সুখের জন্যই এই জীবন। সুখ পেতে মানুষ কী না করে? এই সুখ প্রত্যাশার আড়ালে লুকিয়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা। দুশ্চিন্তার মাত্রা অতিরিক্ত হলে আক্রান্ত হয় প্যানিক অ্যাটাকে।
প্যানিক অ্যাটাক হলো এক ধরনের রোগ। এ রোগের কারণে ব্যক্তির ভেতর তীব্র উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। স্বাভাবিকভাবে হৃৎস্পন্দনের পরিমাণ বেড়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়লে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এটি অনেক সময় মারাত্মক রূপ ধারণ করে। অনেক সময় এর কারণ আমরা জানি না। আবার অনেক সময় হয়তো কারণ থাকে কিংবা হঠাৎ করে এটা হতে পারে।
লক্ষণ
এটা বিভিন্ন কারণে হয়। বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুক ব্যথা করা, মুখ লাল হয়ে আসা, শরীর ঘামতে থাকা, অসুস্থ অনুভব করা, কাঁপুনি দেওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখ শুকিয়ে আসা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, অস্থিরতা বোধ করা, মুখ দিয়ে কথা বেরুতে অসুবিধা হওয়া, বমি ভাব আসাÑএ ধরনের লক্ষণ খুব গভীর হতে পারে। একজন আতঙ্কিত ব্যক্তি মনে করে তার বুঝি হার্ট অ্যাটাক হতে যাচ্ছে। তখন আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। এটাকে বলে ডিপারসোনালাইজেশন।
বিশেষ করে দুটো বিষয়ে এর পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় যখন বুক ধড়ফড় করে। তখন একে অনেকে হার্টের রোগ মনে করেন। আমার হয়তো হার্টের সমস্যা হয়েছে। আমি বোধ হয় অজ্ঞান হয়ে যাব, বা স্ট্রোক করব। আরেকটি হলো আমি হয়তো উচ্চ রক্তচাপের রোগী হয়ে গেলাম। এই দুটো বিষয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজ করে।
হ্যাঁ, যখন প্যানিক অ্যাটাক হয়, তখন উচ্চ রক্তচাপ অনেক বেশি থাকে। এটা ভয়ের কিছু নয়। আমরা যখন দৌড়াই বা কোনো ভয়ের কথা শুনি, তখন আমাদেরও রক্তচাপ মাপলে অনেক বেশি পাওয়া যাবে। তার মানে সেটি রোগ নয়। তখন এটিকে উচ্চ রক্তচাপের রোগ বলা যাবে না। উচ্চ রক্তচাপের জন্য আলাদা কিছু বিষয় রয়েছে।
পরামর্শ
যখন প্যানিক অ্যাটক হয় তখন কোনো না কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। বারবার প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তি উপযুক্ত চিকিৎসা না নিলে মানসিক রোগ ও অ্যাগোরাফোবিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। প্যানিক অ্যাটাক থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসকরা মূলত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস বা বেনজোডিজেপাইনস-জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে শুধু ওষুধের মাধ্যমে সম্পূর্ণ প্রতিকার পাওয়া সম্ভব নয়। যেহেতু এটি মানসিক সমস্যা, তাই প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন মানসিক দৃঢ়তা। এছাড়া যারা এ ধরনের রোগে ভুগছেন তাদের ধূমপান বা ক্যাফেইনজাতীয় পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে, সঠিকভাবে শ্বাস নেওয়ার অনুশীলন করতে হবে এবং সব ধরনের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে।
শিপন আহমেদ