পলাশ শরিফ: আইন ভেঙে নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৩৩৩ শতাংশেরও বেশি ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে বেসরকারি জীবন বিমা কোম্পানি পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। বাড়তি ব্যয়ের কারণে কোম্পানিটির জীবন বিমা তহবিল কমছে। সেই সঙ্গে নতুন ব্যবসাও বাড়ছে। এসব কারণে ব্যাংকঋণ ও স্থায়ী আমানতের ভেঙে দায় মেটাচ্ছে পিছিয়ে পড়া কোম্পানিটি। অনিয়ম-আস্থাহীনতার তথ্য গোপন করতে আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাই পদ্মা ইসলামী লাইফকে নিয়ে অন্ধকারে বিনিয়োগকারী ও বিমা গ্রাহকরা।
তথ্যানুসন্ধানে মিলেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রথম বর্ষ ও নবায়ন বিমা প্রিমিয়াম আয় কমেছে। যে কারণে ব্যবস্থাপনা ব্যয় আইনি সীমায় রাখতে পারেনি কোম্পানিটি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) হিসাবে, পদ্মা ইসলামী লাইফ প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের ৯০ শতাংশ ও নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করতে পারে। এর বিপরীতে এ সময়ে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের তুলনায় ৪৩৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি ব্যবস্থাপনা পেছনে ব্যয় করেছে। অর্থাৎ ১০০ টাকা প্রিমিয়াম সংগ্রহের জন্য কোম্পানিটি প্রায় ৪৩৬ টাকা ব্যয় করেছে, যা নির্ধারিত ব্যয়সীমার চেয়েও প্রায় ৩৩৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। তবে নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহে নির্ধারিত সীমার তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ কম ব্যয় দেখিয়েছে কোম্পানিটি।
এদিকে প্রিমিয়াম সংগ্রহে বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের কারণে পদ্মা ইসলামী লাইফের জীবন বিমা তহবিলের ওপর চাপ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই কোম্পানিটির ওই তহবিল প্রায় ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ কমেছে। এ পরিস্থিতিতে বিমা দাবি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিটি। এতে এফডিআরের (স্থায়ী আমানত) ওপর চাপ বাড়ছে। দাবি পরিশোধের জন্য ২০১৬ সালে সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে বেসরকারি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ছয় কোটি ৬১ লাখ টাকা ঋণও নিয়েছিল পদ্মা ইসলামী লাইফ।
বিমা দাবি পরিশোধে কালক্ষেপণ-মামলা, গ্রাহকের আস্থাহীনতা, বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা লঙ্ঘন ও ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে পড়ার কারণে সংকটে পড়েছে পদ্মা ইসলামী লাইফ। এ কারণেই নতুন বিমা ব্যবসা কমছে। ‘জীবন বিমা’ কোম্পানিটি বিমার বদলে এখন ডিপিএসের ওপর নির্ভরশীল। যদিও বর্তমান সংকটের জন্য নতুন বিমা ব্যবসা কমে যাওয়া ও বিমা দাবি পরিশোধের চাপকেই দায়ী করা হচ্ছে।
পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি সচিব আবু সাঈদ সরকার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় দাবি পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এ কারণে জীবন বিমা তহবিল কমেছে। আর প্রতিকূল ব্যবসায়িক পরিবেশের কারণে নতুন পলিসি বিক্রি কমছে। প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় কমায় ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্ধারিত সীমায় রাখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আইডিআরএর কাছ থেকে কোনো চিঠি পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, পদ্মা ইসলামী লাইফে বিমা দাবি পরিশোধের চাপ বাড়ছে। ২০১৬ সালে প্রায় এক হাজার ১৪৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা দাবি পরিশোধ করেছে কোম্পানিটি; যা ২০১৫ সালের চেয়ে প্রায় ২৭২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বেশি। আর গত পাঁচ বছরে পদ্মা লাইফে বিমা দাবি ২১৭ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। তাই বিমা দাবি পরিশোধের জন্য এফডিআর (স্থায়ী আমানত) ভাঙছে পদ্মা ইসলামী লাইফ। গত পাঁচ বছরে কোম্পানিটির স্থায়ী আমানত প্রায় ১০০ কোটি টাকা কমেছে।
উল্লেখ্য, শরিয়াহ্ভিত্তিক জীবন বিমা কোম্পানি পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় রয়েছে। বাড়তি কমিশন-ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় মাঝপথে এসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিমা ঝরে যাচ্ছে। অন্যদিকে নতুন করে কেউ ওই কোম্পানিতে বিমা করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাই ২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি এখন খারাপ সময় পার করছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পদ্মা ইসলামী লাইফের প্রতিটি শেয়ার গতকাল সর্বশেষ ৩২ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। আর তারল্য সংকটের কারণে ২০১৬ সালে ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি।