সিদ্ধান্ত গ্রহণে শ্লথগতি বিএসইসির

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির পাওয়া কোম্পানির লাগাম টেনে ধরার জন্য অবশেষে তিন কোম্পানির লেনদেন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটি তিনটি হচ্ছে মুন্নু জুট স্টাফলার্স, বিডি অটোকারস এবং লিগ্যাসি ফুটওয়্যর। গত বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত আরও অনেক আগে আসা উচিত ছিল বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজারসংশ্লিষ্টরা।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব কোম্পানির লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে এসব কোম্পানির শেয়ার অনেক আগেই অতিমূল্যায়িত হয়ে গেছে। যারা ইতোমধ্যে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ফেলেছেন তারা রয়েছে চরম ক্ষতির মুখে। বিএসইসি যদি আরও আগে এই সিদ্ধান্ত নিত তাহলে বিনিয়োগকারীরা এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতেন।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সিকিউরিটিজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিএসইসির উচিত ছিল আরও অনেক আগে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কারণ এই শেয়ারগুলো আগেই অতিমূল্যায়িত হয়ে গেছে। তখন এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অনেক বিনিয়োগকারী বিপদ থেকে রক্ষা পেতেন। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীর পুঁজির নিরাপত্তা সুরক্ষা হতো।
কোম্পানিগুলোর লেনদেন চিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারদর বৃদ্ধি শুরু হয় চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি থেকে। এ সময় কোম্পানির শেয়ারটির দর ছিল ৬৬৯ টাকা ৮০ পয়সায়। তবে অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির ধারা শুরু হয় গত মার্চের শেষে। ওই সময় শেয়ারটি ৭৫০ টাকার নিচে কেনাবেচা হয়। সর্বশেষ শেয়ারটি চার হাজার ৬৩৯ টাকা ৪০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। অর্থাৎ গত সাত মাসে দর বেড়ে হয়েছে প্রায় সাত গুণ।
যদিও কোম্পানির রিজার্ভ রয়েছে এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা। শেয়ারসংখ্যা মাত্র চার লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে রয়েছে ৫৫ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ার।
এদিকে তালিকাভুক্ত বিডি অটোকারসের শেয়ারও অল্পদিনের ব্যবধানে বড় ধরনের দর বৃদ্ধি পায়। গত মে মাসের শেষ দিকে এ শেয়ারদর ছিল ১০৯ টাকা ৩০ পয়সা। এরপর শুরু হয় অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি। সর্বশেষ শেয়ারটি লেনদেন হয় ৪৩৬ টাকায়।
কোম্পানির রিজার্ভ লোকসান রয়েছে দুই কোটি ৭৯ লাখ টাকা। শেয়ারসংখ্যা ৩৮ লাখ ৬২ হাজার ৫১২টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে রয়েছে ৩৮ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার।
অন্যদিকে লিগ্যাসি ফুটওয়ারের শেয়ারদর মে মাসে ছিল ৫৫ টাকা ৬০ পয়সা। এরপর বাড়তে থাকে শেয়ারদর কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়া। জুনের পর শুরু হয় অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি। গত সাড়ে তিন মাসে সাড়ে পাঁচগুণ হয়েছে শেয়ারটির দর। সম্প্রতি শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর ওঠে ২৮০ টাকা। যদিও সর্বশেষ শেয়ারটি লেনদেন হয় ২৬৩ টাকায়।
কোম্পানির রিজার্ভ রয়েছে সাত কোটি ৭৭ লাখ টাকা। শেয়ার সংখ্যা এক কোটি ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮৯৬টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকের কাছে রয়েছে ৩০ শতাংশ শেয়ার।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বিনিয়োগকারীরা বলেন, বিএসইসির এই সিদ্ধান্ত আমাদের যতটা না উপকার করেছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। কারণ লেনদেন চালু থাকলে আমরা শেয়ার বিক্রি করে বের হতে পারতাম। স্থগিত থাকার ফলে এই শেয়ার নিয়ে এক ধরনের ভীতি তৈরি হবে। পরবর্তী সময়ে আমরা কাক্সিক্ষত দরে শেয়ার বিক্রি করতে পারব না। এ প্রসঙ্গে শহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, এসব শেয়ারদর যখন দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ বেড়েছিল তখনই এর লেনদেন স্থগিত করা উচিত ছিল।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০