তালিকাভুক্ত কোম্পানির দায়িত্বহীনতা কাম্য নয়

২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে ভীতি সৃষ্টি হয়, তার রেশ এখনও কাটেনি। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার আগে তা নিয়ে এখন বারবার ভেবে দেখছেন ভুক্তভোগীরা। যদিও সরকার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলেই মনে হয়। তা সত্ত্বেও কিছু তালিকাভুক্ত কোম্পানির দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা জন্ম দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। গত মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান কেয়া কসমেটিকসের পরিচালকদের নিয়মভঙ্গের অভিযোগে জরিমানা করেছে বিএসইসি। একইসঙ্গে আরও চার কোম্পানিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। গতকালের শেয়ার বিজে ‘কেয়া কসমেটিকসকে জরিমানা, চার কোম্পানিকে সতর্কতা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
সতর্ক করে দেওয়ার পরও আর্থিক প্রতিবেদন নির্দিষ্ট সময়ে জমা না দেওয়ায় কেয়া কসমেটিকসকে এ জরিমানা করে বিএসইসি। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) চার কোম্পানিকে সতর্ক করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান, বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ ধরনের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড কাম্য হতে পারে না।
২০১০ সালের পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির পর পার হয়ে গেছে প্রায় আট বছর। এতখানি সময়েও কিন্তু তখনকার ক্ষতিগ্রস্ত অনেক বিনিয়োগকারী মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। ঋণে জর্জরিত হয়ে অনেককে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হয়েছে, কেউবা সর্বস্বান্ত। এ প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজার নিয়ে সব পক্ষেরই সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। অন্যথায় পুঁজিবাজার নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে অনাস্থা ও ভীতি রয়েছে, তা আরও বাড়বে বলে অনেকে মনে করেন। এক্ষেত্রে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের অনিয়মে জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এতে বিশেষত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হবে বলেই বিশ্বাস। কেয়া কসমেটিকসের মতো পরিচিত প্রতিষ্ঠানের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও প্রভাবিত করতে পারে। আর্থিক প্রতিবেদন একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতার প্রতীক বলেই আমরা মনে করি। এটা নিশ্চিত করতে বিএসইসি যে ধরনের দায়িত্ব পালন করেছে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিষয়েও একই মনোভাব বা পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।
খবরেই উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানিটির স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক বাদে বাকি সব পরিচালককে এক লাখ টাকা করে জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। জরিমানার এ পরিমাণ নিয়েও প্রশ্ন তোলার অবকাশ থেকে যায়। এর প্রতীকী মূল্য অনস্বীকার্য হলেও আইন করে তা আরও কঠোর করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সুষ্ঠুভাবে পুঁজিবাজার পরিচালনা তথা এর বিধিবিধান পরিপালনে কমিশন কঠোর হলে তালিকাভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানই আরও সতর্ক হবে বলে বিশ্বাস। পুঁজিবাজারে থাকতে হলে এর নিয়মবিধি মেনেই থাকতে হবে, এমন বার্তাও তাদের দেওয়া যাবে এর মধ্য দিয়ে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরও সতর্ক থাকা জরুরি। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও রয়েছে, যারা এ বিষয়ে দক্ষ। এমন কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, সিকিউরিটিজ হাউজ ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির কিছু কর্মকর্তার কারসাজিতে জড়িত থাকার কথা বিভিন্ন সময়ে শোনা যায়। এখন পুঁজিবাজার কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে সত্য, তবে এদের তৎপরতা অব্যাহত থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সম্প্রতি কিছু স্বল্প মূলধনি কোম্পানি বাজারে কারসাজির চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আরও জেনে-বুঝে সতর্কভাবে বিনিয়োগ করতে হবে। এছাড়া পুঁজিবাজারকে আয়ের একমাত্র বা মূল উৎস ভেবে সেখানে সব সহায়-সম্পদ বিনিয়োগ করাও সঠিক নয়। বিএসইসিকে অবশ্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ প্রয়াস নিতে হবে। আর কোনো পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারি ঘটুক, তা কোনো পক্ষেরই কাম্য নয়। সেক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাটা প্রাথমিক কাজ। এমন সব করণীয়ই নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০