নিজস্ব প্রতিবেদক: বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় উত্তরের চার জেলায় এক মাস বিদ্যুৎবিভ্রাট হবে। জেলাগুলো হলো রংপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ এ মন্তব্য করেন। গতকাল রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কয়লা সংকট এক মাসের মধ্যে সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বড়পুকুরিয়া নিয়ে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি এই সংকট সমাধানের বিষয়ে আর কিছু জানাননি।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী বড়পুকুরিয়া নিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন।
পিডিবি চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের জানান, এ সংকট সমাধানে সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, জনভোগান্তি কমাতে হবে। উদ্ভূত এই পরিস্থিতি সামাল দিয়ে মানুষের কষ্ট লাঘব করতে হবে।
প্রসঙ্গত, দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে অবস্থিত দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়ার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট। খনির পাশেই অবস্থিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ও ১২৫ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট রয়েছে। কেন্দ্রটি পূর্ণ উৎপাদনে থাকলে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার ২০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়।
১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ১নং ইউনিটটি সাধারণ মেরামতের (জেনারেল ওভারহোলিং) জন্য কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। আর ২নং ইউনিটটি কয়লা সংকটের কারণে গত ২৯ জুন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়া কয়লা সংকটের কারণে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩নং ইউনিটটি কয়েক দিন ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে, অবশেষে রোববার রাতে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকে এ খনিতে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। নথিপত্র অনুযায়ী, এ পর্যন্ত খনি থেকে এক কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে এর মধ্য থেকে এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন কয়লার হদিস পাওয়া যায়নি। খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সচিব ও খনির মাইনিং বিভাগ এসব কয়লা বাইরে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বড়পুকুরিয়া খনির কোল ইয়ার্ড থেকে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি খনি কর্তৃপক্ষ ‘সিস্টেম লস’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে যদিও এ ব্যাখ্যা মানা হয়নি, বরং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে পেট্রোবাংলা।
প্রতি বছর একবার শিফট পরিবর্তন করে কয়লাখনি কর্তৃপক্ষ, কিন্তু শিফট পরিবর্তনের আগে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত কয়লা মজুদ রাখা হয়। এবারও পিডিবিকে এক লাখ টনের বেশি মজুদ রয়েছে বলে খনি কর্তৃপক্ষ জানায়। গত সপ্তাহে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) সাঈদ আহমেদ বড়পুকুরিয়া খনি পরিদর্শন করে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকায় ১০ হাজার টন মজুদ পান।
পিডিবির সদস্য (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী জানান, এই কেন্দ্রের দুই ইউনিটের একটিতে ৮৫ মেগাওয়াট, অন্যটিতে ২৭৫ মেগাওয়াট মিলিয়ে মোট ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো। কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন এই বিদ্যুৎঘাটতিতে পড়তে হবে।
উত্তরের চার জেলায় এক মাস বিদ্যুৎবিভ্রাট হবে
