থাম লুয়াং গুহা থেকে অস্ট্রেলিয়ান স্টার অব কারেজ

গুহায় আটকেপড়া ফুটবল দলের জীবনীশক্তি, ইচ্ছাশক্তি, সাহস,
বীরত্ব প্রভৃতি বিশেষণের আগে যোগ করা যায় অদম্য, অতুলনীয়, অনন্য। তাদের উদ্ধারে সহায় হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অসাধারণ অনেক মানুষ। সংগত কারণে এ বিশ্বের তাবৎ মানুষের আলোচনায় ছিলেন তারাও। তাদের উদ্ধারে মানবতারই জয় হয়েছে।
শুরুতেই বলা যায় অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসক রিচার্ড হ্যারিসের কথা। বাড়ি অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে। হ্যারিস একজন অ্যানাসথেটিস্ট ও আন্ডারওয়াটার কেভ এক্সপ্লোরার। থাইল্যান্ডে ছুটি কাটাচ্ছিলেন তিনি। গুহার ভেতর জীবিত খুঁজে পাওয়া গেছে ফুটবলারদেরÑএ খবর পেয়ে তিনি আর বসে থাকতে পারেননি। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছুটে গেলেন গুহায়। থাম লুয়াং গুহার গহিনে তিনি ঢুকে পড়লেন। কিশোরদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তিনিই সবুজসংকেত দেন। তার বার্তা পেয়েই উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। অভিযানটি ছিল জটিল। এ অভিযানে দরকার ছিল শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিক শক্তি। ওই পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে শান্ত রাখতে ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছিল। পরে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচা বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেছেন, কিশোরদের উদ্বেগনাশক ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা অচেতন হয়নি। উদ্ধার হওয়ার পর ‘শেষ ব্যক্তি’ হিসেবে ডা. হ্যারিস বেরিয়ে আসেন। এর আগে গুহায় ছিলেন তিন দিন।
ওই তিন দিন আটকেপড়াদের স্বাস্থ্যের তত্ত্বাবধান করেছেন। আটকেপড়া কিশোরদের তিনি আশ্বস্ত করেছেন, সাহস জুগিয়েছেন। তারই নির্দেশনা অনুযায়ী সবচেয়ে দুর্বল হয়ে পড়া কিশোরদের আগে বের করা হয়। উদ্ধারকারীদের কোয়ার্টারেন্ট হাসপাতালের ওয়ার্ডে রেখে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তাদের চোখ, পুষ্টির মাত্রা, মানসিক অবস্থা, রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, সবাই ভালো আছে। থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য সচিব জেটাসাদা চোকেদামরংসুক বলেছেন, তারা নিজেরাই সবকিছু করতে পারছে।

পরোপকারী চিকিৎসক
অভিজ্ঞ এই ডুবুরি পানির নিচে ছবি তোলার ব্যাপারেও দক্ষ। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ক্রিসমাস আইল্যান্ড ও চীনের অনেক গুহার ভেতরে বহু অভিযানে অংশ নিয়েছেন তিনি। ডা. হ্যারিস আলোচনায় আসেন ২০১১ সালে। ওই সময় দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট গ্যাম্বিয়ারের ট্যাঙ্ক কেভে ডাইভিংয়ের জন্য গিয়েছিলেন তার বন্ধু অ্যাগনেস মিলকোয়ার। সেখানের পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যাওয়ায় মৃত্যু হয়েছিল অ্যাগনেসের। পরে অ্যাগনেসের মৃতদেহ গুহা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিলেন হ্যারিস।
ডা. হ্যারিসের সঙ্গে ছিলেন ডুবুরি ক্রেইগ চ্যালেন। এই দুই অস্ট্রেলিয়ান নাগরিককে সম্মানিত করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল। তিনি জানিয়েছেন, তাদের বেসামরিক পদক দিয়ে সম্মানিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল এক শুভেচ্ছাবার্তায় জানিয়েছেন, ‘আমরা যে অস্ট্রেলিয়ান মূল্যবোধ ধারণ করি, তারা সেটিই থাম লুয়াং গুহায় প্রমাণ করেছে।’
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর ঘেঁটে জানা যায়, হ্যারি একজন ধীর-স্থির ও হৃদয়বান ব্যক্তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে চলছে বন্দনা। অনেকে তাকে অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ডসে ভূষিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন। আনন্দের বিষয় গত মঙ্গলবার তাদের দুইজনকে অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ খেতাব ‘স্টার অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড’এ ভূষিত করা হয়েছে।

রাহুল সরকার

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০