মুদ্রানীতিতে লক্ষ্য থাকবে বিনিয়োগ বাড়ানোর

সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন কেন্দ্রিক যে নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক ধারণা রয়েছে জনগণের মধ্যে তাতে বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে তা যাতে না ঘটে সে জন্য সরকার সচেষ্ট রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে এ বারের মুদ্রানীতিতে লক্ষ্য থাকবে বিনিয়োগ বাড়ানোর। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ে চিন্তা রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং একইসঙ্গে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আমরা অর্জন করতে চাই সেটির দিকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজর রাখতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়গুলো আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা, সম্পাদনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর মো. জাকির হোসেন এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট সাইফ ইসলাম দিলাল।
মো. জাকির হোসেন বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। সাধারণত অর্থনীতিবিদরা বলেন, নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সতর্ক থাকেন। তারা এ সময়ে নতুন বিনিয়োগে আসতে চান না। নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় তার অপেক্ষা করেন। আগের দুই-তিনটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। দেখা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের অস্থিরতা অনেক ক্ষেত্রে সহিংস ঘটনাও ঘটেছে। কাজেই আমাদের প্রত্যাশা, সামনের নির্বাচনে এমন কিছু না ঘটুক এবং বর্তমান সরকারও তা চায়। কিন্তু নির্বাচন কেন্দ্রিক যে নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক ধারণা রয়েছে জনগণের মধ্যে তাতে বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে তা যাতে না ঘটে, সে জন্য সরকার সচেষ্ট তা সরকারের বিভিন্ন নীতি-নির্ধারকদের আলোচনা থেকে বোঝা যায়। এর প্রেক্ষিতে এবারের মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর একটি লক্ষ্য থাকবে। তবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে চিন্তা রয়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দর বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের দর বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে। আর আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যই আমদানি করে চাহিদা মেটাই। সেদিক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান বিবেচনায় রয়েছে মূল্যস্ফীতি। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং একইসঙ্গে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আমরা অর্জন করতে চাই সেটির দিকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজর রাখতে হবে। তাছাড়া বেশ কয়েক বছর যাবৎ মুদ্রানীতিকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখা গেছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার মতো কিছু নেই মুদ্রানীতিতে।
সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, আমাদের দেশে ঋণের সুদহার অনেক বেশি। আর এত বেশি ঋণের সুদ দিয়ে বিনিয়োগকারীরা ভালো করতে পারে না। ঋণ নিয়ে একটি শিল্প-কারখানা দাঁড় করানো কঠিন হয়ে পড়ে। দেখা যায়, একটি শিল্প-কারখানা শুরু করার আগেই একজন উদ্যোক্তাকে ব্যাংকের ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই তার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। এ বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে উদ্যোক্তরা বলার পর এবার সুদ কমানো হলো। আর এটি যদি কার্যকর করা যায় মানে আমানতের সুদের হার ছয় শতাংশ এবং ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ করা গেলে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বা বিনিয়োগ অনেক বেড়ে যাবে। পাশাপাশি এর ইতিবাচক প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারেও পড়বে। কারণ বৃহৎ আমানতকারীরা যখন ব্যাংকের সুদের হার কম পাবে তখন বেশি মুনাফার আশায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে। তাছাড়া পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ারের অভাব রয়েছে। বড় বড় কোম্পানিগুলো বাজারে আসছে না। অনেক দিন ধরেই রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে ছাড়ার কথা থাকলেও সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না। রাষ্ট্রায়ত্ত বা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে যদি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যায় তাহলে বাজারের গভীরতা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বেড়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০