নিজস্ব প্রতিবেদক: নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় অবসান ঘটেনি যাত্রীদুর্ভোগের। চরম ভোগান্তির পাশাপাশি বাড়তি ভাড়ায় নাকাল রাজধানীবাসী। সেইসঙ্গে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ থাকায় কার্যত রাজধানীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন সারা দেশের মানুষ। জরুরি প্রয়োজনেও তারা আসতে পারছেন না রাজধানীতে। এদিকে সড়ক-মহাসড়ক দখলে নিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সরকার-সমর্থিতরা।
শুক্রবার রাতে আন্তঃজেলা বাস চলাচল করলেও গত শনিবার সকাল থেকে তা বন্ধ রয়েছে। শনিবার রাতেও দেশের কোনো স্থানে রাজধানী থেকে বাস ছেড়ে যায়নি। এতে যারা সারা দিন অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের পড়তে হয় চরম বিপাকে। গত শনিবার সকাল থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন মোমেনা বেগম। মিরপুরে ছেলের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন শনিবার রাতে যেতে পারবেন, কিন্তু বাস না ছাড়ায় চরম দুর্ভোগে আছেন তিনি। একদিকে ঢাকায় পরিবহন না থাকায় ছেলের বাসায়ও ফিরতে পারছেন না তিনি। তাই অপেক্ষাÑযদি রোববার রাতেও বাস ছাড়ে, তবে বাড়ি ফিরবেন। মোমেনা বেগমের মতো আরও অনেককেই এই টার্মিনালে দেখা গেছে, যারা আশায় ছিলেন রোববার রাতে বাস ছাড়বে। এদিকে বাস মালিক সমিতি বারবার বলছে, তাদের কাছে যখন মনে হবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক, তখনই তারা বাস ছাড়বেন।
একই অবস্থা ঢাকার গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালেও। গতকাল সকালে এসব টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত বাস লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে, আর শ্রমিকরা বেকার সময় পার করছেন। অনেকেই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে মহড়া দিচ্ছেন। এসব শ্রমিক অন্যান্য যানবাহনকেও বাধা প্রদান করছেন চলাচল না করতে। মহাখালী বাস টার্মিনালে আমুদ্দিন নামে এক শ্রমিক বলেন, রাস্তায় ঝামেলা চলছে, ছাত্ররা গাড়ি ভাঙছে। তাই মালিকরা আমাদের বাস বন্ধ রাখতে বলছেন।
এদিকে রাজধানীতে চলাচলকারীরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। গণপরিবহন না থাকায় ফাঁকা রাস্তায়ও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাদের। মোবাইল ইন্টারনেটের সমস্যা থাকায় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বন্ধ বলে বাইকের ড্রাইভারদের কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় যাত্রীদের নিতে দেখা গেছে। গুলশান-১ নম্বর থেকে মহাখালী পর্যন্ত বাইকে ভাড়া রাখা হচ্ছে ৫০ টাকা, যেখানে বাসভাড়া পাঁচ টাকা আর রিকশাভাড়া ২৫ টাকা। মহাখালী থেকে ফার্মগেট ভাড়া রাখা হচ্ছে ১০০ টাকা করে, শাহবাগ গেলে ১৫০ আর গুলিস্তান ২০০ টাকা।
এছাড়া রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ও ভ্যানে কয়েক গুণ ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন নগরবাসী। আর টানা ভোগান্তিতে বিরক্ত নগরবাসী। তারা এই অবস্থার পরিবর্তন চান। যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, এই অবস্থায় তো চলা যায় না। শিগগিরই এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। প্রতিদিন কয়েক গুণ ভাড়া দিয়ে অফিসে গেলে তো মাস শেষে আমরা সংকটে পড়ে যাব। কারওয়ানবাজার এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা শামসুল হায়দার বলেন, এই পরিবহন ধর্মঘটের কারণে একদিকে রাস্তায় বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে বাজারে জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। কেউই তো জনগণের কথা চিন্তা করছে না। এই অবস্থার নিরসন করে আমাদের স্বাভাবিকভাবে যাতায়াতের সুযোগ করে দেওয়া হোক। সরকারি পরিবহন বিআরটিসির কয়েকটি বাস ছাড়া রাস্তায় অন্য কোনো গণপরিবহন দেখা যায়নি।
পরিবহন শ্রমিকরা সড়কে বাস বন্ধ, যাত্রীদুর্ভোগ চলছেই
