্যক্রম চলবে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির বাজার। এজন্য পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে ফিক্সড প্রাইস ও বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে মূলধন উত্তোলন করতে পারবে। পরিশোধিত মূলধন সর্বনিম্ন পাঁচ কোটি টাকা হলেই কোনো কোম্পানি স্বল্প মূলধনি কোম্পানি হিেেসবে বিবেচিত হবে। তবে বাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের পর তার পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকা হতে হবে।
