মুদ্রানীতির একটি প্রভাব গত কয়েকদিন ধরেই পুঁজিবাজারের ওপর ছিল। যে কারণে গত কয়েকদিন ধরে বাজার একই জায়গায় আবর্তিত হচ্ছিল। পুঁজিবাজারে মুদ্রানীতির সরাসরি প্রভাব না থাকলেও পরোক্ষভাবে আছে। মুদ্রানীতির কাজ মূল্যস্ফীতি ঠিক রাখা, অর্থনীতিতে উৎপাদন প্রকৃতপক্ষে কতটুকু তা নির্ধারণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। আর এ তিনটি মৌলিক বিষয়কে লক্ষ্য নির্ধারণ করে পৃথিবীর সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকই কাজ করে থাকে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মোশতাক সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মোহাম্মদ ফোরকান। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
মোহাম্মদ ফোরকান বলেন, গতকাল মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলো। আর মুদ্রানীতির একটি প্রভাব প্রকৃতপক্ষেই পুঁজিবাজারের ওপর ছিল। যে কারণে গত কয়েকদিন ধরে বাজার একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। পুঁজিবাজারে মুদ্রানীতির সরাসরি প্রভাব না থাকলেও পরোক্ষভাবে আছে। মুদ্রানীতির কাজ মূল্যস্ফীতি ঠিক রাখা, অর্থনীতিতে উৎপাদন প্রকৃতপক্ষে কতটুকু তা ঠিক করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। আর এ তিনটি মৌলিক বিষয়কে লক্ষ্য নির্ধারণ করে পৃথিবীর সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকই কাজ করে তাকে। আর এ তিনটি লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে আরও তিনটি কাজ করতে হয়। তা হচ্ছেÑরেপো রেট ও রিজার্ভ রেশিও এবং বাজারে টাকার সরবরাহ ঠিক করতে হয়। এখানে রেপো রেট ছাড়া অন্য কোনো রেটকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করছে না। কারণ তারা তা বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন এসে নতুন করে নিয়ন্ত্রণ করছে। তাহলে রেপো রেট কেন তারা নিয়ন্ত্রণ করছে? কারণ অর্থনীতিতে যখন অর্থের প্রবাহ কম থাকে বা সীমিত থাকে এবং ব্যাংগুলোর কাছে যখন টাকার পরিমাণ কমে যায় তখনই তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে গিয়ে টাকার জন্য ধরনা দিচ্ছে। এটাই রেপো। আর তখনই সরকার ওখানে একটি রেপো রেট ঠিক করে দেয়। আর রেপো রেট, বাজারে টাকার সরবরাহ এবং রিজার্ভ রেশিও এ জায়গাগুলোতে অর্থের প্রবাহ ঠিক করা মানে বাজারে কি পরিমাণ অর্থ সরবরাহ করবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কি হবে তার জন্য এ তিনটি বিষয় মাথায় রাখা হচ্ছে। আর এ তিনটি কাজ তারল্য প্রবাহ, অর্থনীতি ঠিক করা এবং ভেলুয়েশনের মাধ্যমে তারা করছে। তাছাড়া মুদ্রানীতির প্রভাব সরাসরি তারল্য, অর্থনীতি এবং কোম্পানিগুলো মূল্যায়নের ওপর পড়ছে। মুদ্রানীতির আর একটি বড় বিষয় হচ্ছে, ঋণ গ্রহণের বাজার যেমন স্টক, বন্ড, মর্গেজ মার্কেটসহ এ রকম সব মার্কেটেই মুদ্রানীতির প্রভাব আছে। এখানে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (এফআইআই) কেন আসে? কারণ পৃথিবীর ধনী দেশগুলো থেকে সব সময়ই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে টাকা আসে। লক্ষ্য করলে দেখবেন, চীন যখন প্রচুর পরিমাণে উন্নতি করছিল তখন কিন্তু সেখানে বেসরকারি ইকুইটি ব্যবসা সবচেয়ে বেশি রমরমা অবস্থানে ছিল। আর উন্নত দেশগুলোতে কিন্তু বেসরকারি ইকুইটি ব্যবসা রমরমা নয়। কারণ সে হারে সুদ বা লাভ ওখানে নেই। ফলে তারা দেখে যে, সুদহার যখন কমে যায়Ñমানে বাজারে অর্থপ্রবাহ বেড়ে যায় তখন যেসব বিদেশি বিনিয়োগ বাজারে আসে লভ্যাংশের আশায় তখন তারা টাকাগুলোকে তুলে নিয়ে যায়। আমরা লক্ষ্য করলে দেখব যে, পৃথিবীতে যতগুলো উন্নয়নশীল অর্থনীতি রয়েছে তার প্রথম পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি অনেক উচ্চতর ছিল। কারণে সেখানে অর্থের প্রবাহ বেড়ে গিয়েছিল।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম