আগে একাধিক মামলা হলেও উম্মোচন হয়নি রহস্য

রজব আলী, ফুলবাড়ী: দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ইতিপূর্বে কয়েক দফা দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। দুর্নীতি ও চুরির ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও উম্মোচন হয়নি রহস্য, বরাবর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছে মূলহোতারা।
জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে প্রথম চুরির ঘটনা ঘটে ২০১০ সালে। সে সময় দুই কোটি টাকার তামা চুরির ঘটনা ঘটে। এ চুরির ঘটনায় মূলহোতাদের আড়াল করে, গোলাম মোস্তাফা নামে এক (তৃতীয় পক্ষের অধীনে কর্মরত) কর্মচারীর নামে মামলা করে খনি কর্তৃপক্ষ। উচ্চ আদালতে সে মামলা থেকে গোলাম মোস্তফা নির্দোষ হিসেবে ছাড়া পায়। আর তামা চুরির সঙ্গে জড়িতরা থেকে যায় আড়ালে।
একইভাবে গত ২০১৬ সালে ব্যাংক চালান জালিয়াতি করে ৩০০ টন কয়লা পাচার হয়ে যায়। এ ঘটনাটি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পেলে খনির তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) আবদুল মান্নান পাটোয়ারী, উপ-মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) গোপাল চন্দ্র সাহাসহ চার কর্মকর্তাকে সাময়িক ওএসডি করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর রাতারাতি ৩০০ টন কয়লার দাম ব্যাংকে জমা দিয়ে সে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয় ও সাময়িক ওএসডি করা কর্মকর্তাদের স্বপদে বহাল করা হয়। এরপর গত ১৯ জুলাই খনি থেকে এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা উধাও এর ঘটনা প্রকাশ পায়।
কয়লার ডাস্ট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, দীর্ঘ আট বছর ধরে চাকরি করেছেন কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানীয়া। কয়লা সরবরাহ, ব্যবস্থাপনা, চাকরি দেওয়াসহ খনির যাবতীয় কার্যক্রম হতো তার ইশারায়। শুধু আবুল কাশেম প্রধানীয়াই নয়। দীর্ঘদিন এ খনিতে চাকরি করেছেন সদ্যবিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ। এক সময় তিনি এখানকার উপ-ব্যবস্থাপক থেকে মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। তখন থেকেই কয়লা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে তার। পরবর্তীতে তিনি এখানকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান।
কয়লা দুর্নীতির সঙ্গে যাদের নাম সবচেয়ে বেশি রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন খনির ব্যবস্থাপক (জেনারেল সার্ভিসেস) মাসুদুর রহমান হাওলাদার ও মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) গোপাল চন্দ্র সাহার নাম। দুর্নাম থেকে বাদ যাননি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুর-উজ-জামান চৌধুরী, উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) একেএম খালেদুল ইসলাম। শ্রমিকদের আন্দোলন-সংগ্রামে মারধোর করার অভিযোগও রয়েছে মাসুদুর রহমানের নামে। আর গোপাল চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে এর আগেই ২০১৬ সালে ৩০০ টন কয়লা চুরির অভিযোগ ছিল।
তিনি জানান, খনির বিদায়ী কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানীয়া দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করার সুবাধে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে আতাত করে দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছেন। আবুল কাশেম প্রধানীয়ার বাড়ি চাঁদপুর জেলায়। তবে ঢাকার কেরানীগঞ্জে বহুতলা ভবন ও পরীবাগে একটি বাড়ি রয়েছে তার। একটি পেট্রল পাম্পও আছে স্ত্রী ও শাশুড়ির নামে। একইভাবে ক্ষমতাধর হিসেবে পরিচিত মাসুদুর রহমান হাওলাদারের মাদারীপুরে বিলাশবহুল বাড়ি রয়েছে। তিন-চারটি মাইক্রোবাস রয়েছে যার একেকটির মূল্য অর্ধকোটি টাকারও বেশি করে। এসব মাইক্রোবাস তিনি পরিচালনা করেন দীঘিপাড়া কয়লা খনিতে কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য। এ জন্য তিনি মোটা অঙ্কের ভাড়া পান।
বড়পুকুরিয়া গ্রামের পলাশ জানান, দুর্নীতি হয়েছে যা তার বেশিরভাগের জন্যই দায়ী আবুল কাশেম প্রধানীয়া। তার আচরণও ছিল খুবই খারাপ। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আতাত করে তিনি কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন দিনাজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুজ্জামান জানান, কয়লা দুর্নীতির ঘটনায় যেসব কর্মকর্তাদের নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দোষী কোম্পানি সচিব আবুল কাশেম প্রধানীয়া ও সদ্যবিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০