পলাশ শরিফ: আয়-মুনাফায় এগিয়ে থাকা কোম্পানির চেয়ে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদরই বেশি বাড়ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বেশি দামে শেয়ার লেনদেন হচ্ছে এমন ২০ কোম্পানির সিংহভাগই স্বল্প মূলধনি। গত এক বছরে ওই কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। নোটিস-জবাবের পরও বিতর্কিত কোম্পানির দাপট বাড়ছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুঁজিবাজারের সবচেয়ে দামি শেয়ার এখন মুন্নু জুট স্টাফলার্স। স্বল্প মূলধনি ও বিতর্কিত কোম্পাটির শেয়ার গতকাল ডিএসইতে সর্বশেষ চার ১৫১ টাকায় লেনদেন হয়েছে। বিতর্কের পরও গত এক বছরে মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারদর ৬৩২
দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে। দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকলেও মনগড়া পরিকল্পনার তথ্য ছড়িয়ে শেয়ারের দর বাড়ানো হয়েছে। দর বৃদ্ধির নেপথ্যের কারণ জানতে ডিএসইর নোটিস ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির তদন্তের পরও উল্লম্ফন ঠেকানো যায়নি। বরং বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকার পরও কোম্পানিটির প্রভাবশালী এক পরিচালকের হস্তক্ষেপে শেয়ারদর বেড়েছে।
দামি শেয়ারের তালিকায় বস্ত্র খাতের স্বল্প মূলধনি কোম্পানি স্টাইলক্র্যাফটের নামও রয়েছে। গতকাল সর্বশেষ ওই কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৯৪৮ টাকায়। এক বছরে স্টাইলক্র্যাফটের দর ১১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৫৭৭ টাকা। আয়-মুনাফায় পিছিয়ে পড়া ওই কোম্পানির শেয়ার বৃদ্ধি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।
আরেক বিতর্কিত কোম্পানি লিবরা ইনফিউশন। ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিটি সবচেয়ে দামি শেয়ারের তালিকার ১২ নম্বরে রয়েছে। ঋণের তথ্য গরমিল, বিতর্কিত পাওনাকে সম্পদ দেখানোসহ জাল-জালিয়াতির মাধমে লিবরা ইনফিউশন প্রায় ৩০০ টাকা সম্পদ বাড়িয়েছে দেখিয়েছে। সর্বশেষ প্রান্তিকে লোকসান গুণলেও সম্পদ বৃদ্ধির তথ্যে বিম্ভ্রান্ত হয়ে ওই কোম্পানির শেয়ার কিনছেন বিনিয়োগকারীরা। এর সুযোগে গত দুই মাসে শেয়ারদর প্রায় ৫১৬ টাকা প্রায় ১০৪ শতাংশ বাড়িয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা। কারসাজির তথ্য ফাঁসের পর দর কমলেও এখনও দামি শেয়ারের একটি লিবরা ইনফিউশন। ডিএসইতে গতকাল কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ প্রায় এক হাজার ১৫ টাকায় লেনদেন হয়েছে। অথচ দুই মাস আগেও কোম্পানিটির শেয়ারদর ৪৯৬ টাকা ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানিকে পেছনে ফেলে পিছিয়ে পড়া, স্বল্প মূলধনি ও বিতর্কিত কোম্পানির এগিয়ে থাকা বাজারের জন্য ইতিবাচক নয়। এতে বাজারে অস্থিরতা ও পুঁজি হারানোর ঝুঁকি বাড়বে- বলেও মত দিচ্ছেন তারা।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘স্বল্প মূলধনি ও বিতর্কিত কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে যাওয়া পুঁজিবাজারের জন্য মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। এতে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি বাড়ে। কারণ স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর প্রকৃত অবস্থা প্রকাশের পর শেয়ারদর কমে গেলে বাজার অস্থির হয়ে উঠবে। বিনিয়োগকারীরাও বিপদে পড়বে। তাই দাম বাড়তে দেখে বিনিয়োগ না করে সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। মৌলভিত্তিসম্পন্ন, স্বনাম খ্যাত যেসব কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে সেগুলোর দিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে।’
মুন্নু জুট স্টাফলার্স, স্টাইলক্র্যাফট আর লিবরা ইনফিউশনের মতো দামের দিক থেকে এগিয়ে থাকা বিতর্কিত ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের শেয়ার এক হাজার ৫৩৩ টাকা ৬০ টাকা, চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের রেনউইক অ্যান্ড যজ্ঞেশ্বরের শেয়ার ৯২৯ টাকা ৬০ পয়সা, ওষুধ ও রসায়ন খাতের অ্যাম্বি ফার্মার শেয়ার ৮১৪ টাকা ৪০ পয়সা, ফার্মা এইডসের শেয়ার ৬২৯ টাকা ৯০ পয়সা, রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল টি ৬১৭ টাকা, বিবিধ খাতের আরামিটের শেয়ার ৫৮০ টাকা, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক জেমিনি সি ফুডের শেয়ার ৪২১ টাকা ও কোহিনূর কেমিক্যালের শেয়ার ৪১৪ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
গ্রামীণফোন, সিঙ্গার বাংলাদেশ ও হাইডেলবার্গ সিমেন্টের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে টপকে রেকিট বেনকিজার, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন, লিন্ডে বাংলাদেশ ও বার্জার পেইন্টসের মতো কম মূলধনি বহুজাতিক কোম্পানিও দামি শেয়ারের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় হালের দামি শেয়ারের মধ্যে সিংহভাগই স্বল্প মূলধনি কোম্পানির। এর মধ্যে বেশকিছ কোম্পানির শেয়ারদর দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিক গতিতে বেড়েছে। এর জের ধরেই স্বল্প মূলধনি ও বিতর্কিত কোম্পানিও দামি শেয়ারের তালিকায় উঠেছে।