শেয়ার বিজ ডেস্ক: এক মাসের বেশি হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে গত এক মাসে অনেক দেশ পাল্টা শুল্কারোপ করেছে। এর মধ্যে চীন অন্যতম। প্রধান দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে প্রথম বলি হয়েছে চীনের সয়াবিন আমদানিকারক শ্যানডং সানরাইজ গ্রুপ। ইতোমধ্যে আরও বেশ কিছু কোম্পানি এ যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব উপলব্ধি করছে। এর মধ্যে গাড়ি ও মোটরসাইকেল এবং খাদ্য ও পানীয় কোম্পানিগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে কোম্পানিগুলো। খবর বিবিসি।
সম্প্রতি বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীনের কোম্পানিটি দেউলিয়াত্বের আবেদন করেছে। শ্যানডং সানরাইজ গ্রুপ ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে জুঝিয়ানের একটি আদালতে দেউলিয়াত্বের আবেদন করে। নেতিবাচক প্রভাবের কথা জানিয়েছেন প্রধান গাড়ি প্রতিষ্ঠান এবং খাদ্য ও পানীয় কোম্পানিগুলোও।
কয়েক দিন আগেই জোহানবার্গে অনুষ্ঠিত হওয়া ব্রিকস সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়, প্রতিশ্রুতি দেয় মুক্ত বাণিজ্যের। এবার বাণিজ্যযুদ্ধের বিধ্বংসী প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে আসিয়ান সদস্য দেশগুলো। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হওয়া আসিয়ান সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ ব্যক্ত করে। ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) এবং নাফটা চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা, ইউরোপীয় মিত্রদের ওপর শুল্কারোপ, চীনের সঙ্গে হুমকি, পাল্টা হুমকি এবং দফায় দফার প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপের মতো ইস্যুগুলো উঠে আসে এই সম্মেলনের আলোচনায়।
সম্মেলনে কয়েকটি দেশ ১৬ জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ‘রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিপি)’ গড়ার প্রস্তাব দেয়। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো বলেন, ‘সংরক্ষণবাদের উত্থানের এই সময়ে আরসিপি চুক্তি আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লি হেইসেন লুয়াং বলেন, ‘আশা করছি, এই বছরের শেষের দিকেই আরসিইপি চুক্তির কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।’
গত শনিবার সম্মেলনের ফাঁকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধ আসিয়ান দেশগুলোর জন্য সরাসরি হুমকি। এই হুমকি আমাদের সবাইকে উদ্বেগের মুখে ফেলেছে এবং এটি ক্রমেই জটিল হচ্ছে।’ দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেয়াং কুয়াং ওয়া বলেন, ‘ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া বৈশ্বায়নবিরোধী মনোভাব এবং বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদিতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হুমকি।’
এর আগে, ৩০ জুলাই ব্রিকস সম্মেলনের শেষ দিনে সদস্য দেশগুলো শিল্পায়ন, বহুপক্ষীয় ব্যবস্থাপনা জোরদার এবং সংরক্ষণবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে এক হওয়ার বিষয়ে জোর দেয়।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অনুতাপ নেই। তারা চীনের সঙ্গে খেলায় মেতেছে। এতে কী প্রভাব পড়বে, সে চিন্তা তাদের নেই। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াশিংটনের এ শুল্কযুদ্ধকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ আখ্যা দিয়ে প্রতিশোধপরায়ণ এ পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে আহ্বান জানান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ২০০ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে। এর আগে এ পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের পরিকল্পনা ছিল। বিষয়টির সম্পর্কে জানে, এমন একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা আবার বাড়ালে তারাও পাল্টা জবাব দেবে। গত জুলাইয়ে তিন হাজার ৪০০ কোটি ডলারের চীনা পণ্যে শুল্কারোপ কার্যকর করে যুক্তরাষ্ট্র। চীনও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে সমমূল্যের মার্কিন পণ্যে শুল্ক ধার্য করে। ওই সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, আরও কয়েক হাজার চীনা পণ্যে ১০ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করার প্রক্রিয়া চলছে।