নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আনতে সমঝোতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে নেপালের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ; যার মধ্য দিয়ে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া গতি পাবে বলে আশা করছে সরকার। এ সমঝোতার আওতায় নেপাল থেকে ভারত হয়ে জলবিদ্যুৎ আমদানি ছাড়াও নেপালের বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানির বিনিয়োগের বিষয়গুলো রয়েছে। গতকাল কাঠমান্ডুতে নেপালের জ্বালানি, পানি ও সেচ মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে ওই সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী বর্ষা মান পুন অনন্ত।
চুক্তির জন্য নেপাল সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, অনেক অপেক্ষার পর এ চুক্তি হলো। বাংলাদেশ ও নেপালের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দু’দেশেরই উন্নয়নে সহযোগিতা আরও বাড়ানো দরকার। বিদ্যুৎ, যোগাযোগসহ সব ক্ষেত্রেই এ সহযোগিতার প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের মাস্টারপ্ল্যানে ২০৩০ সালের মধ্যে দৈনিক ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তার একটি অংশ আসবে আমদানি করা বিদ্যুৎ থেকে।
নসরুল হামিদ বলেন, নেপালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে বাংলাদেশের সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করে সে বিদ্যুৎ দেশে নিতে পারবে। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অল্প পয়সায় বিদ্যুৎ পাব। আগামী ১০ বছরের মধ্যে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী বলেন, নেপাল এখন ভারত থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করলেও আগামী ১০ বছরে ১৫ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; যার বাস্তবায়নও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। নেপালে বিনিয়োগ ও বিদ্যুৎ বাণিজ্যের সম্ভাবনার বিষয় নিয়েও কথা বলেন বর্ষা মান পুন অনন্ত। বৃহস্পতিবার নেপালে পৌঁছানোর পর গতকাল সকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন নসরুল হামিদ। এরপর জ্বালানিমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
বিদ্যুৎ খাতে দু’দেশের সহযোগিতা বাড়াতে এ সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং একটি স্টিয়ারিং কমিটি কাজ করবে। জলবিদ্যুৎ তুলনামূলকভাবে সস্তা ও পরিবেশবান্ধব হলেও বাংলাদেশে এর উৎপাদন সম্ভব না হওয়ায় নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে এ বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে কাজ চালিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে গত বছর ভারতের একটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতাও হয়েছে।
ভারতের জিএমআর এনার্জি নেপালে আপার কারনালি প্রকল্পের আওতায় ৯০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য গত বছর জিএমআরইয়ের সঙ্গে ওই সমঝোতা স্মারকে সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। ভারত হয়ে আন্তঃদেশীয় গ্রিড লাইনের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভারত থেকে বহরমপুর হয়ে ৫০০ মেগাওয়াট এবং ত্রিপুরা থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। ভবিষ্যতে ভারত থেকে আরও বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ দু’দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে নেপালের কাঠমান্ডুতে প্রধানমন্ত্রী খাদগা প্রসাদ অলির সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশ-নেপাল সমঝোতা স্মারক চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, জি-টু-জি বা যৌথ বিনিয়োগ বা বেসরকারি খাত এ চুক্তির হাত ধরে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ-নেপাল সহযোগিতার সম্পর্ক দৃঢ় করবে। তিনি পানি ব্যবস্থাপনা, বাঁধ নির্মাণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি নিয়ে তার সরকারের পরিকল্পনা আলোচনা করেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কার্যকর করতে উচ্চপর্যায়ের মতবিনিময়, উন্নয়ন কাজের শেয়ারিং, বিদ্যুৎ বাণিজ্যের জন্য ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল ত্রিপক্ষীয় চুক্তি প্রয়োজন। পরিশেষে তিনি দারিদ্র্য বিমোচনে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার গৃহীত কার্যক্রম নেপালের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা গেলে এ অঞ্চলের উন্নয়ন দ্রুত হবে। নেপালের জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যেতে পারে আবার শীতকালে বাংলাদেশও নেপালকে বিদ্যুৎ দিতে পারে। সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। যৌথ বিনিয়োগে বেশকিছু মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এসব অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বাংলাদেশ-নেপাল উভয়েই উপকৃত হতে পারে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পরবর্তীতে ত্রিপক্ষীয় করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। এ সময় অন্যান্যের মাঝে নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস, বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব ফায়েজুল আমীন উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০