সম্প্রতি দুটি কোম্পানিকে বাজার থেকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে এবং এটি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেটিকে তালিকাচ্যুত করা দরকার মনে করেছে সেটিকেই করেছে। পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাত ছাড়াও অন্যান্য খাতে অনেক ফান্ডামেন্টাল কোম্পানির শেয়ার আছে। কেউ যদি মনে করে ব্যাংক খাতের শেয়ার অধিকতর নির্ভরযোগ্য তাহলে তারা তা কিনবে। এটি সম্পূর্ণই বিনিয়োগকারীর সিদ্ধান্ত। বিনিয়োগকারী তার নিজের অর্থ দিয়ে কোন কোন শেয়ার কিনবে সেটি তার ব্যাপার। তবে কেউ কোনো অনিয়ম করছে কিনাÑতা দেখার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থার। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন, এফসিএ এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সিইও ফাহমিদা হক।
মাহমুদ হোসেন বলেন, গত বছরের প্রথমদিকে যখন পুঁজিবাজারের অবস্থা অনেক ভালো ছিল এবং সে সময় দৈনিক এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো টার্নওভার হতো। তখন দেখা যেত বাজারের তিন ভাগের এক ভাগ লেনদেন ব্যাংক খাতে হয়েছে। এখন আমরা ব্যাংক খাতের সমস্যার কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাবের কথা যদি বলি তাহলে এখানে দুটি বিষয় চলে আসে। একটি হচ্ছে, ব্যাংক খাতের যারা অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আছে অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দিয়ে বিনিয়োগ করাত। দ্বিতীয়টি হচ্ছেÑব্যাংক খাতের শেয়ার বেচাকেনা হতো। আর এ দুটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের শেয়ার যেটি বিভিন্ন ট্রেডার বা বিনিয়োগকারীরা কেনেন তা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এ খাতে যে অরাজকতা চলছে তা যেভাবে সরকার বা বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ক্রমাগত সমর্থন করেই যাচ্ছে এবং সবচেয়ে বড় বিষয়, মূল সমস্যা যেটি আছে সেটি কোনোভাবেই স্বীকার করছে না। আর এ স্বীকার না করার প্রবণতার কারণে কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক খাতের শেয়ারে লেনদেনে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাছাড়া ক্রমাগত আমরা যেভাবে নেতিবাচক খবর পাচ্ছি তাতে এ খাতের ওপর থেকে জনগণের আস্থাই উঠে যাচ্ছে। সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংকের ব্যাপারে খবর রটেছে, ক্রিসেন্ট গ্রুপের যোগসাজশে ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সহযোগিতায় অনেক বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর একটি শাখা থেকে ৯০ শতাংশের ওপরে খেলাপি ঋণ শুধু ক্রিসেন্ট গ্রুপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে ওই সময়ে দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের যখন প্রশ্ন করা হয়েছে তখন ব্যাংকটির প্রাক্তন এমডি বলেন, শাখা যেভাবে চেয়েছে আমি সেভাবেই করেছি এবং অন্য আরেকজন বলেন পরিচালনা পর্ষদ যেভাবে আমাকে নির্দেশনা দিয়েছে ওভাবেই করেছি। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেষ দুই-তিন বছরে নখ, দাঁতহীন সিংহে পরিণত হয়েছে। যার আসলে চিড়িয়াখানাতেই শুধু জায়গা হতে পারে।
ফাহমিদা হক বলেন, সম্প্রতি দুটি কোম্পানিকে বাজার থেকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে এবং এটি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। আমি মনে করি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসাব-নিকাশে যেটিকে তালিকাচ্যুত করা দরকার সেটিকেই করেছে। এ বিষয়ে কোনো আলোচনা-সমালোচনা না করাই ভালো। পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাত ছাড়াও অন্যান্য খাতে অনেক ফান্ডামেন্টাল কোম্পানির শেয়ার আছে। এখন কেউ যদি মনে করে, ব্যাংক খাতের শেয়ার অধিকতর নির্ভরযোগ্য তাহলে তারা তা কিনবে এবং এটি সম্পূর্ণই বিনিয়োগকারীর সিদ্ধান্ত। বিনিয়োগকারী তার নিজের অর্থ নিয়ে এসেছে ফলে সে কোন শেয়ার কিনবে বা কিনবে না সেটি তার ব্যাপার। তবে কেউ কোনো অনিয়ম করছে কিনাÑতা বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেখবে এবং যথার্থ ব্যবস্থা নেবে।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম